editorial

প্রচারের তোড়ে সত্য আড়াল

সম্পাদকীয় বিভাগ

ভারত কেন রাশিয়া থেকে কম দামে তেল কিনে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধে অর্থের জোগান দিচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প বে‍‌শিরভাগ ভারতীয় পণ্যের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক লাগু করেছেন। সেই সূত্রে প্রবল রাগবশত এক যোগে রাশিয়া ও ভারতের অর্থনীতিকে মৃত অর্থনীতি বলে দেগে দিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই মোদী বাহিনী তাতে বেজায় ক্ষুব্ধ। পাকিস্তান বা চীনের দিক থেকে এমন মন্তব্য এলে সহজেই এড়িয়ে যাওয়া বা উড়িয়ে দেওয়া যেত। কিন্তু এভাবে ভারতের অর্থনীতিকে অবজ্ঞা করেছেন খোদ মোদীর বন্ধু ট্রাম্প। এটা কোনোমতেই হজম করা যাচ্ছে না। তাই একযোগে মোদী বাহিনী আসরে নেমেছেন ভারতের অর্থনীতিকে শক্তিশালী, চনমনে, গতিশীল হিসাবে জাহির করতে।
দে‍‌শে ও বিদেশে অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ মহল থেকে ভারতের অর্থনীতি নিয়ে নানা সমালোচনা হামেশাই শোনা যায়। বস্তুত মোদী সরকার অর্থনীতির হাল হকিকত নিয়ে যেসব উচ্চকিত দাবি করে থাকেন তার সঙ্গে অনেক অর্থনীতিবিদই একমত নন। আর দেশে বিরোধীরা তো অনর্গল অর্থনীতি নিয়ে সরকারকে কাঠগড়ায় তুলে চলেন। কিন্তু তাই বলে ট্রাম্প এভাবে বন্ধু মোদীর সাফল্যকে নস্যাৎ করে দেবে! মোদীরা সেটা মানতে পারছেন না।
প্রথমে মন্ত্রীরা এবং সরকারি সংস্থার পদাধিকারীরা শেয়ার সূচক সহ অর্থনীতি মাপার অন্যান্য কিছু সূচক তুলে ধরে বোঝানোর চেষ্টা করেন অর্থনীতির মূল ভিত্তি ও কাঠামো শক্তিশালীই আছে। তাই আশঙ্কার কোনও কারণ নেই। দু’দিন আগে চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকের (এপ্রিল-জুন) বৃদ্ধির হার প্রকাশের পর মোদীবাহিনী উদ্বাহু নৃত্য করে বলতে শুরু করেছে প্রত্যাশার চেয়েও ভালোভাবে এগোচ্ছে অর্থনীতি। সরকারি প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী প্রথম ত্রৈমাসিকের বৃদ্ধির হার ৭.৮ শতাংশ। তাদের ধারণা উৎসবের মরশুমে চাহিদা বেড়ে গেলে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকেও দারুণ বৃদ্ধি হবে। অর্থাৎ ট্রাম্পের বদনামের মুখের মতো জবাব পাওয়া যাচ্ছে। আবার স্বয়ং মোদী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা এবং সরকারি পদাধিকারীরা অর্থনীতি কতটা শক্তিশালী এবং কত দ্রুত বিকশিত হচ্ছে তা বোঝানোর জন্য প্রচার করে থাকেন। ভারত একের পর এক উন্নত অর্থনীতি পেছনে ফেলে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি হয়েছে। দু’-এক বছরের মধ্যেই তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে যাবে। এটাও প্রচার করে থাকেন ভারত বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চ হারে বৃদ্ধির অর্থনীতি।
শুনতে বেশ ভালো লাগে। ভক্তরা পু‍‌লকিত হন। কিন্তু এসব প্রচার সত্যিই কি অর্থনীতির বাস্তব অবস্থাকে তুলে ধরে? যদি তাই হতো তাহলে জাপানকে পেছনে ফেলে চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির শিরোপা পাওয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে জাপানে গিয়ে জাপানের লগ্নির জন্য হত্যে দিতে হতো না। জাপানের সাহায্য ছাড়া ভারতে বুলেট ট্রেন চলবে না। জাপানের প্রযুক্তির জন্য অপেক্ষা করতে হতো না। আয়তনে এগিয়ে থাকা ভারত তাকিয়ে আছে জাপানের দিকে। জাপান কিন্তু ভারতের পুঁজি চায় না, প্রযুক্তিও চায় না। কারণ এর সব কিছুতেই জাপান ভারত থেকে ৫০ বছর এগিয়ে। বেকার জাপানিরা ভারতে কাজের সন্ধান করে না। বেকার ভারতীয়রাই জাপানে কাজের জন্য ছোটে। জিডিপি’র হার বা পরিমাণ কোনও দে‍‌শের উন্নতির প্রধান মাপকাঠি নয়। প্রধান হলো কর্মসংস্থান, মজুরি, মাথা পিছু আয়, বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে অগ্রগতি, শিক্ষায়, স্বাস্থ্যে অগ্রগতি, বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদনে অগ্রগতি। এসবের কোনও কিছুতেই ভারত ভালো জায়গায় নেই। তাই ট্রাম্পের শুল্ক হুমকিতে নেতিয়ে পড়ে, রুখে দাঁড়াতে পারে না।

Comments :0

Login to leave a comment