BLOs Die by Suicide

রাজস্থান ও কেরালায় আত্মঘাতী দুই বিএলও, ক্ষোভ কমিশনের উপর

জাতীয়

চলমান এসআইআর প্রক্রিয়ার মধ্যেই বিএলও আত্মহত্যার ঘটনা প্রকাশ্যে। দুটি বুথ লেভেল অফিসারের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। অভিযোগ অতিরিক্ত কাজের চাপ এবং অযৌক্তিক দাবি সহ একাধিক অভিযোগ কেরালা এবং রাজস্থানে  দুটি রাজ্যে। কেরালার কান্নুরের পায়ানুরের স্কুল শিক্ষক বিএলও অনিশ জর্জের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। রাজস্থানে বিএলও মুকেশ জানগিড় ট্রেনের সামনে ঝাপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। এমনই দাবি মৃতদের পরিবারের। অল রাজস্থান স্টেট জয়েন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশনর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে মুকেশ জানগিড়কে আত্মহত্যা করতে বাধ্যকারী অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একটি বিক্ষোভ সভাও হয়। সংস্থার রাজ্য সভাপতি গজেন্দ্র সিং রাঠোর বলেন, বিএলওদের হুমকি দেওয়া এবং আত্মহত্যায় বাধ্য করার প্রতিবাদে শহীদ স্মৃতিসৌধে একটি মোমবাতি মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে। বিহার নির্বাচনের পর পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাডু, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, গোয়া, গুজরাট, কেরালা, লাক্ষাদ্বীপ, মধ্য প্রদেশ, পুদুচেরি এবং আন্দামান নিকোবরে দ্বিতীয় দফা এসআইআর’র কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম দফা এসআইআর হয় বিহারে। বিএলও-দের প্রশিক্ষণের কাজে শেষ করে ৪ নভেম্বর থেকে শুরু হয় এনিউমারেশন ফরম বিলির কাজ। যা চলবে আগামী ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কমিশনের তরফে বলা হয়, এসআইআর’র প্রাথমিক লক্ষ্য হলো বিদেশি অবৈধ অভিবাসীদের জন্মস্থান পরীক্ষা করে তাঁদের নাম তালিকায় থাকলে বাদ দেওয়া। বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাদেশ ও বার্মা থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলেও প্রশাসনিক মহল থেকে দাবি করা হয়। কমিশনের দাবি, অবৈধ, অনুপ্রবেশকারী ভোটারদের ছেঁটে যোগ্যরা যাতে ভোট দিতে পারেন, সেজন্যই এসআইআর প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। প্রথম দফায় বিহারে এসআইআর শেষে বাদ পড়ে প্রায় ৬৫ লক্ষ ভোটারের  নাম। যদিও কোনও বিদেশী চিহ্নিত হয়নি বাদ দেওয়া সেই নামগুলির মধ্যে। বিহারের ভোটার তালিকার বিশেষ সার্বিক সংশোধনীর (এসআইআর) ভিত্তিতে প্রশ্ন তুলেছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, এসআইআর’র নামে ভোট চুরি করতে গিয়ে ‘হাতেনাতে ধরা’ পড়েছে কমিশন।   
কেরালার কান্নুর জেলায় একজন বুথ লেভেল অফিসারের আত্মহত্যার ঘটনায় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই ঘটনা কেবল নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়েই না এসআইআর কাজে নিযুক্ত কর্মীদের উপর চাপানো বিশাল মানসিক ও কাজের চাপকেও দায়ী করেছে। কান্নুরের পায়ানুরের স্কুল শিক্ষক বিএলও অনিশ জর্জের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে বাড়ি থেকে। পরিবার এবং স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজ্য ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) সম্পর্কিত কাজের কারণে তিনি প্রচণ্ড চাপের মধ্যে ছিলেন। তাঁর বাবা এবং শ্যালক জানিয়েছেন যে অনিশ বেশ কয়েকদিন ধরে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করছিলেন এবং আশঙ্কায় ছিলেন যদি তিনি কোনও ভুল করেন তবে চাকরি হারাতে পারেন। বেশ কয়েকটি শ্রমিক ইউনিয়ন এবং রাজনৈতিক দল অভিযোগ করেছে যে নির্বাচন কমিশন এসআইআর প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিএলওদের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছে। সংগঠনগুলির