SIR

আধার নিতেই হবে

সম্পাদকীয় বিভাগ

আর পরামর্শ বা সুপারিশ নয়, একেবারে নির্দেশ দিয়েই দেশের সর্বোচ্চ আদালত নির্বাচন কমিশনকে স্পষ্ট করে দিয়েছে বিহারে ভোটার তালিকায় যে নিবিড় সংশোধন চলছে তাতে প্রামাণ্য নথি হিসাবে আধার কার্ডকেও গ্রহণ করতে হবে। এতদিন পর্যন্ত কমিশন ভোটার তালিকায় নাম থাকার জন্য ১১টি নথিকে প্রামাণ্য দলিল হিসাবে গ্রহণ করত। কিন্তু আধার কার্ডকে প্রামাণ্য দলিল হিসাবে স্বীকৃতি দেয়নি। তাই সর্বোচ্চ আদালতে এই বিষয়ে মামলা হয়। প্রথমে কোর্ট ১১টি নথির সঙ্গে আধারকেও বিবেচনা করতে বলে কমিশনকে। কিন্তু কমিশন সরাসরি কোর্টের পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করে দেয়। যুক্তি হিসাবে হাজির করে আধার কোনোভাবেই নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। পালটা যুক্তি আসে নির্বাচন কমিশনকে নাগরিকত্ব যাচাই করার অধিকার কে দিয়েছে? সেটা তো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাজ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কি নির্বাচন কমিশনকে নাগরিকত্ব যাচাইয়ের ঠিকাদারি দিয়েছে? কার কি কাজ সেটা সংবিধান নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। কারও অনধিকার চর্চার সুযোগ নেই।
কয়েকদিন পর সুপ্রিম কোর্ট ফের কমিশনকে জানিয়ে দেয় কোনও ব্যক্তির পরিচয় এবং বাসস্থানের প্রমাণ হিসাবে আধার ব্যবহার করতে হবে। তারপরও টালবাহানা চলতে থাকে কমিশনের তরফ থেকে। কমিশন কিছুতেই আধারকে মান্যতা দিতে রাজি নয়। তাই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও এই মর্মে কোনও নির্দেশিকা জারি করেনি। ফলে বুথ স্তর থেকে আধিকারিকরা আধার নিতে অস্বীকার করে শুধু মানুষকে হেনস্তা করছে না, একই সঙ্গে আদালতের নির্দেশকেও অমান্য করতে থাকে। এইভাবে চলতে চলতেই ১ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করে দেওয়া হয় খসড়া ভোটার তালিকা। তাতে দেখা যায় ৬৫ লক্ষ নাম বাদ চলে গেছে এক ধাক্কায়। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো যাদের নাম বাদ গেছে তাদের তালিকা কমিশন প্রকাশ করেনি এবং কেন নাম বাদ গেছে সেটাও জানানো হয়নি। অর্থাৎ আশঙ্কা মতোই নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া চলছে সম্পূর্ণ অস্বচ্ছভাবে। একটা বিপুল সংখ্যক নাগরিকের ভোটাধিকার কেড়ে নেবার সচেতন রাজনৈতিক পরিকল্পনা অনুযায়ীই নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছে কমিশন।
খসড়া প্রকাশের পর বাদ যাওয়ারা ফের আবেদন করার ক্ষেত্রে যাতে অসহায় অবস্থায় না পড়েন তাই সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয় আবেদনের সঙ্গে আধার দিলেই তা গ্রহণ করতে হবে কমিশনকে। তারপরও যথারীতি চলতে থাকে টালবাহানা। কোর্টের নির্দেশকে এড়িয়ে নানা ফন্দি ফিকির করে বাতিলদের ফের আবেদনের রাস্তা যথাসম্ভব বন্ধ করার চেষ্টা চলে। এই অবস্থায় সর্বশেষ কোর্ট স্পষ্ট নির্দেশ দেয় আধার নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। তবে পরিচয় ও বসবাসের প্রমাণ। তাই আধার গ্রহণযোগ্য। কমিশনকে তাদের চিহ্নিত ১১টি নথির সঙ্গে আধারকেও নথি হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। আধার জাল কিনা সেটা যাচাইয়ের অধিকার অবশ্যই থাকবে। বিহারে ৯৪ শতাংশ মানুষের আধার আছে। ফলে দুর্লভ ও দুষ্প্রাপ্য নথি জোগাড় সাধারণ মানুষের পক্ষে জোগাড় করা কঠিন হলেও আধার ব্যবহার করে ভোটাধিকার রক্ষা করার সুযোগ পাবেন। নাগরিকত্ব যাচাইয়ের কাজ যখন কমিশনের নয় তখন আধার দেখে পরিচয় ও বসবাসের নথি যাচাই করে নিলেই কাজ হয়ে যাবে। অযথা হয়রানি বন্ধ হবে।

মন্তব্যসমূহ :0

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন