STORY — SOURISH MISHRA — SUMAN & SHIBSHANKAR UNCEL — NATUNPATA | 2 AUGHST 2025, 3rd YEAR

গল্প — সৌরীশ মিশ্র — সুমন আর ওর শিবশঙ্কর আংকেল — নতুনপাতা, ২ আগস্ট ২০২৫, বর্ষ ৩

ছোটদের বিভাগ

STORY  SOURISH MISHRA  SUMAN  SHIBSHANKAR UNCEL  NATUNPATA  2 AUGHST 2025 3rd YEAR

গল্পনতুনপাতা

সুমন আর ওর শিবশঙ্কর আংকেল
সৌরীশ মিশ্র

এগারো-বছরের সুমন ওদের ফ্ল্যাটের ড্রইং রুমে সোফায় বসে ল্যান্ডলাইন ফোনে কথা বলছিল ওর ক্লাস-ফ্রেন্ড অর্কর সাথে। দু'দিন বাদে ওদের একটা হিস্ট্রি প্রোজেক্ট সাবমিট করতে হবে স্কুলে, ঐ নিয়েই কথা বলছিল দু'জন। তখুনি বেজে উঠেছিল সুমনদের ফ্ল্যাটের কলিংবেলটা।
"অর্ক, আমি এখন রাখছি রে, কে যেন এল। বাড়িতে আর কেউ নেই তো। দেখি গিয়ে, কে এল।" বলে ফোনের লাইনটা কাটে সুমন। তারপর সে দ্রুত পা বাড়ায় ফ্ল্যাটের মেন দরজার দিকে।

যেমন বন্ধুকে বলল সুমন, ওদের বাড়িতে সুমন একাই আছে এখন। ওর বাবা আর মা একটা দরকারি কাজে গেছে ব্যাংকে। তবে, ওনারা গেছেন অনেকক্ষণই। সেই বারোটা নাগাদ। আর এখন তো দুপুর তিনটে বাজতে যায়। তার মানে তাঁদেরও আসার সময় হয়ে গেছে।
তবে, ওর বাবা-মা যে কলিংবেলটা টেপেনি সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না সুমনের। অন্য কেউ এসেছে। কারণ, বাবা-মার কাছে তো ফ্ল্যাটে ঢোকার ডুপ্লিকেট চাবি আছে। তবে ওরা কলিংবেল খামোখা বাজাতে যাবে কেন!

মেন দরজার কাছে এসে পৌঁছল সুমন। কে এসছে দেখার জন্য সে চোখ রাখল দরজার ডোর-ভিউয়ারে। আর তাতেই দেখতে পেল বন্ধ দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে আছে শিবশঙ্কর আংকেল।
সুমনের এই শিবশঙ্কর আংকেল অর্থাৎ শিবশঙ্কর প্রসাদ গ্যাস সিলিন্ডার ডেলিভারি দেওয়ার কাজ করেন এই এলাকাতে। সুমনদের বাড়িতে বহু বছর ধরে উনিই ডেলিভারি দিয়ে আসছেন গ্যাস সিলিন্ডার। বছর পঞ্চাশেক বয়স শিবশঙ্করের। বিহারের মানুষ হলেও যেহেতু প্রায় চার দশকেরও বেশি সময় ধরে আছেন এই বাংলায়, পরিস্কার বাংলা বলেন।

যাই হোক, শিবশঙ্কর আংকেল এসছে দেখে কাঠের দরজাটা খুলতে উদ্যত হয় সুমন। সুমনের বাবা-মা ওকে বলেই গেছিলেন, গ্যাস আসতে পারে। তাই টাকাও রেখে গেছেন তাঁরা।
দরজার পাল্লাটা খুলে সুমন শিবশঙ্করকে বলে, "আসো আংকেল।"
গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে ফ্ল্যাটের ভিতরে ঢুকে শিবশঙ্কর সোজা পা বাড়ান কিচেনের দিকে। এতোবার এসেছেন এই ফ্ল্যাটে যে এখন আর কিচেনটা কোনদিকে সেটা তাঁকে আর কাউকে দেখিয়ে দিতে হয় না। আর সেই ফাঁকে সুমন এক ছুটে বেডরুম থেকে নিয়ে আসে গ্যাসের টাকা আর গ্যাসের বইটা।
মিনিট খানেকের মধ্যেই সিলিন্ডার ঠিক আছে কি না সব চেক করে খালি সিলিন্ডার নিয়ে ফের ফ্ল্যাটের মেন দরজার সামনে এসে দাঁড়ালেন শিবশঙ্কর। সুমন টাকাটা আর বইটা এগিয়ে দেয় শিবশঙ্করের দিকে। সুমনকেও সই করতে হয় একটা ছোট্ট কাগজে। এইসব কাজকর্ম চলছে যখন টুকটাক কথাও চলতে থাকে দু'জনের মধ্যে।
তখুনি, শিবশঙ্কর বলে ওঠেন, "খোকাবাবু, একটু জল খাওয়াতে পারো? খুব পিপাসা লেগেছে।"
ঐ ঘরেতেই ছিল ডাইনিং টেবিল। সেখান থেকেই একটা কাঁচের গ্লাস নিয়ে, তাতে টেবিলে রাখা কাঁচের জগটা থেকে জল ভরে চটপট সুমন। তারপর টেবিল থেকে একটা ছোটো প্লেট নিয়ে তাতে পাশের ঢাকনা দেওয়া বোলটা থেকে দুটো মিষ্টি রাখে সে। তারপর, বলে সুমন শিবশঙ্করকে, "আংকেল, এই নাও।"
শিবশঙ্কর সুমন মিষ্টি দিয়েছে দেখে তাড়াতাড়ি বলে ওঠেন, "না না, মিষ্টি আবার দিচ্ছ কেন? শুধু জল দাও।"
"মা বলে, কাউকে শুধু জল দিতে নেই কক্ষনো।" বলে ওঠে সুমন। "তুমি মিষ্টি দুটো খাও আংকেল। আগে আসো, হাতটা ধুয়ে যাও বেসিনে।"
সুমনের আন্তরিক অনুরোধ হৃদয় ছুঁয়ে যায় শিবশঙ্করের। গ্যাস ডেলিভারি দিতে এসে কারো বাড়িতে তাঁর এইরকম অভিজ্ঞতা এই প্রথম। চোখের কোনে জল চিকচিক করে ওঠে তাঁর।
ছোট্ট সুমন খেয়াল করে না তার শিবশঙ্কর আংকেলের চোখে জল। শিবশঙ্কর কি যেন ভাবছে দেখে সে বলে ওঠে, " কি ভাবছো আংকেল? খাবে না?"
শিবশঙ্কর বলে ওঠেন সাথে সাথে, "হ্যাঁ গো খোকাবাবু, নিশ্চয়ই খাব। তুমি এতো ভালোবেসে আমায় দিচ্ছ, আর আমি খাব না! এ কি হতে পারে?"
"তাহলে চলো, হাত ধুয়ে নাও আগে।"
"হ্যাঁ চলো।" 
সুমনের পিছন পিছন যেতে থাকেন শিবশঙ্কর। যেতে যেতে মনে মনে প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করতে থাকলেন তিনি ছোট্ট সুমনকে।

Comments :0

Login to leave a comment