বিজেপির তরফে একাধিকবার দাবি করা হয়েছে, ভারতে হিন্দুরা ক্রমেই সংখ্যালঘুতে পরিণত হবে।। সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে মুসলিমরা, কেননা জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সকলকে ছাড়িয়ে। বিজেপি নেতানেত্রীদের বলতে শোনা যায় প্রায়ই, ‘যাদের চারটে বাচ্চা’। এদেশে সঙ্ঘ পরিবারের মুসলিম বিদ্বেষ ছড়ানো আর ঘৃণাভাষণের অন্যতম হাতিয়ার মুসলিম জনসংখ্যা নিয়ে প্রচার।
সত্যিটা কী? সরকারি তথ্যই বা কী বলছে? আইআইটি’র প্রাক্তন অধ্যাপক এবং সমাজবিদ রাম পুনিয়ানি সেই তথ্যই হাজির করছেন। সেই সঙ্গে আরও একটি ঘটনা মনে করাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০২১’র জনগণনা কিন্তু হয়নি। এই প্রথম, দশ বছর অন্তর জনগণনা হলো না। নরেন্দ্র মোদী সরকার কোভিডের কারণ দেখিয়ে বন্ধ রেখেছে জনগণনা, সব কিছু স্বাভাবিক হওয়ার পরও! তথ্য লুকিয়ে চলছে অসত্য প্রচার।
অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘নিউজক্লিক’র নিবন্ধে পুনিয়ানি বলছেন, ‘‘পুনিয়ানি বলছেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি বা কমার, সব থেকে বড় সূচক হল ‘টোটাল ফার্টিলিটি রেট’ বা টিএফআর। সহজ করে বললে, নিজের জীবনকালে একজন মহিলা গড়ে কত জন সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন সেটাই হল টিএফআর। জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের অধিকাংশ সম্প্রদায়ের টিএফআর কমছে। তার মধ্যে মুসলিমরাও আছে, অন্যদের চেয়ে বেশি হারে কমেছে ভারতীয় মুসলিমদের টিএফআর।’’
১৯৯২-৯৩ সালে, হিন্দুদের টিএফআর ছিল ৩.৩ শতাংশ, যা ২০১৯-২১ সালে কমে হয়েছে ১.৯৪। একই সময়কালে মুসলিমদের টিএফআর ৪.৪১ থেকে কমে হয়েছে ২.৩৬। শতাংশের হিসাবে হিন্দুদের ক্ষেত্রে কমার হার ৪১.২১ শতাংশ এবং মুসলমানদের ক্ষেত্রে সেটা ৪৬.৪৯ শতাংশ।
তথ্য থেকেই স্পষ্ট, হিন্দুদের তুলনায় মুসলমানদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমছে। বস্তুত, জনসংখ্যা স্থির থাকে, এমন হারের কাছাকাছিও চলে আসছে।
বিজেপি প্রচারে বলা হচ্ছে, বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’ সরকারে এলে মুসলিমদের সমস্ত সুবিধা দিয়ে দেবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে এই ধরনের দাবি করছেন জনসভায়। সংখ্যাগুরু অংশের মধ্যে আশঙ্কা তৈরির করে ভোটে বাজিমাত করতে চাইছে বিজেপি।
এই প্রচারকে তুঙ্গে নিয়ে যেতে, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টামন্ডলী বা পিএমইএসি একটি ‘গবেষণাপত্র’ সামনে এনেছে। বলা হয়েছে, ১৯৫০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে হিন্দু জনসংখ্যা ৮ শতাংশ হারে কমেছে। একই সময় কালে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৪৩ শতাংশ। এই গবেষণা অনুযায়ী, ১৯৫০ সালে ভারতে হিন্দুদের ভাগ ছিল মোট জনসংখ্যার ছিল ৮৪ শতাংশ, যা ২০১৫ সালে ৭৮ শতাংশে নেমে এসেছে। কিন্তু মুসলিমদের ভাগ বেড়েছে জনসংখ্যায়।
এই বক্তব্যকে নস্যাৎ করে পুনিয়ানি বলছেন, ‘‘২০১৭ সালে তৈরি হওয়া, প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টামন্ডলী প্রথম থেকেই আরএসএস এবং বিজেপির আদর্শে অনুপ্রাণিত। উপদেষ্টামন্ডলীর প্রধান বিবেক দেবরায় ভারতীয় সংবিধানকে ব্রিটিশ রাজের পরম্পরায় অনুপ্রাণিত সংবিধান বলেছেন। নির্বাচনের আগে সেই উপদেষ্টামন্ডলী গবেষণার নামে সন্দেহ ছড়াচ্ছে।’’
রাম পুনিয়ানির পালটা বক্তব্য, ‘‘জাতীয় স্বাস্থ্য পরিবার সমীক্ষায় জন্মহার যা দেখাচ্ছে তাতে ২০৫০ সালেও গিয়ে দেশের মুসলিমদের সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১৮ শতাংশে পৌঁছাবে বড়জোর। কোন ভাবেই হিন্দু জনসংখ্যাকে ছাপিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।’’
বামপন্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন অংশই বারবার বলেছে যে জনসংখ্যার সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক থাকে না। থাকে আর্থ-সামাজিক কাঠামোর সম্পর্ক। উন্নত জীবন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কাজের সুযোগ, নারীশিক্ষা বস্তুত জন্মহার কমিয়ে আনে। দক্ষিণে কেরালার মতো রাজ্যে মুসলিম জনসংখ্যা হিন্দি বলয়ের রাজ্যগুলির তুলনায় বেশি। কিন্তু দক্ষিণের এই রাজ্যগুলিতে জনসংখ্যার হার জাতীয় গড়ের চেয়ে কম। উন্নত জীবনযাপনের সুবিধার কারণে। সে সত্য লুকানোর চেষ্টা চালাচ্ছে আরএসএস-বিজেপি।
MUSLIM POPULATION RAM PUNIYANI
মুসলিম জনসংখ্যা ঘিরে মিথ্যাকে চ্যালেঞ্জ আইআইটি’র প্রাক্তন অধ্যাপকের

×
Comments :0