Hasina Death Sentence

হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের প্রতিবাদে কাল ‘শাটডাউন’-র ডাক আওয়ামি লিগের

আন্তর্জাতিক

মীর আফরোজ জামান: ঢাকা  

 
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালের রায়ের বিরোধিতায় মঙ্গলবার ‘পূর্ণ শাটডাউন’-র ডাক দিয়েছে আওয়ামি লিগ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন এই দল বলেছে, বিচারের নামে প্রহসন হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কার্যকর করা হয়েছে আদালতকে সামনে রেখে।
জুলাই অভুত্থান ঘিরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে’ মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। 
এই রায়ে উল্লাস করতে দেখা গিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাংশকে।  মিষ্টি বিতরণ হয়েছে। কিন্তু এদিনও আওয়ামি লিগের লকাউনের প্রভাব পড়তে দেখা গিয়েছে বিভিন্ন অংশে।
একই সঙ্গে দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়ে ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
গণঅভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা এটিই প্রথম মামলা, যার রায় হলো আজ।
সোমবার দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে ছয় অধ্যায়ে ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ের প্রথম অংশ পড়া শুরু করেন বিচারক প্যানেলের সদস্য বিচারপতি মহম্মদ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মহম্মদ. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলের অপর সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ।
রায় ঘোষণার সময় জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবীরা ছাড়াও জুলাই আগস্টে নিহতদের কয়েকজনের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
রায়ে আদালত বলেছে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। একটিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং অন্য দুটি অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মামলার শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষ বারবারই অভিযোগ করেছিল, শেখ হাসিনা ছিলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী সব ধরনের অপরাধের মাস্টারমাইন্ড অর্থাৎ পরিকল্পনাকারী, হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার বা সর্বোচ্চ নির্দেশদাতা।
এই মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া বাকি দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
সাবেক আইজিপি মামুন এই মামলার একমাত্র গ্রেপ্তারকৃত আসামি। তিনি এই মামলায় অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লিগ সরকারের সময় এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামি লিগ সরকার পতনের পর এই ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়।
পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় প্রথম মামলা (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) হয়।
মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে যে ৫টি অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো হলো: উসকানিমূলক বক্তব্য, হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের ‘হত্যা করে নির্মূলের নির্দেশ’ দেওয়া, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাইদ হত্যার ঘটনায় প্ররোচনা, উসকানি, ষড়যন্ত্র, সহায়তা, সম্পৃক্ততার অভিযোগ। এ মামলায় আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী, আহত ব্যক্তি ও প্রতক্ষ্যদর্শী, আহতদের চিকিৎসা দানকারী চিকিৎসকসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশের হাসিনার মৃত্যুদণ্ড সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। 
এদিকে আওয়ামি লিগ সোশাল মিডিয়া পোস্টে বলেছে ১৯-২১ নভেম্বর দেশজুড়ে বিক্ষোভ দেখানো হবে। চলবে প্রতিরোধ।
এই রায় ঘোষণার আগে এক দফায় আওয়ামি লিগ লকডাউন ঘোষণা করে। তার যথেষ্ট প্রভাব পড়ে বাংলাদেশে। কর্মসূচি ঘোষণা করে আওয়ামি লিগ বলেছে বেআইনি ট্রাইবুনালের রায়  দেওয়া হয়েছে আইনকে অগ্রাহ্য করে। আওয়ামি লিগ যদিও বাংলাদেশে এখন নিষিদ্ধ।

Comments :0

Login to leave a comment