ক্রেতা যদি গৌতম আদানি হন তাহলে মোদী জমানায় ডাবল ইঞ্জিনের যে কোনও রাজ্যে জলের দরে বা কার্যত বিনামূল্যে যতখুশি কেনায় কোনও সমস্যা নেই। মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাটে আদানিদের জন্য এই বিশেষ সুব্যবস্থা চালু আছে বহুকাল আগে থেকেই। বস্তুত মোদী গুজরাটে মুখ্যমন্ত্রী হবার পর থেকেই চিচিং ফাঁকের মতো আদানিদের জন্য যাবতীয় সরকারি সুযোগ সুবিধার দরজা খুলে যায়। সেই প্রাক স্বাধীনতা যুগ থেকেই বহু শিল্প-বাণিজ্য গোষ্ঠীর জন্ম হয়েছে। অনেকে মাঝপথে হারিয়ে গেলে বাকিরা টিকে আছে বা রমরমিয়ে বড় হয়ে উঠেছে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শ্রম শোষণ ছাড়া যে কোনও পুঁজিপতির সম্পদ যে বাড়ে না সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এবার কোনও পুঁজিপতি কত দ্রুত মুনাফা বাড়াবে এবং সম্পদের পাহাড় বানাবে সেটা নির্ভর করে সে শোষণের ব্যাপ্তি ও তীব্রতা কত বেশি করতে পারবে এবং বুর্জোয়া সরকারকে কতটা বগলদাবা করে কত বেশি সুযোগ-সুবিধা হাতিয়ে নিতে পারবে। এক্ষেত্রে স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে যদি কেউ অভাবনীয় ও অবিশ্বাস্য নজির সৃষ্টি করে থাকে তবে সেটা গৌতম আদানির নেতৃত্বে আদানি গোষ্ঠী করেছে। আর সেটা সম্ভব হয়েছে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে নিবিড় বক্তুত্বের সুবাদে।
সব কর্পোরেট সংস্থাই সরকারের কাছ থেকে বিস্তর সুবিধা পেয়ে থাকে। সেটা কখনো কর ছাড়ের মাধ্যমে, কখনো ঋণ মকুবের মাধ্যমে, কখনো চোখবুঝে ছাড়পত্র দেবার মাধ্যমে, কখনো সামগ্রিকভাবে কর্পোরেট স্বার্থে বা বিশেষ কোনও কর্পোরেটের স্বার্থে সরকারি নীতি গ্রহণ ও আইন প্রণয়ন করে। তাছাড়া সংস্কারের নামে শ্রম আইন, শিল্প সম্পর্ক আইন, সামাজিক নিরাপত্তা আইন ইত্যাদিকে এমনভাবে বদলানো হয় যাতে মালিক পক্ষে দায় কার্যত শূন্য হয়ে যায়। এছাড়া যেটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো পছন্দের কর্পোরেটকে তাদের ছন্দ মতো জায়গায় চাহিদা মতো জমি নাম মাত্র টাকায় বা বিনা পয়সায় দেওয়া। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে তার বিপুল জমি ও সম্পদ সহ জলের দরে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া। এইভাবে পুঁজিবাদী সরকার রাষ্ট্র যন্ত্রকে ব্যবহার করে দেশের ও জাতির সম্পদ কর্পোরেট হাঙ্গরদের লুটের ব্যবস্থা করে দেয়। মোদী জমানায় এই প্রক্রিয়া নগ্নরূপ ধারণ করে বেপরোয়া হয়েছে। মোদী জমানায় সবচেয়ে ভয়ঙ্কর নজির তার ঘনিষ্ট বন্ধুকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে যাবতীয় সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়া। এরই সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত আসামের ডাবল ইঞ্জিনের সরকারের মাধ্যমে মাত্র সাড়ে চার হাজার টাকায় সাড়ে চার হাজার বিঘা জমি আদানিদের হাতে তুলে দেওয়া। মোদী জমানায় দেশের প্রায় সব রাজ্যে এভাবেই হাজার হাজার বিঘা জমি হাতিয়েছে আদানিরা। বস্তুত আদানিরা হতে চলেছে দেশের বৃহত্তম জমিদার। এত দ্রুত গতিতে সীমাহীন সম্পদের পাহাড় জমানোর আড়ালে জড়িয়ে আছে মোদী-সাহ্নিধ্য। মোদী চেয়েছেন বলেই তার বন্ধু আদানির সম্পদ তাঁর জমানাতেই বিদ্যুৎগতিতে বেড়েছে।
Modi Adani
আদানি বিহনে মোদী
×
Comments :0