KMC

কলকাতা কর্পোরেশনে স্থায়ী পদই ১৪ হাজারেরও কম, শূন্য ৮,৪৬৮!

কলকাতা

অরিজিৎ মন্ডল 


কলকাতা কর্পোরেশনের মাসিক অধিবেশনে ফের একবার উঠে এলো কর্মী সংখ্যার অপ্রতুলতা কথা। বুধবার কলকাতা কর্পোরেশনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মাসিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সেই অধিবেশনে ১২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রূপক গাঙ্গুলি প্রস্তাব উত্থাপন করেন যে যেসব স্থায়ী কর্মী অবসর গ্রহণ করছেন অবিলম্বে তাঁদের জায়গায় নতুন করে স্থায়ী কর্মী নিয়োগ করা হোক। উল্লেখ্য, কলকাতা কর্পোরেশন সহ রাজ্যের বিভিন্ন পৌরসভায় শূন্যপদে স্থায়ী নিয়োগের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে সিপিআই(এম) সহ বামপন্থী দলগুলি। 
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অংশের দাবি, কলকাতা কর্পোরেশনের শূন্যপদ এখন প্রায় চল্লিশ হাজার। ২০১০ সালে কলকাতা পৌরসভার বোর্ড তৃণমূল কংগ্রেস গঠনের পর থেকে স্থায়ী নিয়োগ হয়নি বললেই চলে। সে সময়ে যে স্থায়ী কর্মীরা ছিলেন তাঁদের অনেকেই বয়সের কারণে অবসর নিয়েছেন। ফলে তৈরি হয় শূন্যপদ। সেই শূন্য পদে স্থায়ী নিয়োগের জায়গায় নেওয়া হচ্ছে ঠিকা কর্মী। সেই ঠিকা কর্মীর সংখ্যাও অনেক কম। ১০০ দিনের কর্মীদের দিয়ে বেশিরভাগ অংশের কাজটাই করানো হচ্ছে। কাউন্সিলর রূপক গাঙ্গুলি তাঁর প্রস্তাবে বলেন, ১০০ দিনের যে সমস্ত কর্মী অসুস্থ তাঁদের পরিবর্তে নতুন কর্মী নিয়োগ করা দরকার। ওয়ার্ডের পৌর পরিষেবার কথা মাথায় রেখে ১০০ দিনের কাজের কর্মী আরও বেশি নিয়োগ করা প্রয়োজন। অবসরের কারণে ফাঁকা পদে দ্রুত স্থায়ী নিয়োগের দাবিও তুলেছেন তিনি। 


