গল্প
মানুষ চেনা
সৌরীশ মিশ্র
নতুনপাতা
ক'দিন হোলো স্কুলে গরমের ছুটি পড়েছে পিকুদের। প্রতি বছর গরমের ছুটি পড়লেই কয়েক দিনের জন্য মামার বাড়ি যায় সে। ওর মা বা বাবা-ই গিয়ে ওকে দিয়ে আসেন। কিন্তু, এ বছর পিকু মামাবাড়ি যাওয়ার কথা মাকে বলতেই মা বললেন, "আমার আর তোর বাবার অফিসে এখন ভীষণ কাজের চাপ। তোকে ঐ বাড়িতে দিয়ে আসবে কে?"
পিকুও হাল ছাড়ে না। বলে, "আমাকে দিয়ে আসতে হবে কেন? আমি তো বড়ই হয়ে গেছি প্রায়। ক্লাস সেভেনে পড়ছি এখন। এই তো মোটে কটা স্টেশন। আমি নিজেই চলে যাব।"
প্রথমে রাজি না হলেও শেষে ছেলের জোড়াজুড়িতে পিকুর মা রাজি হয়ে গেলেন।
পরদিন সকাল সকালই পিকুদের বাড়ির কাছের আনন্দপুর স্টেশনে পৌঁছে পিকু দেখল ট্রেন আসতে তখনও মিনিট পাঁচেক দেরী। একটা বেঞ্চিতে গিয়ে বসল ও। কয়েক মুহূর্ত যেতেই ওর পাশে এসে বসল অপরিস্কার পোশাক পরা একজন লোক। লোকটার মুখে খোঁচা-খোঁচা দাড়ি। লোকটার চেহারা-ছবি দেখে বিশেষ ভাল লাগল না পিকুর। হঠাৎ লোকটা পিকুকে জিজ্ঞেস করল, "কোথায় যাচ্ছ খোকাবাবু?"
লোকটার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছিল না পিকুর, তবুও সে বলল, "মামাবাড়ি।"
"একা যাচ্ছ?" ফের জিজ্ঞেস করে লোকটা।
"হ্যাঁ।"
ঠিক তখনই, ট্রেনের হুইসল ভেসে এল। ট্রেন ঢুকছে স্টেশনে। পিকু উঠে দাঁড়াল। আর তখুনি, দু'চোখের সামনে পুরো অন্ধকার নেমে এল পিকুর। জ্ঞান হারানোর মুহূর্তে পিকু বুঝতে পারল, দুটো হাত তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
জ্ঞান যখন ফিরল পিকুর, তখন পিকু ওদের বাড়ির বিছানায় শুয়ে। চোখ খুলতেই বাবা, মা আর স্টেশনের সেই লোকটাকে দেখতে পেল ও। "খোকাবাবু চোখ খুলেছে। আল্লাহর অনেক মেহেরবানি।"
সুস্থ হয়ে পরে শুনেছিল পিকু, স্টেশনের ঐ লোকটা রাজমিস্ত্রির কাজ করে, নাম মুর্শিদ। পিকু অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পর প্রথমে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিল ও। তারপর পিকুর শার্টের পকেটে ওর মা-এর রেখে দেওয়া বাড়ির ঠিকানা পেয়ে রিকশা করে নিয়ে এসেছিল বাড়িতে পিকুকে। এমন কি, পিকুর বাবা ডাক্তারের ফি, ওষুধের দাম এবং রিকশার ভাড়া দিতে চাইলেও প্রথমে কিছুতেই নিতে চায়নি সে। পরে একপ্রকার জোড় করেই টাকাকটা দিতে পারেন মুর্শিদকে তিনি।
পিকুর চোখ খুলে দিয়েছিল ঘটনাটা। সে বুঝেছিল, চেহারা, পোশাক-আশাক দেখে মানুষকে বিচার করতে যাওয়া কতো বড় ভুল।
Comments :0