ধূসরবেলা
অপরিচিতের — রবীন্দ্রনাথ
মনীষ দেব
মুক্তধারা
২৫ শে বৈশাখ
রবীন্দ্রনাথ — কালের যাত্রা — সভ্যতার সংকট — রাশিয়ার চিঠি — রক্তকরবী — বিসর্জন — শেষের কবিতা....। তত্ত্বজ্ঞানীদের বহুবর্ণের রবীন্দ্রনাথ এবং পাঁজি-পুথির নির্ঘণ্টের বাইরে এক অন্য রবীন্দ্রনাথ! যে রবীন্দ্রনাথ — এক অনন্য রবীন্দ্রনাথ।
মুক্তধারা এবং এক মুক্তধারার রবীন্দ্রনাথ — অপরিচিতের রবীন্দ্রনাথ। এই অপরিচিতের রবীন্দ্রনাথ অনায়াসে বলতে পারেন —
রাম বনে ফুল পাড়ে। গায়ে তার লাল শাল। হাতে তার সাজি। জবা ফুল তোলে। বেল ফুল তোলে। বেল ফুল সাদা। জবা ফুল লাল। জলে আছে নাল ফুল। ফুল তুলে রাম বাড়ি চলে।
এই সেই রবীন্দ্রনাথ এক সাবলীল রবীন্দ্রনাথ যার অনায়াস উচ্চারণ —
ডাক পাড়ে ওঔ
ভাত আলো বড়ো বৌ।
অপরিচিতের রবীন্দ্রনাথ এতটাই উন্মুক্ত যে, জীবনের কথা জীবনেই এঁকে যান কবি —
কত রাতের শেষে
নৌকো-যে যায় ভেসে —
বাবা কেন আপিসে যায়,
যায় না নতুন দেশে?
সৃষ্টি যেমন জীবনের — তেমনই কল্পনার সাঁকো, সেই সাঁকোয় দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রনাথ বলছেন —
কতদিন ভাবে ফুল উড়ে যাব কবে,
যেথা খুশি সেথা যাব ভারি মজা হবে।
তাই ফুল একদিন মেলি দিল ডানা —
প্রজাপতি হল, তারে কে করিবে মানা।
রবীন্দ্রনাথ অপরিচিতের আশ্রয় — আবার অপরিচিতের মাঝেই রবীন্দ্রনাথের আশ্রয় — তাই কবির অপরিচিত কন্যা এক মুক্তধারা —
আমি তোমারি মাটির কন্যা, জননী বসুন্ধরা —
তবে আমার মানবজন্ম কেন বঞ্চিত করা।
রবীন্দ্রনাথ এই আশ্রয়েরই পিয়াসী।
রবীন্দ্রনাথকে দেরাজ থেকে নামিয়ে আনতে হয় না। সে এক চলার পথের পথিক — সেই পথিকের কথায় —
এই পথে কত মানুষ কেউ বা আমার পাশ দিয়ে চলে গেছে, কেউ বা সঙ্গ নিয়েছে, কাউকে বা দূর থেকে দেখা গেল; কারও বা ঘোমটা আছে, কারও বা নেই; ....
এই তো পায়ে চলার পথ।
এই তো রবীন্দ্রনাথ!
বিস্ময়ে এবং বিশ্বাসে
অনুভবে — ভালবাসায় — তুমি অপরিচিতের।
Comments :0