জানা অজানা — নতুনপাতা
মৃতদেহের ফুল
তপন কুমার বৈরাগ্য
১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সার্জেন সুমাত্রা দ্বীপে নামেন একজন
সঙ্গীকে নিয়ে।সুমাত্রা দ্বীপ ভারতমহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত।
ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিমদিকে অবস্থিত। এই দ্বীপটা তখন
জঙ্গল দ্বারা ঘেরা ছিল।তিনি যখন জাহাজে করে যাচ্ছিলেন
তখন দেখলেন পরজীবী কিছু গাছ।যারা দীর্ঘদেহী ।
তিনি তার সঙ্গীকে নিয়ে বনের মধ্যে প্রবেশ করলেন।
গভীর বনে প্রবেশ করে দেখলেন সেই পরজীবী গাছ
যা প্রকান্ড সব গাছকে জড়িয়ে ধরে আছে। তিনি আরো দেখলেন
এই পরজীবী গাছের কান্ড থেকে দৈত্যকার পদ্মের মতন
ফুল ফোটে।এতো বড় ফুল তিনি জীবনে কোনোদিন দেখেন নি।
একটা ফুল তুললেন।দেখলেন তার ওজন দশ থেকে বারো
কেজি পর্যন্ত হবে।এই বনটা ছিল সুমাত্রার রেইন ফরেস্ট।
ফুলটা তুলবার সাথে সাথে তিনি বললেন --এই ফুলটার
নাম আমি আজ থেকে দিলাম রাফলেসিয়া আর্নল্ডি।তার
নামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এইরকম তিনি নামকরণ করেন।
কিন্তু সেইসময় একটা আশ্চর্য ঘটনা ঘটল ।তিনি এই ফুলটা
আবিষ্কারের পর আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলেন।ফুলটা স্পর্শ
করার কিছুক্ষণ পর তার প্রচন্ড জ্বর হলোএবং কিছুক্ষণের মধ্যে
মারা গেলেন।
ফুলটির নাম হয়ে গেল মৃতদেহের ফুল।এই ফুলটার ব্যাস ৪০ইঞ্চির মতন। এতো বড় ফুল হলে কি হবে ,এই ফুলে কোনো সুগন্ধ নেই। পচা মাংসের মতন দুর্গন্ধ।মৃত মাংস খাওয়া মাছি,পোকামাকড় অন্যান্য জীবেরা এই ফুল থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে।এই কারণেও অনেকে এই ফুলকে মৃতদেহের ফুল বলেন।এই
ফুল পরজীবী উদ্ভিদের কান্ডে জন্মায়।এই ফুলে প্রস্ফুটিত পদ্মের
মতন পাপড়ি থাকে।ফুলের রঙ লাল বা খয়েরী রঙের হয়।যদি
পতঙ্গ দ্বারা আকৃষ্ট না হয় তবে এই ফুল পৃথিবীর সবচেয়ে
দীর্ঘজীবী ফুল । ইন্দোনেশিয়া ছাড়া,মালয়েশিয়াতে এই ফুল
দেখা যায়।পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফুল যিনি দেখেছেন তার জীবন সত্যিই সার্থক।
Comments :0