আরও অভিযোগ, বিএলওদের উপর সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হচ্ছিল। কাজের চাপ ছিল অত্যধিক। নির্বাচন আধিকারিকদের চাপ তাদের মানসিকভাবে ক্লান্ত করে তুলছিল। তবে,  রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এবং কান্নুর জেলা শাসক এই অভিযোগগুলি উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের বক্তব্য যে অনিশ জর্জের কাজ সন্তোষজনক ছিল। বিএলওদের কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এসআইআর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাদের উপর কোনও অতিরিক্ত চাপ ছিল না। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক কান্নুরের জেলাশাসকের কাছ থেকে পুরো বিষয়টির উপর একটি বিস্তারিত তথ্য চেয়েছেন, যাতে স্পষ্ট হয় কোন পরিস্থিতিতে অনিশ এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। 
পশ্চিমবঙ্গ সহ তামিলনাডু, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, গোয়া, গুজরাট, কেরালা, লাক্ষাদ্বীপ, মধ্য প্রদেশ, পুদুচেরি এবং আন্দামান নিকোবরে এসআইআর ইতিমধ্যে ফর্ম বিলি শেষ করে ফর্ম তোলার কাজ শুরু হয়েছে। তবে এই কাজ নিয়ে বিএলওদের মধ্যে ক্ষোভও তৈরি হয়েছে। বিএলওরা একাধিক বার অভিযোগ তুলেছেন যে কাজের জন্য বাড়তি চাপ দেওয়া হচ্ছে।  সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের বিএলওদের এসআইআর সংক্রান্ত কাজ দেওয়া হয়েছে। যার কারণে তাদের কাজের চাপ বেড়েছে তাদের। জানা যাচ্ছে যে মুকেশ জাঙ্গিদ নামে বিএলও কাজের চাপে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তাঁর পকেটে একটি সুইসাইড নোটও পাওয়া গেছে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক ইউনিয়ন পুরো বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়েছে। শিক্ষক ইউনিয়ন বলছে যে প্রতিটি জেলা প্রশাসন এই কাজে নেতৃত্ব দিতে এবং প্রশংসা পেতে চায়, যা বিএলও হিসেবে কর্মরত কর্মীদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। ইউনিয়নটি এই প্রশ্নও তুলে ধরেছেন করে যে অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষাও শুরু হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে স্কুলে কোনও শিক্ষক নেই। শিশুদের পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অভিযোগ নিহত শিক্ষককে এসআইআর প্রক্রিয়া চলাকালীন বিএলও’র দায়িত্ব পালনের জন্য ক্রমাগত চাপ দিচ্ছিলেন। তাঁকে বরখাস্ত করার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত শুরু করেছে। মুকেশ জানগিড় নাহরিকা বাসের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তাঁর পকেটে পাওয়া সুইসাইড নোটে তিনি লিখেছেন যে তিনি এসআইআর’র কাজ নিয়ে বিরক্ত। তার সুপারভাইজার সীতারাম তাঁকে কাজ করার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন এবং তাকে বরখাস্ত করার হুমকি দিচ্ছিলেন। রাজস্থান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতিও এই বিষয়টির প্রতিবাদ করছে।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট বিএলও মুকেশ জানগিড়র আত্মহত্যাকে দুঃখজনক বলে বর্ণনা করে বলেন, ‘‘কী ঘটেছে তা আমি বলতে পারছি না, তবে নির্বাচন কমিশন চাপের মধ্যে রয়েছে এবং সরকারের সাথে তাদের যোগসাজশ রয়েছে, যা গণতন্ত্রের জন্য ভালো লক্ষণ নয়।’’ মহিলা বিএলওরা বলেছেন যে মানুষ এসআইআর সম্পর্কে অবগত নয়। আধিকারিকরা চাপ প্রয়োগ করছেন, মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে এবং নোটিশ জারি করার হুমকি দিচ্ছেন। কর্মচারী সংগঠনগুলি দাবি করছে যে নির্বাচন আধিকারিকরা কর্মীদের হয়রানি করছেন। মহিলা কর্মদের গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এটি ঠিক নয়। এসআইআরের সময় বাড়ানো উচিত।

Comments :0

Login to leave a comment