কোনও ডাবল ইঞ্জিনে পরিচালিত রাজ্য নয়, সিপিআই(এম)’র নেতৃত্বে বামপন্থীদের পরিচালিত কেরালা দেশের মধ্যে একমাত্র এবং প্রথম রাজ্য যেখানে অতি দরিদ্র বা চরম দরিদ্র নির্মূল হয়ে গেছে। গোটা রাজ্যের কোনও পৌরসভার কোনও ওয়ার্ডে এবং কোনও পঞ্চায়েতের কোনও গ্রামে একটি পরিবার পাওয়া যাবে না যে পরিবারকে চরম দরিদ্র বলা যাবে। ২০২১ সালে নির্বাচনে জিতে দ্বিতীয়বারের জন্য সরকার গঠন করে বামপন্থী সরকার রাজ্যবাসীকে কথা দিয়েছিল আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে রাজ্য থেকে চরম দারিদ্রকে বিদায় জানানো হবে। সরকার কথা রেখেছে। আগামী ১ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে কেরালাকে চরম দারিদ্রমুক্ত প্রথম এবং একমাত্র রাজ্য হিসাবে ঘোষণা। এমন অনন্য গৌরব শুধু কেরালাবাসীর নয়, গোটা দেশের। বিশ্বের সামনে গর্ব করে বলার মতো এই সাফল্য উপহার দিয়েছে বামপন্থীরা।
অতি সীমিত পরিসরে গুটিকতক নমুনা সমীক্ষা করে একটা পরিসংখ্যান হাজির করে আপন কীর্তি খোদাই করার কোনও বাসনা এটা নয়। অথবা মনগড়া আজগুবি কিছু তথ্য হাজির করেও এই সাফল্য আসেনি। গত পাঁচ বছর ধরে বহুস্তরীয় অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় প্রতিটি গ্রাম এবং পৌর ওয়ার্ডে ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়ে অতি দরিদ্র পরিবারগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারপর তাদের সমস্যা ও চাহিদাকে নিবিড়ভাবে যাচাই করে প্রকল্প নির্ধারণ করা হয়েছে এবং সেই প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি চরম দরিদ্র পরিবার যুক্ত করে তাদের দারিদ্র দূর করা হয়েছে।
সরকার এই কাজ করে দু’টি পর্বে প্রথমে অতি দরিদ্র পরিবার খুঁজে বার করা হয়। তারপর তাদের নির্দিষ্ট পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে দারিদ্র অপসারণ করা হয়। না কিছু অনুদান প্রকল্পের মাধ্যমে টাকা দিয়ে দারিদ্র মুক্তি নয়। চারটি মৌলিক অধিকার পরিবারগুলির জন্য নিশ্চিত করা হয়েছে। যেমন খাদ্য, স্বাস্থ্য, কাজ বা রুজি এবং বাসস্থান। আধার কার্ড, রেশন কার্ড, প্রতিবন্ধীদের ইউডিআইডি কার্ড, ভোটার কার্ড নিশ্চিত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিমা ও সামাজিক সুরক্ষা পেনশন নিশ্চিত করা হয়েছে।
পঞ্চায়েত ও পৌরসভা, আশা ও অঙ্গনওয়ার্ডি কর্মী, কেরালার নিজস্ব কুদুম্বশ্রী প্রকল্প কর্মী সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ১৪ লক্ষ লোক যুক্ত হন অতি দরিদ্র খোঁজার কাজে। একবার নয় বার বার। এভাবে ৬৪ হাজার পরিবারের ১০ লক্ষ ৩ হাজার অতি দরিদ্র মানুষের সন্ধান মেলে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ভিন্ন ভিন্ন আর্থ-সামাজিক, ভৌগোলিক পরিস্থিতিতে দরিদ্র পরিবারগুলির সমস্যা নানা ধরনের। প্রত্যেকটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তাদের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের উপায় নির্ধারিত হয়েছে। সব কাজ করে দিয়েছি, এক কোটি চাকরি দিয়েছি ইত্যাদি প্রলাপ বকে এমন কাজ করা যায় না। সকাল-বিকাল আত্মপ্রচারে বিকারগ্রস্ত হলেও একাজ করা যায় না। ডাবল ইঞ্জিনের সরকারগুলির উচিত বামপন্থীদের কেরালা থেকে কিছু অন্তত শেখা।
editorial
কেরালার অনন্য সাফল্য

×
Comments :0