বহু প্রতিকূলতার মধ্যে তিল তিল করে নিঃস্ব, শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে গড়ে তুলেছিলেন কমিউনিস্ট পার্টি। তাঁর জীবন থেকে এই শিক্ষা নিতে হবে।
বৃহস্পতিবার কলকাতায় প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে কমরেড ভিএস অচ্যুতানন্দনের স্মরণ সভায় একথা বলেছেন প্রবীণ সিপিআই(এম) নেতা বিমান বসু। তিনিই স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করছেন।
বসু বলেছেন, কেরালার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর নেতৃত্বে জনকল্যাণমূলক প্রকল্প নিয়েছিল বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সরকার। উদারনীতির বিপ্রতীপে কর্মসূচি সাফল্য পেয়েছিল।
বসু বলেন, জীবন জুড়ে কমরেড ভিএস ছিলেন শ্রমজীবীর সঙ্গে। মতাদর্শে ছিলেন দৃঢ়। ছিলেন জনপ্রিয়। সহজ কথায় বলতে পারতেন কথা।
শেষকৃত্যে যোগ দিতে গিয়েছিলাম কেরালায়। মানুষের মধ্যে নাড়া দিয়েছে তাঁর প্রয়াণ গভীরভাবে। হাসপাতাল থেকে দেহ যখন রাজ্য দপ্তরে আনা হয়। তাঁর গ্রামে শেষকৃত্য হয়েছে। কমরেডদের থেকে শুনেছি গাড়ি এগতে পারছিল না। অসংখ্য মানুষ। পার্টি দপ্তরে নিয়ে আসা হবে দেহ। ভিড়ে দপ্তরে ঢোকা যাচ্ছে না। বেবি না থাকলে দাঁড়ানো মুশকিল। বোঝা যায় তাঁর জনপ্রিয়তা।
বসু বলেন, জন্মের চার বছরের মধ্যে মা, এগারো বছরের মধ্যে বাবা মারা যান। দাদার টেলারিং সেন্টার ছিল। সেখানেই কাজ করে স্কুলে পড়তে যেতেন। বাল্যকাল থেকে কঠিন জীবনের মধ্যে থাকতে হয়েছে। তার মধ্যেই নারকেল ছোবড়া থেকে পণ্য তৈরির সংস্থায় কাজে যুক্ত হন। সেখানেই তিনি শ্রমিকদের সংগঠিত করেন। ১৯৪০ সালে পার্টিতে অন্তর্ভূক্ত হন। স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। ত্রিবাঙ্কুর কোচিতে রাজশাসিত প্রদেশে যুক্ত হন। পাঁচ বছর জেল জীবন। চার বছর আত্মগোপনে থেকেছেন। পুলিশের অত্যাচারে একবার অজ্ঞান হয়ে যান। জ্ঞান ফিরছিল না। চিকিৎসা হয়নি। শেষকৃত্যে নিয়ে গেছে পুলিশ। কিন্তু শেষকৃত্য যিনি করবেন তিনি বললেন তিনি জীবিত। হৈ চৈ শুরু হলো। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। ধীরে ধীরে সুস্থ হন। পুন্নাপ্রা ভায়লারের কৃষক আন্দোলনে যুক্ত হন।
বসু বলেন, তিনি কাজ করেছেন নিঃস্ব, শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থে। কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে উঠেছে এই অংশের হয়ে তিলে তিলে কাজ করার মধ্যে দিয়ে।
সম্ভবত তিনিই সবচেয়ে বেশি সময় বিরোধী দলনেতা ছিলেন কেরালা বিধানসভায়। মার্কসবাদ লেনিনবাদের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা দৃঢ়তা, যাঁরা আজ কমিউনিস্ট পার্টি করছেন, তাঁদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। মতাদর্শগত প্রশ্নে আপস করেননি।
বসু বলেন, ১৯৬২ চীন-ভারত সংঘর্ষে পার্টিতে বিতর্ক হয়। পরবর্তী কেন্দ্রীয় পরিষদের অধিবেশনে বিতর্ক প্রকাশ পায়। ৩২ জন বেরিয়ে আসেন। তার মধ্যে ভিএস-ও ছিলেন।
বসু বলেন, তাঁরা পার্টি গড়ে তুলেছেন, শ্রমিক সংগঠন, কৃষক সংগঠন গড়েছেন। উত্তানাদে এখন কৃষি শ্রমিকদের মজুরি সবচেয়ে বেশি। এমনি এমনি হয়নি। শস্য উৎপাদন অভূতপূর্ব। সেখানে তাঁকে লড়াই করতে পাঠানো হয়েছিল। ছিলেন কমরেড একে গোপালন। তিল তিল করে পার্টিকে গড়ে তোলার এই প্রয়াস থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
এদিন শোক প্রস্তাব পেশ করে স্মৃতির প্রতি উঠে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। ভিএস’র প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম, শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, রামচন্দ্র ডোম। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, শমীক লাহিড়ী, আভাস রায়চৌধুরী, দেবব্রত ঘোষ। রাজ্য কমিটির সদস্য অনাদী সাহু, কনীনিকা ঘোষ প্রমুখ।
Comments :0