editorial

অবহেলায় কৃষি

সম্পাদকীয় বিভাগ

একদিকে ফসলের লাভজনক দাম না পাওয়া, চাষের যাবতীয় উপকরণের দাম ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে যাওয়া, অন্যদিকে মাথার ঋণের বোঝা অসহনীয়ভাবে বেড়ে যাওয়া। তার উপর এবার দেখা দিয়েছে সারের ভয়াবহ আকাল। সরকার নিয়ন্ত্রিত মূল্যে কৃষকদের কাছে সার বিক্রির ব্যবস্থা চালু থাকলেও জোগান এতটাই কম যে কৃষকরা তাদের চাহিদা মতো সার পাচ্ছেন না। সার বিপণন কেন্দ্রে লাইন দিয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে দিনের পর দিন। যখন জমিতে সার দেওয়া জরুরি তখন সার মিলছে না। তখন বাধ্য হয়ে কৃষকদের অতি উচ্চমূল্যে কালো বাজার থেকে সার কিনতে হচ্ছে। এই অবস্থায় দেশজুড়ে কৃষকদের কার্যত মাথায় হাত।
কৃষি প্রধান ভারতে ৭৫ শতাংশ মানুষ কৃষির উপর সরাসরি বা পরোক্ষে নির্ভরশীল হলেও সার উৎপাদন হয় চাহিদার তুলনায় অতি সামান্য। তাই সারের জন্য নির্ভর করতে হয় বিদেশ থেকে আমদানির উপর। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মোদী সরকার নিয়ম করে আত্মনির্ভরতার জ্ঞান বিতরণ করলেও, মেক ইন ইন্ডিয়া স্লোগান দিলেও, ভোকাল ফর লোকাল বলে ঢাক পেটালেও তাতে দেশে সার উৎপাদনের কথা শোনা যায়নি। উলটে রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের সার কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। বন্ধ সার কারখানা চালু করার কোনও চেষ্টা হয়নি। বেসরকারি উদ্যোগেও সার উৎপাদন বৃদ্ধির কোনও তাগিদ লক্ষ্য করা যায়নি। অর্থাৎ মোদী সরকারের আত্মনির্ভরতার মধ্যে সার শিল্পের কোনও জায়গা হয়নি। অথচ সার কৃষি উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপকরণ। যে কৃষি ১৪৫ কোটি ভারতীয় অন্ন জোগায়, ১০০ কোটি মানুষের রুজির ব্যবস্থা করে, আজও দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের শীর্ষে থাকে যে কৃষি পণ্য তার উৎপাদন বৃদ্ধি ও গুণমান বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সারের জোগানে উন্নত ভারতের স্বপ্নের ফেরিওয়ালারা পুরোপুরি উদাসীন।
ইউরিয়া, ডিএপি সহ প্রায় সব সারই ভারত বিপুল পরিমাণে আমদানি করে। আবার এই আমদানির সিংহভাগ আসে চীন থেকে। গত চার পাঁচ বছর চীনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির ফলে বাণিজ্য ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের তরফ থেকেই নানা বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ফলে চীন থেকে পর্যাপ্ত সার আমদানি থমকে গেছে। এদিকে গত বেশ কয়েক বছর পর্যাপ্ত ও নিয়মিত বর্ষার ফলে চাষের এলাকা অনেক বেড়ে গেছে। তাতে সারের চাহিদাও বেড়েছে অনেক। অর্থাৎ সারের চাহিদা বেড়েছে আবার জোগান কমে গেছে। গুরুতর সঙ্কটের মধ্যে চাষ করছেন কৃষকরা গত কয়েক বছর ধরে। এর মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদে জরুরি ছিল দেশের মধ্যে সার উৎপাদন বাড়ানো যাতে আমদানি নির্ভরতা কমে। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক দ্রুত স্বাভাবিক করা যাতে সার আমদানিতে বাধা দূর হয়। এছাড়াও আগাম পরিকল্পনা করে সরকারের উচিত ছিল অন্যান্য দেশ থেকে সারা আমদানির ব্যবস্থা করা। অথচ কিছুই করেনি। কৃষি সরকারের অগ্রাধিকারেই নেই। অথচ এই কৃষি দেশের অর্ধেক পরিবারের জীবন-জীবিকার উৎস। কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন, তার বিপণনে যুক্ত লক্ষ লক্ষ মানুষ। বড়সড় পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা আসে কৃষিপণ্য রপ্তানি থেকে। আজও কৃষিই ভারতের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। কৃষিকেক অবহেলা করে সঙ্কট তৈরি করা মানে দেশের সিংহভাগ মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধ।

Comments :0

Login to leave a comment