ভারতের সাথে দীর্ঘ মেয়াদী বাণিজ্য চুক্তি করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার দক্ষিণ কোরিয়া সফর চলাকালিন এমনই ঘোষণা করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বুধবার মার্কিন প্রশাসনের সূত্রে জানা যায় ভারত মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি হতে পারে এই মাসে। এক সপ্তাহের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তির কথা জানালেন ট্রাম্প। এই চুক্তির ফলে ভারতীয় আমদানির উপর মার্কিন শুল্ক ৫০% থেকে ১৫% থেকে ১৬% এ নামিয়ে আনা হবে বলে সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর।
এদিনও মার্কিন রাষ্ট্রপতির মুখে শোনা গিয়েছে অপারেশন সিঁদুর প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, ভারত এবং পাকিস্তান দুই পরমানু শক্তিধর দেশ সংঘাতের মধ্যে জড়িয়ে পড়ে। আমি মোদীকে ফোন করে জানাই যে ভারতের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোন বাণিজ্য চুক্তি করবে না। কারণ ভারত পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। এখানেই না থেমে মার্কিন রাষ্ট্রপতি দাবি করেন, ‘মোদী খুব ভালো মানুষ। এই কথা বলার পর দুই দেশের পক্ষ থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করে এবং জানায় যে তারা ভুল করেছে তারা যুদ্ধ থামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রশ্ন এখানেই যেই বিজেপি নির্বাচনের সময় বার বার বলে তারা পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখল মুক্ত করবে, সেখানে কেন মার্কিন হুমকির কাছে তারা পিছিয়ে এলো। অপারেশন সিঁদুরে যখন দেশের মানুষ সন্ত্রাসবাদীদের হাতে নিহত হলো তখন কেন ভারত সরকার মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের চাপের মুখে মাথা নত করলো? পরবর্তী সময় এই বিজেপিকেই দেখা গিয়েছে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে রাজনীতি করতে।
জ্বালানি ও কৃষির উপর নির্ভরশীল এই চুক্তির ফলে ভারত ধীরে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানি কমিয়ে আনতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন যে ভারত রাশিয়ার থেকে আর তেল কিনবে না। তারপরই এই চুক্তি চুড়ান্ত হওয়ার মুখে।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প বলেন, জ্বালানিও তাদের আলোচনার অংশ ছিল এবং প্রধানমন্ত্রী মোদী তাকে আশ্বস্ত করেছেন যে ভারত রাশিয়া থেকে তেল ক্রয় সীমিত করবে।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন যে তিনি মার্কিন রাষ্ট্রপতির সাথে কথা বলেছেন, কিন্তু কী আলোচনা হয়েছে সে সম্পর্কে কোনও বিস্তারিত তথ্য দেননি।
ট্রাম্প প্রশাসনের ভারতের ওপর যে শুল্ক চাপিয়েছে তার ফলে কৃষি সহ একাধিক ক্ষেত্র সঙ্কটের মুখে পড়েছে। ইতিমধ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক লাগু হয়ে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে শুল্ক চাপানোর ফলে মার্কিন বাজারে ভারতীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাবে যার ফলে কমবে রপ্তানি। করোনা অতিমারির সময় কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে যেমন ভাবে কয়েকটি ক্ষেত্রকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছিল এবারও সেই একই নীতি মানা হতে পারে।
ভারতের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক চাপানো নিয়ে কড়া সমালোচনার সাহস দেখায়নি ভারত সরকার। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক মার্কিন পদক্ষেপকে "অযৌক্তিক, অন্যায্য এবং ভিত্তিহীন" বলে চিহ্নিত করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিজেদের দেশের মানুষের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে। ভারতের মতো অন্য অনেক দেশ, যার মধ্যে চীনও রয়েছে, এই ধরনের বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শুধু ভারতের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা "অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক" বলে মন্তব্য করা হয়েছে। উল্লেখ্য চীনের ওপর শুল্ক চাপিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই চাপের কাছে চীন মাথা নত না করে পাল্টা শুল্ক চাপায় মার্কিন পণ্যের ওপর। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পিছু হটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
এখানে প্রশ্ন থাকছে ‘বিশ্বগুরুর’ সরকার কেন পাল্টা কুটনৈতিক ভাবে মার্কিন শুল্ক নীতির মোকাবিলা না করে চুপ করে তা মেনে নিচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার যে মার্কিন চাপের কাছে মাথা নত করেছে তার প্রমাণ সরকারের এই বিশেষ সাহায্যের ইঙ্গিত।
ভারতের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর মোট শুল্কের বোঝা ৫০ শতাংশে উন্নীত করায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যান। ইউএস-ভিত্তিক উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের এই পরিচালক এক সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান, ভারত যেহেতু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির কৃতিত্ব ট্রাম্পকে দিতে রাজি হয়নি, তাই তিনি ভারতকে শাস্তি দিতেই এই কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন।
Comments :0