পশ্চিমবঙ্গ সহ গোটা রাজ্যে এসআইআর ঘোষণা করলো জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সোমবার দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে পশ্চিমবঙ্গ সহ ১২টি রাজ্যে এসআইআরের ঘোষণা করলেন মুখ্যনির্বাচনী আধিকারিক জ্ঞানেশ কুমার, নির্বাচন কমিশানার সুখবীর সিং সান্ধু, বিবেক যোশী। জ্ঞানেশ কুমার বলেন, ‘বিহারে সফল ভাবে এসআইআরের কাজ হয়েছে। দেশের ২৬টা রাজ্যে এসআইআরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রাজ্য নির্বাচন কমিশনারদের সাথে আলোচনার পর। এসআইআরের মূল উদ্দেশ্য যোগ্য ভোটারদের নাম তালিকায় ভোটার তালিকায় রাখা এবং অযোগ্য ভোটারদের তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া। বিহারে সাড়ে সাত কোটি ভোটার এসআইআরে অংশ নিয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে ১২ রাজ্য এই এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে।’ নথি হিসাবে আধার কার্ড নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কমিশন।
তিনি বলেন, বিহারে এসআইআর নিয়ে কোন অভিযোগ সামনে আসেনি। মুখ্যনির্বাচন কমিশনারের কথায়, ‘আট বার ইআর (intensive revision) হয়েছে। শেষ বার ২০০২ সালে এই কাজ হয়েছে। বহু ভোটারের নাম দুই জায়গায় রয়ে গিয়েছে, মৃতদের নাম তালিকা থেকে বাদ যায়নি, বিদেশি নাগরিকের নাম ভুলবশত অনেক জায়গায় তালিকা ভুক্ত হয়েছে। এই সব নাম বাদ দেওয়ার জন্য এসআইআর।’ তিনি জানান আন্দামান, ছত্তিশগড়, গুজরাট, কেরল, গোয়া, লাক্ষ্মাদ্বীপ, মধ্য প্রদেশ, পুদুচেরি, রাজস্থান, তামিলনাডু, উত্তর প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ- এই ১২ রাজ্যে। ৭ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হবে এই ১২ রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে। উল্লেখ্য আসামে সামনে ভোট হলেও এসআইআর হচ্ছে না।
কমিশনের কথায়, ‘বাড়ি বাড়ি বিএলওরা এনুমারেশন ফর্ম পৌঁছে দেবে। আজ রাত ১২টার পর ভোটার তালিকা ফ্রিজ করে দেওয়া হবে। যাদের নাম ২০০৩ – ২০০৪ এ প্রকাশিত ভোটার তালিকায় আছে তাদের কোন নথি দিতে হবে না। সেই সময় যাদের নাম ছিল না তার বাবা বা মায়ের নাম যদি সেই তালিকায় থাকে তবে তাকেও আর কোন আলাদা নথি দিতে হবে না। বিএলও তিনবার একটি বাড়িতে যাবেন এই কাজের জন্য। যারা রাজ্যের বাইরে থাকেন তারা অনলাইনেও ফর্মপূরণ করতে পারবেন।’
নভেম্বর মাস থেকে এরাজ্যে শুরু হবে এসআইআর চলবে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত। সূত্রের খবর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে রাজ্যে নির্বাচন ঘোষণা হতে পারে। কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে গোটা দেশেই ধাপে ধাপে চালু হবে এসআইআর।
কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে দুই ধাপে হবে এসআইআর। প্রথম ধাপে বিহারের পর দ্বিতীয় ধাপে পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, কেরালা এবং পুদুচেরিতে এসআইআর হবে। তৃতীয় ধাপে বাকি সাতটা রাজ্যে হবে। পাহাড়ি রাজ্য গুলোয় এখনই এসআইআর হবে না বলে জানা গিয়েছে।
২০০২'র ভোটার তালিকার সঙ্গে ২০২৫'র তালিকা মেলানোর কাজ রাজ্যে প্রায় শেষ। কমিশন সূত্রে এমনই দাবি জানানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে যে দুই তালিকায় নামে মিল বা 'ম্যাচিং' রয়েছে ৫২ শতাংশের।
নভেম্বরেই এসআইআর তিন পর্যায়ের প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রথম পর্বে বিএলও-দের মাধ্যমে ফর্মে নাম তোলার কাজ চলবে ৩০-৩৫ দিন। এর পর দু’দফায় খসড়া তালিকা এবং চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।
রাজ্যে মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দপ্তর সূত্রে খবর, পশ্চিমবঙ্গের মোট ভোটারের ৫২ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ৩.৭ কোটি ভোটারের নাম ২০০২-র ভোটার তালিকায় রয়েছে। ২০২৫’র জানুয়ারিতে শেষ যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে তার ৪৮ শতাংশ, অর্থাৎ ৩.৫ কোটি ভোটারের নাম সেই পুরনো তালিকার বাইরে। উল্লেখ্য রাজ্যে ২০০২ সালেই শেষ ‘নিবিড় সংশোধন’ বা ‘আইআর’ হয়েছিল। কিন্তু সেবার কাউকে ফর্ম ভরতে হয়নি, নথিও চাওয়া হয়নি। বিএলও-রা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাম খোঁজ করে দেখেছিলেন।
এসআইআর-এ প্রত্যেককে ফর্ম ভরতে বলা হয়েছিল বিহারে। কিন্তু ফর্ম জমার পর রসিদ কাউকে দেওয়া হয়নি। সুপ্রিম কোর্টেও সে বিষয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে। রাজ্যের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা চালু হবে কিনা স্পষ্ট নয়।
উল্লেখ্য, দুই তালিকার ব্যবধান মানে প্রায় তেইশ বছরে বহু মানুষ যেমন মারা গিয়েছেন তেমনি স্বাভাবিক নিয়মেই বহু নাম যুক্ত হয়েছে। অনেকে নিজের বাসস্থান পরিবর্তন করেছেন।
সিইও দপ্তরের সূত্র জানাচ্ছে, এসআইআর কাজ কেবল বাকি রয়েছে জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং জেলায়। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে এই কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। এই দুই জেলায় প্রায় ৪০ লক্ষ ভোটদাতা রয়েছেন।
উল্লেখ্য, বিহারে ২০০২’র তালিকার তুলনায় নতুন নামের সংখ্যা ছিল প্রায় ২ কোটি। পশ্চিমবঙ্গে সেই সংখ্যা ৩.৫ কোটি।
SIR West Bengal
আজ রাত থেকে ফ্রিজ ভোটার তালিকা, ১২ রাজ্যে কাল থেকে শুরু এসআইআর বললো কমিশন
×
Comments :0