তৃণমূল সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির ফলে হাজার হাজার উচ্চশিক্ষিত যোগ্য শিক্ষক, শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীরা এখন কলকাতার রাজপথে। তাঁরা তাঁদের ন্যায্য দাবির জন্য বিকাশ ভবন অভিযানে যেতে বাধ্য হয়েছেন। সরকার এখনো মরিয়া অযোগ্যদের চাকরি বাঁচিয়ে রাখার জন্য। যোগ্যদের তালিকা আজ পর্যন্ত সরকার, এসএসসি, পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রকাশ করে নি বা আদালতেও জমা দেয় নি। ফলে উচ্চ শিক্ষিত এই সমস্ত শিক্ষক, শিক্ষিকাদের যাঁদের আজকে স্কুলে থাকার কথা ছিল তাঁরা বাধ্য হয়েছেন আন্দোলনে নামতে। এ ধরনের এক উচ্চশিক্ষিত হলেন ছড়রা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ড: সোমনাথ ব্যানার্জি। অধ্যাপনা বা কোন কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপদ হেলায় ছেড়ে দিয়েছিলেন ঘরের পাশে সরকারি বিদ্যালয়ে চাকরি করবেন বলে। তার বদলে তাঁর জুটেছে পুলিশের লাঠি। বিকাশ ভবন রক্তাক্ত হয়েছে শিক্ষকদের রক্তে। ভয়ানক ভাবে আহত হয়েছে সোমনাথ ব্যানার্জি। নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতি পুরুলিয়া জেলা শাখা তাঁর পাশে থাকার বার্তা নিয়ে সোমবার পৌঁছে যান রঘুনাথপুরে তাঁর বাড়িতে। এবিটিএ নেতৃত্ব শুনলেন অকথ্য পুলিশী অত্যাচারের কথা। অত্যাচারের পরও আহত শিক্ষকদের কিভাবে বিকাশ ভবনের কাছে পড়ে থাকতে হয়েছিল, সরকারি সাহায্য তো দূরের কথা যন্ত্রণায় চিৎকার করলেও অ্যাম্বুলেন্স তাঁদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। পুলিশের লাঠির আঘাতে গোটা পিঠ জুড়ে কালো দাগ। অথচ রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ববি হাকিম বলছেন এগুলো ‘নাটক’। পুলিশের লাঠির আঘাত নয়, এগুলো পড়ে গিয়ে আঘাতের চিহ্ন। সোমনাথদের মতো হাজারো চাকরিহারাদের আন্দোলন নাকি তৃণমূল সরকারের নেতা মন্ত্রীদের চোখে নাটক, খবরের কাগজে ও টিভির পর্দায় মুখ দেখানোর জন্য আন্দোলন। নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির এ রাজ্যের এক লক্ষ সদস্য- সদস্যা সোমনাথদের পাশে আছে। সমিতি চায় যোগ্য শিক্ষক -শিক্ষিকারা স্টাফ রুমগুলোর তাঁদের ফাঁকা চেয়ারগুলিতে আবার ফিরে আসুক। বিদ্যালয়ের সন্তানতুল্য ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁদের প্রিয় মাস্টারমশাইদের আবার স্কুলে দেখতে চায়। তাই আন্দোলন শুধুমাত্র তাঁদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। তাই এবিটিএ পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক ব্যোমকেশ দাস আহ্বান জানান সমিতির সদস্যদের পাশাপাশি স্টাফ রুমের সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা-শিক্ষাকর্মী, বিদ্যালয়গুলির সমস্ত ছাত্রছাত্রী, এ রাজ্যের সমস্ত অভিভাবক -অভিভাবকদের ও শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষদের এ লড়াইয়ে তাঁদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর। এবিটিএ ইতিমধ্যে রাজ্যের সমস্ত জেলায় আন্দোলনে পথে নেমেছে। বিকাশ ভবনে ও এসএসসি দপ্তরেও তাঁদের আন্দোলনের পাশে প্রতিদিন সমিতির নেতৃত্ব উপস্থিত থাকছে। শ্রী দাস বলেন,‘‘আমরা যাঁরা রক্ত মাংসের মানুষ তাঁদের কাছে আহ্বান জানাবো এ আন্দোলনে শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।’’ তিনি বলেন, ‘‘আসলে দোষটা হচ্ছে বামফ্রন্ট সরকারের। বামফ্রন্ট সরকার এই ধরনের হাজার হাজার সোমনাথের মনে আশা সৃষ্টি করেছিল হয়তো ভালোভাবে পড়াশোনা করে, চাকরির পরীক্ষা দিয়ে চাকরির পরীক্ষাতে পাস করলেই চাকরি পাওয়া যাবে। চাকরি জন্য এত দুর্নীতি, ঘুষ পুলিশের লাঠি এটা সোমনাথরা আশা করেনি কোনদিন। আর এভাবে ছয়-সাত- আট বছর চাকরি করার পর, চাকরির জন্য প্রতি মাসে সঠিকভাবে বেতন পাওয়ার পরও যে, এভাবে চাকরি যেতে পারে তা মনে হয় আমাদের পশ্চিমবঙ্গবাসীর কোনদিন অভিজ্ঞতা ছিল না। তাই সোমনাথরা এখন শক্ত হচ্ছে। ভবিষ্যতে সে ওই বিকাশ ভবন, এসএসসি দপ্তর, ওই আন্দোলনের যোগ্য শিক্ষকদের থেকে কোনদিন মুখ ফিরাবে না - এই আশ্বাস সমিতিকে জানিয়েছে সোমনাথ। এবিটিএ নেতৃত্বও সব দিন সোমনাথদের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে।
SSC SCAM
পুলিশের মারে জখম শিক্ষকের পাশে থাকার বার্তা এবিটিএ’র

×
Comments :0