Editorial

স্মার্ট মিটার

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial


দিল্লিতে ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল বিদ্যুৎ সংস্কার বিল বাতিল করা। বিদ্যুৎ সংস্কার বিল পাশ করিয়ে মোদী সরকারের লক্ষ্য ছিল বিদ্যুৎ ক্ষেত্রকে ধাপে ধাপে পুরোপুরি বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া। অর্থাৎ বিদ্যুতে সরকার আর কোনও ভরতুকি দিতে রাজি নয়। বেসরকারি সংস্থা পর্যাপ্ত মুনাফা নিয়ে বিদ্যুৎ বণ্টনের দায়িত্ব নেবে। কৃষক আন্দোলনের জেদের কাছে মাথা নত করে মোদী সরকার শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েছে বিল আপাতত তুলে রাখতে। কিন্তু বেসরকারিকরণের গোঁ থেকে সরে আসেনি। বরং ঘুরপথে বেসরকারিকরণের রাস্তা পরিষ্কার করতে স্মার্ট মিটার চালু করার আয়োজন করেছে। অনেকটা প্রি পেইড মোবাইল ফোন পরিষেবার মতো এই স্মার্ট মিটার। এখানেও আগে টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হবে। টাকা ফুরিয়ে গেলে মোবাইলের মতো স্মার্ট মিটারও বন্ধ হয়ে যাবে। অর্থাৎ গোটা বাড়ি বিদ্যুৎহীন অন্ধকারে ডুববে। ফের টাকা দিলে তবেই বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হবে। এই ব্যবস্থায় পারস্পরিক ভরতুকির গল্প উঠে যাবে। কম বিদ্যুৎ গ্রাহকরা ইউনিট প্রতি খানিকটা কমে বিদ্যুৎ পেলেও পরে আর সেই সু‍‌যোগ মিলবে না। তেমনি বিমানে, রেলে ডায়নামিক প্রাইসিংয়ের আদলে বিদ্যুতের চাহিদার উপর নির্ভর করে মূল্য ধার্য হবে। যত বেশি চাহিদা তত বেশি মূল্য। সাধারণ গ্রাহকদের সবদিক থেকে গলা কাটার আয়োজন হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা মুনাফার লক্ষ্যে যেভাবে এবং যে হারে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে স্মার্ট মিটারের মাধ্যমে সেইভাবেই গ্রাহকদের বলির পাঁঠা করা হবে।
মোদী সরকার এই ব্যবস্থা সারা দেশে চালু করতে বলেছে রাজ্যগুলিকে কৌশলে বার্তা দিয়েছে ভরতুকির দায় থেকে মুক্ত হতে এই স্মার্ট মিটার ব্যবস্থা সবচেয়ে কার্যকর। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি তো বটেই কিছু বিরোধী শাসিত রাজ্যও এই ব্যবস্থা লুফে নিয়েছে। এদের মধ্যে সর্বাগ্রে আছে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার। মুখ্যমন্ত্রী বাংলাকে শিল্পের মরুভূমি বানিয়ে বিদেশে গেছেন শিল্প আনতে। এখনও পর্যন্ত কোনও বিদেশি সংস্থা কানাকড়ি বিনিয়োগ করবে বলেও জানায়নি। অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী সরকারি অর্থে বিরাট চাটুকার সঙ্গী নিয়ে দিব্যি খোশ মেজাজে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বিদেশি লগ্নির আশ্বাস না মিললেও মুখ্যমন্ত্রী সফরসঙ্গী ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলি স্পেনে বসে মুখ্যমন্ত্রীকে সাক্ষী রেখে শালবনিতে ইস্পাত কারখানা করার কথা ঘোষণা করেছেন।
যাইহোক, বিদেশ সফরের আগেই নবান্নে বসে মোদীর স্মার্ট মিটার প্রকল্প সানন্দে গ্রহণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী এবং চালু করার নির্দেশও দিয়েছেন। আপাতত সরকারি দপ্তর বা সংস্থায় এই মিটার বসবে, তার পরই বিধাননগর, নিউটাউন, চন্দননগর ও গড়িয়া অঞ্চলের কয়েক লক্ষ সাধারণ গ্রাহকের বাড়িতেই স্মার্ট মিটার চালুর নির্দেশিকা জারি হয়ে গেছে। আগামী বছরের মধ্যে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, পৌরসভা থেকে শুরু করে হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, জল সরবরাহ, সেচ দপ্তর ইত্যাদি সর্বত্র স্মার্ট মিটার বসে যাবে। সরকারি ক্ষেত্রে আগাম টাকা ফুরিয়ে গেলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার আগে দশদিন সময় দেওয়া হবে। কিন্তু সাধারণ গ্রাহকদের জন্য একদিনও মিলবে না। ফেল কড়ি মাখো তেল। শিক্ষা ক্ষেত্রে যেমন মোদী নীতি গ্রহণ করে রাজ্যে চালু করে দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি তেমনি বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে মোদীর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে মাঠে নেমে পড়েনে। প্রসঙ্গত কেরালার বাম সরকার ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে মোদী নির্দেশিত স্মার্ট মিটার ব্যবস্থা কেরলে চালু করবে না।
 

Comments :0

Login to leave a comment