দেশের পুনর্জাগরণ যদি করতে হয়, বিপজ্জনক দেশি-বিদেশি শক্তিকে যদি আটকাতে হয় বাংলার পুনর্জাগরণ দরকার।। বামপন্থার পুনর্জাগরণ ছাড়া তা সম্ভব নয়। তার জন্য বামপন্থী শক্তিগুলির একযোগে কাজ করা জরুরি।
মঙ্গলবার নৈহাটিতে আলোচনাসভায় একথা বলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের রাজ্য সম্মেলনকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্য অধিবেশনে ‘বাংলা চায় বামপন্থার পুনর্জাগরণ‘ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন তিনি। বক্তব্য রেখেছেন, সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, রাজ্য সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার, সিপিআই রাজ্য সম্পাদক স্বপন ব্যানার্জি, আর এসপি রাজ্য সম্পাদক তপন হোড়, ফরওয়ার্ড ব্লক রাজ্য সম্পাদক নরেন চ্যাটার্জি, এসইউসিআই(সি) রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য প্রমুখ।
সেলিম বলেন, আজকে বাংলাকে যদি বাঁচাতে হয় বাংলার স্কুলকে বাঁচাতে হবে, শিক্ষাকে বাঁচাতে হবে, বাঁধ বাঁচাতে হবে, নদীভাঙনে আক্রান্ত মানুষকে বাঁচাতে হবে। একশো দিনের কাজের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে হবে, একশো দিনের কাজকে বাঁচাতে হবে। এই লড়াইয়ে সকলকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সেলিম বলেন, বামপন্থীরা একজোট হলে বামপন্থার পুনর্জাগরণ সম্ভব হবে।
সেলিম বলেন, রামমোহন-বিদ্যাসাগরের সম্পর্কে আরএসএস-বিজেপি যা বলছে তা নতুন নয়। ওরা সমাজ সংস্কারকদের সহ্য করতে পারে না। নবজাগরণের চিন্তার ব্যাখ্যা নিশ্চয় সব বামপন্থী দলের এক নয়। কিন্তু সেই উত্তরাধিকার, স্বাধীনতার লড়াইয়ের বিভিন্ন ধারা, সমাজ সংস্কারের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় শ্রমিক কৃষকের সংগঠিত হওয়া এবং বামপন্থার গড়ে ওঠা জড়িত।
সেলিম বলেন, এই উত্তরাধিকার সকলের, তাকে রক্ষা করা জরুরি। তাই বামপন্থীদের মধ্যে, কাছের অংশের মধ্যে সেতু গড়া দরকার। সেই চেষ্টা করছে সিপিআই(এম)। ভাগ করার চেষ্টা হবে। কিন্তু বামপন্থার পুনরুত্থানের জন্য বামপন্থীদের ঐক্য গড়া জরুরি।
সেলিম বলেন, পশ্চিমবঙ্গে পুনরুত্থানের প্রয়োজন আছে। বামপন্থী হিসেবে, মার্কসবাদী হিসেবে আজকের চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়। সেখানে অতীতে পড়ে থাকলে হয় না। লড়াই সংগ্রামের চাহিদা অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হয়। সংগ্রামের ঐক্য গড়তে হয়।
তিনি বলেন, বামপন্থার পুনরুত্থান কেবল বামপন্থী দলগুলির বিষয় নয়। দেশে এবং রাজ্যে চরম দক্ষিণপন্থার উত্থান হয়েছে। বামপন্থা আক্রান্ত হলে দক্ষিণপন্থী শক্তির উত্থান হয়। এরাজ্যে সিপিআই(এম) বামপন্থী শক্তি হিসেবে সবচেয়ে বড় বলে তাকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। অসংখ্য শহীদ, ঘরছাড়া, মিথ্যা মামলার মুখে পড়তে হয়েছে। সে লড়াই এখনও চলছে।
সেলিম বলেন, এরাজ্যে বলা হয়েছিল ‘লাল হটাও’, কেবল সিপিআই(এম)-কে বা বামফ্রন্টকে হটানোর কথা নয়, গোড়া থেকেই বামপন্থাকে হটানোরই লক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল। তারপর থেকে গণতান্ত্রিক পরিসর সঙ্কুচিত হয়েছে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ওপর আক্রমণ হয়েছে।
সেলিম বলেন, গোটা দেশে এই আক্রমণ বেশি হয়েছে এটা ঠিক। আজকে এসআইআর’র নামে যা করা হচ্ছে তা এরই অংশ। বিহারের নির্বাচন, তার আগে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, দিল্লির নির্বাচনে এই বিপদ দেখেছি। আবার পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত-পৌরসভা, মাদ্রাসা, স্কুল এমনকি ক্লাবের নির্বাচনেও এই প্রবণতা দেখছি। সব এক করে দেখা ঠিক নয়, দেখা যায়ও না। কিন্তু গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক অধিকার আক্রান্ত তো হচ্ছে। ফলে যেখানেই আক্রমণ হোক আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো বামপন্থী হিসেবে বড় কাজ। বামপন্থা মানে গণতন্ত্রের সম্প্রসারণ।
সেলিম বলেন, একদিকে উদ্যত ফ্যাসিস্ট আক্রমণ রোখার জন্য ব্যাপক নির্বাচনী মঞ্চ গড়ার প্রয়োজন আছে। যেমন ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ’। আবার, শ্রেণিস্বার্থ রক্ষা, কৃষক-শ্রমিক, মজুরি-বেকারি, প্রাকৃতিক সম্পদের লুট, ধান্দার ধনতন্ত্রকে রোখার জন্য বামপন্থীদের একজোট হওয়া জরুরি। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক লগ্নি পুঁজির স্বার্থবাহী দুর্নীতি চক্র এবং লুটতন্ত্র গড়ে উঠছে - তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জোট করার প্রশ্ন রয়েছে। এই লুটতন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের লড়তে হবে। কেউ কেউ মনে করেন দেশের বড় লুট আটকাতে হলে ছোট লুট নিয়ে সরব না হলেও হবে। তা নয়। ছোট এবং বড়- দুই ধরণের লুটেরই বিরোধিতা করতে হবে।
Leftists must unite for leftism
বামপন্থার পুনর্জাগরণের জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে বামপন্থীদের: সেলিম
×
Comments :0