রবিবার কার্নিভালের জন্য মঞ্চে বলেছিলেন সোমবার দমদম বিমানবন্দরে ‘বহিরাগত জল’কে ভিলেন সাব্যস্ত করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গে মৃতের সংখ্যা ছুঁয়েছে ২৩। ঘরছাড়া, সর্বস্বান্ত অনেকে। উত্তরবঙ্গে যাওয়ার আগে দমদম বিমান বন্দরে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করলেন মৃতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে। সঙ্গে পরিবারের একজনকে হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হবে। তিনি দাবি করলেন এই দুর্যোগ পরিস্থিতি ইচ্ছাকৃত তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেছেন উত্তরবঙ্গ পৌঁছে হাসিমারা হয়ে নাগরাকাটা যাবেন তিনি।
শনিবার রাতেই উত্তরবঙ্গে শুরু হয়েছিল প্রবল বৃষ্টি। নদীগুলির জল বাড়ছিল। রবিবার সকালে ধস, প্লাবনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। প্লাবনে ঘরহারা মানুষের সংখ্যা লাগাতার বাড়ছিল। মিরিকে বাড়ি ভেঙে ১২ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে দুপুরের মধ্যেই। সেই সংখ্যা বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আরও বেড়েছে। কোচবিহার, জলপাইগুড়ির একাধিক জায়গায় বানভাসিদের খাবারের ব্যবস্থা করতে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়েছে রেড ভলান্টিয়ারদের। কিন্তু সেদিন বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গে যাননি মুখ্যমন্ত্রী। শুধু দাবি করেছেন দুর্যোগ পরিস্থিতি ইচ্ছাকৃত তৈরি করা হয়েছে। ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যাপ্লাবিত হওয়ায় আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। মৃতদের পরিবারের প্রতি কার্নিভালমুখী মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা দিয়েছিলেন, ‘‘অকস্মাৎ এই বিপুল বৃষ্টিতে এবং নদীর বন্যায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমাদের কয়েকজন ভাই-বোন আমরা হারিয়েছি বলে খবর এসেছে। এই দুঃসংবাদে আমি আন্তরিকভাবে মর্মাহত। প্রত্যেক মৃত ব্যক্তির পরিবারবর্গকে আমি আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। প্রত্যেক পরিবারের কাছে আমাদের সহায়তা অবিলম্বে পৌঁছে যাবে।’’’
বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ২৩ জনের। নিচু এলাকাগুলিতে ইতিমধ্যে প্লাবনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় সোমবার উত্তরবঙ্গ যাচ্ছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। যাচ্ছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ ও প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকরা। আজ বিকেলের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছে যাবেন উত্তরবঙ্গে।
সরকারি মতে উত্তরবঙ্গে এখনও পর্যন্ত দুর্যোগে মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। তবে বেসরকারি মতে মৃতের সংখ্যা ২৮। মিরিকে ১১ জন, মানেভঞ্জনে ৫ জন, নাগরাকাটায় ৫ জন, সুখিয়াপোখরিতে ২ জন, দার্জিলিং সদরে ১ জন, জোড়বাংলো ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে।
উত্তরবঙ্গের বন্যা দুর্গত অঞ্চলে নীরবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন রেড ভলান্টিয়াররা। ডুয়ার্সে গত কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টির জেরে প্লাবিত হয়েছে একাধিক এলাকা। বহু ঘরবাড়ি জলমগ্ন। প্রাণ বাঁচাতে বন্যা কবলিত এলাকার বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ভিড় করেছেন স্থানীয় স্কুল ও ক্লাব ঘরগুলোতে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে আবারও তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন রেড ভলান্টিয়াররা।
রবিবার বিকেলে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বন্যা পরিস্থিতি দেখতে পৌঁছালে ক্ষোভে ফেটে পড়েন দুর্গত মানুষজন। ত্রাণ শিবিরে চরম অব্যবস্থার অভিযোগ তুলে ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা মন্ত্রীকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। গ্রামবাসীদের অভিযোগের সময় প্রশাসনের কোনো আধিকারিককে ঘটনাস্থলে দেখা যায়নি। এদিন বন্যা কবলিত নাগরাকাটা পরিদর্শনে এসে আক্রান্ত হলেন বিজেপির প্রতিনিধি দল। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই দলে ছিলেন শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ ও মালদার সাংসদ খগেন মুর্মু। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের সময় আচমকাই একদল উত্তেজিত মানুষের হাতে তারা আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ। মাথা ফাটল বিজেপি বিধায়ক খগেন মুর্মুর। শঙ্কর ঘোষের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ। আক্রান্ত হলেন সাংবাদিকরাও। মাটিতে ফেলে মারধরের অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতারাও এই বিপর্যয়ের সময়ে কোনো সাহায্য করেননি। এই ক্ষোভ থেকেই ঘটনাটি ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।
Mamata Banerjee
বিপর্যয়ের মধ্যে কার্নিভাল, আজ উত্তরবঙ্গে রওনা হলেন মুখ্যমন্ত্রী, বিক্ষোভের মুখে বিজেপি বিধায়করা

×
Comments :0