Anti war protest

যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে মিছিল কলকাতায়

কলকাতা

 পশ্চিম এশিয়ায় রক্তপাত বন্ধ ও শান্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার পথে নামলেন কলকাতার মানুষ। এদিন সারা ভারত শান্তি ও সংহতি সংস্থার (এআইপিএসও) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির ডাকে ধর্মতলার লেনিন মূর্তির সামনে থেকে এন্টালি মার্কেট পর্যন্ত মিছিল হয়। মিছিল শেষে এন্টালি মার্কেটের সামনে সংক্ষিপ্ত সভায় শান্তি আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, হামাস ও ইজরায়েলের মধ্যে সংঘর্ষে বহু মানুষের মৃত্যুতে সারা বিশ্বের সঙ্গে তাঁরাও উদ্বিগ্ন। অবিলম্বে এই সংঘর্ষ বন্ধ করে রাষ্ট্রসঙ্ঘের নির্দেশিত দুই-রাষ্ট্র নীতি কার্যকর করা হোক।  
এদিন শান্তির দাবিতে মিছিল থেকে আগ্রাসী ইজরায়েলকে মদত দেওয়ার জন্য মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নিন্দা করা হয় এবং যুদ্ধ বন্ধে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরিতে ভারত সরকারেরও ভূমিকার দাবি জানানো হয়। এআইপিএসও নেতৃবৃন্দ বলেছেন, যাবতীয় সমস্যার সূত্রপাত ইজরায়েলের বর্ণবিদ্বেষী জায়নবাদী রাজনীতির জন্য। ভারত সরকারের উচিত নয় তাদের সমর্থনে দাঁড়ানো। ভারতের স্বাধীন বৈদেশিক নীতির পরম্পরার সঙ্গেও তা সাযুজ্যপূর্ণ নয়। 
এন্টালি মার্কেটের সামনে সভায় বক্তব্য রাখেন এআইপিএসও’র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও কো-অর্ডিনেটর অঞ্জন বেরা। তিনি বলেন, রাষ্ট্রসঙ্ঘের ১৯৪৭ সালের প্রস্তাবে দুই-রাষ্ট্র নীতির কথা বলা হয়েছিল। সিদ্ধান্ত হয়েছিল, প্যালেস্তাইনের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইন নামে দু’টি পৃথক সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করা হবে। সেই রাষ্ট্র দু’টির সীমাও নির্ধারণ করে দিয়েছিল রাষ্ট্রসঙ্ঘ। কিন্তু ইজরায়েল সেই ফর্মুলা মেনে নেওয়া দূরে থাক, প্যালেস্তাইনের জন্য বরাদ্দ এলাকার ৮০ শতাংশ দখল করেছে। একইসঙ্গে বর্ণবিদ্বেষী জায়নবাদী আদর্শকে মান্যতা দিয়ে তারা বলছে, ইজরায়েল কেবলমাত্র ইহুদি রাষ্ট্র হবে। এই বোঝাপড়া প্যালেস্তাইনের বহুত্ববাদী সমাজ ব্যবস্থার বিরোধী। 
অঞ্জন বেরা আরও বলেছেন, ভারতের বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার নিজেদের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের রাজনীতির সঙ্গে জায়নবাদী বিদ্বেষের মিল খুঁজে পাচ্ছে। তাই জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে নিজেদের রাজনীতির স্বার্থে ইজরায়েলপন্থী পররাষ্ট্র নীতি নিচ্ছে। নরেন্দ্র মোদী বলছেন, ইজরায়েল আক্রান্ত। কিন্তু হামাসের শক্তির সঙ্গে পারমাণবিক শক্তিধর ইজরায়েলের কোনও তুলনা চলে? ইজরায়েল একটি দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র, যাঁরা কোনও আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তি মানে না, তারা সন্ত্রাস মোকাবিলার অজুহাতে গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে। আর ভারত সরকার তাকে সমর্থন করছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। জনমত গঠন করে সরকারকে পিছু হটাতে হবে। 
সভায় এআইপিএসও’র সর্বভারতীয় নেতা রবীন দেব বলেন, গাজায় ইজরায়েল নজিরবিহীন অবরোধ চালাচ্ছে। ৩ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন বলে খবর আসছে। ৮ হাজার ভারতীয় সংঘর্ষে আটকে পড়েছেন। তাঁদের ভারতে ফেরানোর উদ্যোগ নিতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। 
ইজরায়েলের নেতানিয়াহু সরকারের অগণতান্ত্রিক মনোভাব সম্পর্কে রবীন দেব আরও বলেছেন, ওরা বিচারব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছিল। ইজরায়েল জুড়ে এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়। ভারতে নরেন্দ্র মোদী সরকারও সেই পথেই হাঁটছে। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের প্রক্রিয়া থেকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে জেরুজালেমকে ইজরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। আসলে এই ট্রাম্প, নেতানিয়াহু, মোদী, সবাই একই ভাবনার শরিক। একে অন্যের দেখানো পথে হাঁটতে চাইছেন। 
রবীন দেব আরও বলেছেন, একসময় ভারতের বিদেশনীতির মূলে ছিল বর্ণবিদ্বেষী শক্তির বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াই। সেই কারণে বর্ণবৈষম্যবাদী ইজরায়েল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার অস্তিত্বকে কূটনৈতিকভাবে অস্বীকার করেছিল ভারত। বর্তমানে সেই ইজরায়েলের থেকে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র কিনছে ভারত। আর অস্ত্র ব্যবসায় লাভের টাকায় প্যালেস্তিনীয়দের ওপর হামলা চালাচ্ছে ইজরায়েল। এদেশে নিউজক্লিককে ঘিরে মিথ্যা প্রচার চালানো হয়েছে। একই কায়দায় হামাসকে নিয়ে মিথ্যা প্রচার করেছে ইজরায়েল। 
এদিন সভায় প্যালেস্তাইনের কবি রাফিফ জিয়াদা রচিত আরবি কবিতার বাংলা তর্জমা পাঠ করেন কবি মন্দাক্রান্তা সেন। সভা পরিচালনা করেন শিক্ষাবিদ অশোকনাথ বসু। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন প্রবীর দেব, প্রবীর ব্যানার্জি। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক বিনায়ক ভট্টাচার্য, কুণাল বাগচী, কল্যাণ ব্যানার্জি, অশোক গুহ প্রমুখ। এছাড়াও ছিলেন গণআন্দোলনের নেতা পলাশ দাস।
 

Comments :0

Login to leave a comment