এই প্রস্তাবের উত্তর দিতে গিয়ে মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার বলেন, "কলকাতা কর্পোরেশনে বর্তমানে স্থায়ী অনুমোদিত পদে কর্মী রয়েছেন ১৩ হাজার ৮৪০ জন। কলকাতা পৌরসভা অনুমোদিত স্থায়ী শূন্য পদ রয়েছে ৮ হাজার ৪৬৮। তার মধ্যে ৭ হাজার ৪৩৭ জন ঠিকা কর্মী নিয়োগ হয়েছে। তাই খুব কমই স্থায়ী পদ শূন্য রয়েছে।" তাঁর দাবি, "বাকি যে শূন্য পদ রয়েছে তার মধ্যে কিছু জনকে নিয়োগ করা হয়েছে এবং বাকি শূন্য পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি ও প্রকাশ করা হয়েছে।" 
কর্মীর প্রয়োজন কমেছে বোঝাতে দেবব্রত মজুমদারের বক্তব্য, আগে কলকাতায় সাফাই কর্মীরা ওপেন ড্রেন পরিষ্কার করত। বর্তমানে তা হয় না। তিনি বলেছেন যে আগে দু’চাকার গাড়িতে জঞ্জাল তুলে নিয়ে আসা হতো। বর্তমানে সব ওয়ার্ডে ১০টি করে ব্যাটারি চালিত গাড়ি দেওয়া হয়েছে। যাতে আগের তুলনায় অন্তত তিন গুণ বেশি জঞ্জাল বহন করা যায়। কলকাতা কর্পোরেশন বর্তমানে যন্ত্র চালিত পরিষেবার ক্ষেত্রে বেশি নজর দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, লেদার কমপ্লেক্সের সামনে কিছুদিন আগেই ম্যানহোলে নেমে নিকাশির কাজ করতে গিয়ে মৃত্যু হয় কলকাতা কর্পোরেশেনের কর্মীদের। এমন একাধিক ঘটনা দেখা গিয়েছে গত কয়েক বছরে। জঞ্জাল পড়ে থাকার ঘটনা দেখা যাচ্ছে শহরের বিভিন্ন এলাকায়। 
আরও প্রশ্ন উঠছে যে যন্ত্র চালাতে যে কর্মী দরকার তা-ও কেন নিয়োগ করছে না কলকাতা কর্পোরেশেন। বামফ্রন্ট পরিচালিত বোর্ডের সময়ে প্রতিদিন দু’চাকার গাড়িতে জঞ্জাল নিতে আসার লোক থাকলেও এখন সেই পরিষেবায় খামতির অভিযোগও উঠছে। তা’ছাড়া যন্ত্রের কারণে কর্মীর প্রয়োজন কমে গেলে একশো দিনের কাজের মতো অস্থায়ী নিয়োগের বদলে স্থায়ী নিয়োগ বাড়ছে না কেন, উঠছে সে প্রশ্নও।
কলকাতা কর্পোরেশনের বাম পরিষদীয় দলনেতা মধুছন্দা দেব বলেন, "যন্ত্রচালিত বিভিন্ন গাড়ি বা মেশিন চালানোর জন্য দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন। কলকাতা কর্পোরেশন কি তাদের কর্মীদের ট্রেনিং এর কোনও ব্যবস্থা করছেন বা দক্ষ কর্মী নিয়োগের কি কোনও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে?"
তিনি আরও বলেন, "কর্মীর সংকট দীর্ঘদিন থেকেই। শেষ ১৫ বছরে তৃণমূল পরিচালিত কর্পোরেশন কোনও স্থায়ী কর্মী নিয়োগ করেনি। কেন নিয়োগ হচ্ছে না তা নিয়েও কোন কথা বলছেন না মেয়র। একাধিকবার মেয়রের কাছে অধিবেশন চলাকালীন প্রশ্ন করা হলেও কোন উত্তর নেই তাঁর কাছে।"
কর্মী সংকট নিয়ে একই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআই(এম) কাউন্সিলর নন্দিতা রায়ও। তিনি বলেন, "১০০ দিনের কর্মীদের দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করানো হচ্ছে। তাই কর্মীর অভাব মেটানো হচ্ছে, তাদের দিয়েই। আমার ওয়ার্ডেই স্থায়ী কর্মী মাত্র ১৯ জন।"
কর্মসংস্থানের প্রশ্নে ডিওয়াইএফআই কলকাতা জেলা একাধিকবার কলকাতা কর্পোরেশন অভিযান করেছে। তাঁরা প্রশ্ন করতে চেয়েছে মেয়রের কাছে কেন স্থায়ী পদে নিয়োগ হচ্ছে না। মেয়র তাদের সাথে দেখাই করেননি। কলকাতা কর্পোরেশন অভিযানের জন্য  পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হতে হয়েছে, পড়েছে পুলিশের লাঠির বাড়িও। ডিওয়াইএফআই কলকাতা জেলা সম্পাদক শ্রীজীব গোস্বামী বলেন, "কলকাতা কর্পোরেশনে কর্মসংস্থানের যে অবস্থা তা গোটা রাজ্যের অবস্থার বাইরে নয়। যে পরিষেবা তাদের দেওয়ার কথা সেই পরিষেবা তারা দিতে পারছে না। আর প্রধান কারণ স্থায়ী কর্মী নেই। কলকাতার মতো শহরে জনবসতির কারণে নতুন করে শিল্প কলকারখানা গড়ে তোলা সম্ভব নয়, কর্মসংস্থানের জন্য প্রধান ভূমিকা নিতে হতো কলকাতা কর্পোরেশনকেই। কিন্তু তারা নিয়োগ করার বদলে কন্ট্রাকচুয়াল, ক্যাজুয়াল নিয়োগ করছে। এতে স্থায়ী সমাধান হয় না। একদিকে যেমন বেকারির যন্ত্রণা, অন্যদিকে মানুষের পৌর পরিষেবার অভিযোগ বাড়ছে। ডিওয়াইএফআই স্থায়ী পদে নিয়োগের জন্য লড়াই করেছে ভবিষ্যতেও করবে।’’
 

Comments :0

Login to leave a comment