অযোগ্যদের নামের তালিকা সাতদিনের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে এসএসসিকে। বৃহস্পতিবার এমনই নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। এদিন বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মার বেঞ্চ প্রশ্ন তোলে যে হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও কেন অযোগ্যদের নামের তালিকা প্রকাশ করেনি এসএসসি। এর পাশাপাশি আদালত জানিয়েছে নতুন করে যেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তাতে তারা নজর রাখছেন।
২০১৬ এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আদালতের নির্দেশে চাকরি হারিয়েছেন ২৫,৭৩৫ জন শিক্ষক, শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মী। আদালতের নির্দেশে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অভিযোগ এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যারা দাগি অর্থাৎ যারা অনৈতিক ভাবে চাকরি পেয়েছিলেন তারা অংশ নিচ্ছেন। এই অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হন অনৈতিকতায় চিহ্নিত নন সেই চাকরি প্রার্থীরা। তাঁরা আবেদন জানান নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার। কিন্তু এদিন শীর্ষ আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে ৭ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর সূচি মেনেই পরীক্ষা হবে। উল্লেখ্য, সিবিআই’র তদন্তে অনৈতিকতায় চিহ্নিতরা ধরা পড়ে। কিন্তু তারপরও হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকার এবং এসএসসি যোগ্যদের তালিকা দেয়নি। যে কারণে পুরো প্যানেল বাতিল হয়ে যায়। ফলে অনৈতিকতায় চিহ্নিত না হয়েও বাকিদের চাকরি গিয়েছে।
এর আগে গত ৩ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে ২৫ হাজার ৭৫২ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ। ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট বলে, তিন মাসের মধ্যে নতুন করে এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাজ শেষ করতে হবে। বিচারপতি সঞ্জীব খান্না তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, কলকাতা হাইকোর্ট যে চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল সেখানে কোন হস্তক্ষেপ করা যায় না। শুধুমাত্র সেই নির্দেশের কিছু পরিমার্জন করা যায়। সেদিন শীর্ষ আদালত তার নির্দেশে এই মামলায় সিবিআই তদন্ত বহাল রেখেছিল।
সুপ্রিম কোর্ট পর্যবেক্ষণে বলেছিল, সমস্ত নিয়োগ প্রক্রিয়াতে একটি জালিয়াতি এবং প্রতারণা হয়েছে, যা সংবিধানের ১৪ এবং ১৬ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। সংবিধান অমান্য করেই এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাজ হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ৪১ পৃষ্ঠার নির্দেশে বলা হয়েছিল, এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার কোনও তথ্য এবং নথি নিজেদের কাছে রাখেনি এসএসসি। সব নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। ফলে যোগ্য এবং অযোগ্য প্রার্থীদের বাছাই করতে পারেনি। এসএসসি সুপ্রিম কোর্টে কোন যুক্তিগ্রাহ্য নথি জমা না দেওয়ায় ২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিল হয়ে যায়।
এই চাকরি বাতিলের পরে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন জানিয়ে বলা হয়েছিল, সমস্ত শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়ে গেলে রাজ্যের স্কুলগুলিতে ছাত্রদের পড়াশোনার ক্ষতি হয়ে যাবে। ফলে এই শিক্ষকদের আরও কিছুদিন তাঁদের কাজে বহাল করা প্রয়োজন। সুপ্রিম কোর্ট মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সেই আবেদন গ্রহণ করে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশে বলা হয়েছিল, শুধুমাত্র যোগ্য শিক্ষকরাই এই সময়ে কাজে যোগ দেবেন। চিহ্নিত অযোগ্য শিক্ষকরা কাজে যোগ দিতে পারবেন না। এই সময়ে শিক্ষাকর্মীরা স্কুলে যেতে পারবেন না। সেই নির্দেশের পর এসএসসি’র একটি আবেদনের ভিত্তিতে শীর্ষ আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাজ চলতি বছরের ৩১ মে’র মধ্যে শুরু করতে হবে। শেষ করতে হবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে। এসএসসি শিক্ষক নিয়োগে নতুন প্রক্রিয়া শুরু করেছে কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও চিহ্নিত অযোগ্যদের জন্য ব্যবস্থা নেয়নি। তাদের তালিকা প্রকাশের আবেদন জমা পড়ে সেজন্যই।
SSC SUPREME COURT
সাত দিনের মধ্যে এসএসসিকে অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

×
Comments :0