editorial

ইহাকে উন্নয়ন বলে না

সম্পাদকীয় বিভাগ

দেশীয় এবং বিদেশি বিভিন্ন আর্থিক ও বেটিং সংস্থা মাঝে মধ্যে ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার নিয়ে উচ্চাশার বার্তা দিলেও বাস্তবের মাটির সঙ্গে কোনও মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। কাগজে-কলমে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হারে ভারত বিশ্বের সর্বাধিক উচ্চ হারে বৃদ্ধির দেশ। সেই হিসাবে অর্থনীতির আয়ত্তে ভারত অতি দ্রুত অষ্টম-সপ্তম স্থান থেকে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে। খুব শীঘ্রই নাকি তৃতীয় স্থান হয়ে যাবে। মজার বিষয় হলো ভারত যখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হবে তখনও তার আয়তন আমেরিকার ৫০টি প্রদেশের একটি ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতির আয়তনের থেকে ছোট থাকবে। তাই তৃতীয়, চতুর্থ অর্থনীতি নিয়ে বড়াই না করে আয়নায় নিজের মুখটা ভালো করে দেখা উচিত। ভারতের অর্থনীতি ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানি, ইতালি থেকে বড়। তার মানে এই নয় ভারতের জনগণের আয়, জীবনযাত্রা ঐ সব দেশের মানুষের সমকক্ষ। বরং উলটোটাই। মাথাপিছু আয়ের প্রশ্নে ভারত ঐ সব দেশ থেকে শতগুণ পিছিয়ে। একজন ভারতীয়র বার্ষিক আয় একজন জার্মানির থেকে একশো ভাগ কম। ভারত চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি হলেও বেশির ভাগ ভারতবাসীর বার্ষিক আয় আফ্রিকার দরিদ্র দেশের মানুষের থেকে বিশেষ আলাদা নয়। ভারতের জনসংখ্যা ১৪০ কোটি। প্রত্যেকে এক টাকা করে আয় করলেও মোট ১৪০ কোটি টাকা হয়। জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেনের মানুষ ১০০ টাকা করে আয় করলেও সেটা ভারতের সমান হবে না। আসল সত্য এখানেই লুকিয়ে।
এই আসল সত্য আড়ালে রেখেই সরকার দেশের গৌরবগাঁথা রচনা করে এই বলে ভারত ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হবে, তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হবে, উন্নত অর্থনীতির দেশ হবে। কিন্তু সরকারের ভাষ্যে বা শাসকের প্রচারে কখনোই জায়গা পায় না। ‘দেশ থেকে দারিদ্র চিরতরে বিদায় নেবে’। দেশে কোনও নিরক্ষর থাকবে না। বেশির ভাগ ভারতবাসী উচ্চ শিক্ষার আঙিনায় পৌঁছাবে। দেশে কোনও বেকারি থাকবে না। মানুষের আয় বর্তমান থেকে অন্তত পাঁচগুণ বাড়বে। চিকিৎসার সুযোগ, শিক্ষার সুযোগ পাবে সকলেই।
উন্নত অর্থনীতি, আধুনিক সমাজ তো সেটাই যেখানে কাজের হাহাকার থাকে না, ন্যূনতম প্রয়োজন মেটাতে মানুষকে জীবনভোর যন্ত্রণা সইতে হয় না। মোদীরা সেই উন্নত সমাজ, সেই উন্নত অর্থনীতির কথা বলে না। রাষ্ট্রের সরকারের ক্ষমতার কথা, অস্ত্রশস্ত্রে বলীয়ান হবার কথা, ধ্বংসের সাধনায় শক্তিশালী হবার কথা বলে। সামরিক শক্তিকে অন্যকে টেক্কা দেবার কথা বলে কিন্তু জীবনযাত্রার মানে অন্যকে টেক্কা দেবার কথা ভুলেও উচ্চারণ করে না। কারণ এসব প্রশ্ন উঠলে, আলোচনায় উত্থাপিত হলে সরকারের অপদার্থতা, ব্যর্থতাই উন্মোচিত হবে। তাই খাতায় কলমে অঙ্কের হিসাব, তথ্য, পরিসংখ্যান দিয়ে বিকাশের এক মায়াবী ছবি আঁকে। মানুষকে সেই মায়ার জালে বন্দি করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চায়।

Comments :0

Login to leave a comment