‘চিহ্নিত অযোগ্য, দাগিদের তালিকায় এত কম নাম কেন?’ সোমবার সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মার বেঞ্চের প্রশ্নের মুখে পড়ল কমিশন। ‘দাগিদের নামের তালিকা এত কম কেন?’ প্রশ্ন তুলল দেশের সর্বোচ্চ আদালতও।
২০১৬’র এসএসসি’র শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় সুপ্রিম কোর্টের কড়া অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার রাত আটটা নাগাদ অবশেষ চিহ্নিত দাগি, অযোগ্যদের তালিকা ‘পাবলিক ডোমেনে’ প্রকাশ করে কমিশন। তালিকায় প্রথমে ছিল ১৮০৪জনের নাম। শুধু রোল নম্বর ও নাম রয়েছে তালিকায়। কোনও জেলা, কোন স্কুলে তাঁরা এতদিন অবৈধভাবে শিক্ষকতা করলেন তার কোনও উল্লেখ নেই। এমনকি রাতে একটার পরে সেই তালিকা আবার বেড়ে যায়। যুক্ত হয় আরও দুটি নাম ও রোল নম্বর। এই তালিকা সামনে আসার পরেই নানান মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, সংখ্যা এত কম কেন? এর আগে হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক শুনানিতে যে সংখ্যার কথা জানা ছিল তার অর্ধেকেরও কম না রয়েছে কমিশনের এই তালিকা। দাগিদের এই তালিকাতেও অস্বচ্ছ্তা রয়েছে, অসম্পূর্ণ তালিকা-অভিযোগ তোলেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।
সোমবার মামলার শুনানিতে সেই প্রশ্ন তুলল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এমনকি, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং সতীশচন্দ্র শর্মার বেঞ্চ কমিশনের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন— ‘সিবিআই’র তালিকায় তো আরও বেশি নাম ছিল। এখানে এত কম কেন? সব দাগিদের নাম কী তালিকায় রয়েছে?’
কমিশনের তরফে আইনজীবী এই প্রশ্নবাণের মুখে এদিন এজলাসে জানান-শীর্ষ আদালত যা নির্দেশ দিয়েছিল, সেটা মেনেই তালিকা প্রকাশ হয়েছে। শীর্ষ আদালত জানতে চায়-সব দাগিদের বাদ দেওয়া হয়েছে তো? জবাবে এসএসসি’র আইনজীবী বলেন, ‘হ্যাঁ, বাদ দেওয়া হয়েছে।’ সিবিআই’র তালিকার নামের সংখ্যা থেকে এসএসসি’র প্রকাশিত তালিকা আরও বেশি নাম ছিল। এখানে কেন এত কম? এক্ষেত্রে কমিশনের বক্তব্য, সেই তালিকার সবাইকে নিয়োগ করা হয়নি। যারা নিযুক্ত হয়েছিল, এই তালিকায় শুধু তাদের নামই আছে, যারা নিযুক্তদের মধ্যে দাগি। যদিও আদালত বলে, অনেক চিহ্নিত দুর্নীতিগ্রস্তদের নাম তালিকায় নেই। বিষয়টি খতিয়েও দেখতে বলা হয় কমিশনকে।
গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং সতীশচন্দ্র শর্মার বেঞ্চ রাজ্য সরকার এবং এসএসসিকে চরম ভর্ৎসনা করে স্পষ্টভাবে বলেছিল, নতুন নিয়োগ পরীক্ষায় কোনও দাগি প্রার্থীকে বসতে দেওয়া যাবে না। এই পরীক্ষার দিকে সুপ্রিম কোর্ট নিজে নজর রাখবে। দাগি প্রার্থীকে পরীক্ষায় বসালে তার ব্যবস্থা সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই গ্রহণ করবে। এদিনও সুপ্রিম কোর্ট বলে, কোনও অযোগ্য যেন পরীক্ষায় বসতে না পারে, সেদিকে কমিশন যেন লক্ষ্য রাখে। আদালতও নজর রাখছে। তখন কমিশনের তরফে সাফাই দেওয়া হয়, কমিশন সেদিকে নজর রাখছে যাতে দাগিরা পরীক্ষায় না বসে। এর আগেই সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, নিয়োগের নতুন পরীক্ষায় কোনও চিহ্নিত অযোগ্য প্রার্থী বসতে পারবে না। এ বিষয়ে এসএসসি’কে খেয়াল রাখতে হবে। যারা এখন স্কুলে পড়াচ্ছেন এমন যোগ্যরা দু’টি পরীক্ষায় বসতে পারেন।
তবে এসএসসি’ র প্রকাশিত দাগীদের তালিকায় সংখ্যা কম নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় কমিশনের অস্বস্তি আরো বেড়েছে। ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, সিবিআই এর আগে যে তালিকা দিয়েছিল বিস্তারিতভাবে, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ ভাগ ভাগ করে সেই তালিকার অযোগ্য, দাগিদের সংখ্যার সঙ্গে কোনও মিল নেই। শুধু তাই নয়, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশে প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ নিয়োগপ্রার্থীর তালিকা এবং সুপারিশের থেকেই বেশি সংখ্যায় নিয়োগের যে অভিযোগ ছিল সেই সংখ্যার কোনও উল্লেখ নেই। তাহলে তাঁদের নাম কোথায় মিশে আছে। পরিকল্পিতভাবেই কী এই ত্রুটিপূর্ণ তালিকা?
এদিকে, এরই মধ্যে আবার এসএসসি’র তালিকায় থাকা দাগী’দের একাংশ সোমবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন। তাঁদের দাবি, তাঁদের কেন দাগি বলা হচ্ছে তা নাকি তাঁরা বুঝতে পারছেন না। তাঁদের নতুন করে পরীক্ষায় বসার অ্যাডমিট কার্ডও বাতিল হয়েছে আদালতের নির্দেশেই। শাসক তৃণমূলের নেতা, জনপ্রতিনিধি থেকে ঘনিষ্ঠরা, আত্মীয়রাও রয়েছে দাগিদের তালিকায়। তাঁদের তৎপরতাতেই এবার হাইকোর্ট গেল দাগিদের একাংশ। তালিকা চ্যালেঞ্জ করেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। আবেদনে জরুরি মামলার অনুমতি দিলেন বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য। মঙ্গলবার সব মামলার একযোগে শুনানি। জানালেন বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য।
Recruitment Scam
‘দাগিদের তালিকায় এত কম নাম কেন?’ সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখে চাপে এসএসসি

×
Comments :0