editorial

অর্থনীতির উলট পুরাণ

সম্পাদকীয় বিভাগ

মহারাষ্ট্রের শিল্প ক্ষেত্রে প্রত্যাশা মতো বিনিয়োগ আসছে। নতুন নতুন বিনিয়োগ না এলে রাজ্যের দারুণ অগ্রগতি হচ্ছে এমন দাবি করা যাচ্ছে না। অতএব কিছু একটা তো করতে হবে যাতে প্রচার করা যায় বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সরকার যথেষ্ট সক্রিয়। আসলে ধর্ম নিয়ে, জাতপাত নিয়ে যতই কুস্তি হোক না কেন শেষ পর্যন্ত রুজির প্রশ্নটা এড়ানো যায় না। বাস্তবে দৃশ্যগোচর না হলেও অন্তত কাগজে কলমে সাজানো তথ্য-পরিসংখ্যান দেখিয়ে এটা অন্তত বলা যেতে পারে অর্থনীতির গতি বৃদ্ধির জন্য সরকার বহুবিধ পদক্ষেপ নিচ্ছে। এমনই একটি অন্যতম প্রধান পদক্ষেপ শ্রমিক-কর্মচারীদের দৈনিক কাজের সময় বাড়ানোর আইনি ব্যবস্থা।
দেবেন্দ্র ফড়নবিশের নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোট সরকার নানা সমস্যায় জর্জরিত। তার মধ্যে অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো অর্থনীতির ক্ষেত্রে হতোদ্যম অবস্থা। দীর্ঘদিন ধরেই অর্থনীতির গতি থমকে আছে। নতুন বিনিয়োগ নেই, নতুন শিল্প প্রকল্প নেই। ফলে নতুন কর্মসংস্থান নেই। আবার মানুষের রোজগার বাড়ছে না বলে বাজারে চাহিদাও বাড়ছে না। স্বাভাবিকভাবেই অকারণে নতুন বিনিয়োগের ঝুঁকি কেউ নিচ্ছে না। তাছাড়া ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংস্থার যে পরিমাণ উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে তারই পুরোটা ব্যবহার করা যাচ্ছে না চাহিদার অভাবে। এই অবস্থায় কোনও আহাম্মক ছাড়া নতুন বিনিয়োগ কেউ করবে না। সমস্যাটা অবশ্য শুধু মহারাষ্ট্রের নয়, গোটা দেশের সব রাজ্যের। মোদী জমানায় গত এক দশক ধরেই কার্যত বেসরকারি বিনিয়োগে খরা চলছে। অর্থনীতির জ্বালানি আসছে মূলত সরকারি বিনিয়োগ থেকে। এই সরকারি বিনিয়োগ না থাকলে অনেক আগেই অর্থনীতি ধসে পড়ত। এই সরকারি বিনিয়োগের রসদও আসছে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে। তেল, গ্যাস সহ পেট্রোপণ্যের উপর অতি উচ্চ হারে কর এবং উচ্চ হারে জিএসটি আদায় করে। কর্পোরেট কর এবং বড়লোকদের কর কমিয়ে দিয়েও বিপুল রাজস্ব সরকার সংগ্রহ করতে পারছে জনগণের পকেট কেটে।
মহারাষ্ট্র সরকার মনে করছে বিনিয়োগের এই খরা কাটানোর উপায় হলো শ্রমিকদের কাজের ঘণ্টা বাড়িয়ে দিয়ে মালিক  বা বিনিয়োগকারীদের খুশি করা। শ্রমিকদের বে‍‌শি সময় ধরে খাটানো গেলে অর্থাৎ অনেক বেশি শ্রম নিঙড়ে নিতে পারলে অনেক বেশি উৎপাদন হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়বে এবং উদ্বৃত্ত শ্রম বাড়বে। অর্থাৎ মুনাফার বহর অনেকটা বেড়ে যাবে। ফড়নবিশের মস্তিষ্কে এমন সরল অঙ্ক সহজে খেলে গেছে। কিন্তু মুশকিল হলো কেউ তাঁদের বোঝায়নি শ্রমিকদের বেশি খাটিয়ে বেশি উৎপাদন করলেই বাজারে চাহিদা বা বিক্রি বাড়ে না। যদি সেটা না হয় তাহলে কোনও বিনিয়োগকারী নতুন বিনিয়োগ করে বেশি উৎপাদন করবে কেন? কম মজুরি দিয়ে শ্রমিকদের বেশি খাটিয়ে বেশি উৎপাদন করা যায় বটে কিন্তু সেটা যদি বিক্রি না হয় তবে মুনাফা আসবে কোথা থেকে? তাই কাজের সময় বাড়ালে মালিকরা শ্রমিক কমিয়ে উৎপাদন একই রাখবে বাজারে চাহিদা অনুযায়ী। তাতে মালিকের মুনাফা বৃদ্ধি নিশ্চিত হলেও নতুন বিনিয়োগ হবে না। মনে রাখা দরকার উৎপাদন বাড়ালে বাজারে বিক্রি বাড়ে না। বাজারে চাহিদা বাড়লে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়লে তবেই উৎপাদন বৃদ্ধি, নতুন বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হয়। কাজের সময় বাড়লে শ্রমিকের শোষণ বাড়ে, মালিকের মুনাফা বাড়ে কিন্তু অর্থনীতি বাড়ে না।

মন্তব্যসমূহ :0

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন