Post editorial

মানুষ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন, রুখবে কে?

উত্তর সম্পাদকীয়​

গৌতম দেব

নির্বাচন শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে না; দেশে দেশে সরকারগুলি কারা পরিচালনা করবে সেই প্রশ্নে কোথাও ৪ বছরের জন্য, কোথাও বা ৫/৬ বছরের জন্য সেখানকার সংবিধান অনুযায়ী, ক্ষমতায় নিয়ে আসে। মানবসভ্যতার যে অবস্থায় আমরা এখন অবস্থান করছি তাতে দুটি ভাগে দেশগুলি বিভক্ত– পুঁজিবাদ আর সমাজবাদ। ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লব সম্পন্ন হবার পর সমাজতন্ত্র প্রথম একটা আলাদা ব্যবস্থা হিসাবে কাজ শুরু করল। এর আগে বইপত্তরে বিপুল বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছিল। প্রধানত বিষয়টি রাজনৈতিক দিক দিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি আলাপ-আলোচনা শুরু হলো। তার সাথে নানাবিধ  বিতর্ক মানুষের মনে আলোড়ন সৃষ্টি করল। যদিও ইউটোপিয়ান সোশালিজম -এর তত্ত্ব এর আগেই ইউরোপে ও অন্যত্র ঘুরে বেড়াচ্ছিল। গ্রেট ব্রিটেনকে যুক্তিসঙ্গত কারণেই পূঁজিবাদের জনক হিসাবে বর্ণিত হলো। অন্যদিকে ‘দুনিয়া কাঁপানো দশ দিনের’ নায়ক বলশেভিক পার্টিকে নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্ব সমাজতন্ত্রের সূচনা করলেন লেনিন। আর আজ? আমাদের চোখের সামনে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ল। এতোদিন আমরা জেনেছিলাম এবং বুঝেছিলাম যে সমাজতন্ত্র অপরাজেয় এবং অপ্রতিরোধ্য। কিন্তু কমিউনিস্টরা সর্বত্রই কিছুটা অস্বস্তিকর পরিবেশে রয়েছে। চিন্তা এবং নতুন সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে দেশে দেশে পুঁজিবাদের শিবিরে শেষ ঘণ্টা বাজানোর কাজে নিয়োজিত থাকাটাই বাকি দেশগুলির কম্যুনিস্টদের একমাত্র বুনিয়াদী কাজ। অর্থাৎ সমাজতন্ত্র শুধু এগোবে আর এগোবে। বিপ্লবোত্তীর্ণ দেশে কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে যে সরকারগুলি হবে তারা সমাজবাদের টাট্টু ঘোড়া নিয়ে সাঁ সাঁ করে এগতে থাকবে। আর ঐ সব দেশে শ্রেণি শত্রুদের উচ্ছেদ করে শ্রমিক-কৃষক- মধ্যবিত্তের রাজ গঠন করে দেশে বিপ্লব সম্পন্ন করেছে এবং শ্রমিক-কৃষকের নিজের রাষ্ট্র গঠন করেছে—  তারা আবার ধনতন্ত্রে ফিরে যাবে! এটা মার্কসবাদের অন্তর্নিহিত মর্মবাণী না। এছাড়া বুর্জোয়া পণ্ডিতেরা গণতন্ত্রের প্রশ্নে পূঁজিবাদ কত এগিয়ে আছে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং অর্থনীতিতে যদি বা পূঁজিবাদের কিছুটা উন্নয়নমুখীনতা দেখাবার সুযোগ আছে এই প্রশ্ন বিবেচনার জন্য কমিউনিস্টরা গোড়ার দিকে খুব একটা নজর দেয়নি, ফলে গত শতাব্দীর শেষের দিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন সহ পূর্ব ইউরোপের একের পর এক দেশগুলিতে সমাজতন্ত্রের বিপর্যয় হয়। রাশিয়া-আফ্রিকা-লাতিন আমেরিকার কিউবা, নিকারাগুয়া, ভেনিজুয়েলা, কোরিয়া প্রভৃতি দেশে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখবার প্রশ্নে সংগ্রাম করতে হয়। এখন বিশ্বময় প্রগতিশীল শক্তি সেই মহাযুদ্ধে চীন সমেত এই সব  দেশগুলি সমাজতন্ত্রের পক্ষে যাতে দেশের শক্তিসমূহকে ঐক্যবদ্ধ করে রূখে দাঁড়াতে পারে তার জন্য সমস্ত শক্তি সমবেত করে দাঁড়ায় এবং সচেষ্ট হয়। এই ঘটনাটি ছোটখাট কিছু নয়। সোভিয়েতের পতন এবং সমাজবাদের বিপর্যয় একেবারেই ছোটখাট ঘটনা নয়। কিন্তু এজন্য  সমাজতন্ত্রকে বাতিল ঘোষণা করা বাতুলতা মাত্র। সোভিয়েতের এই পতনে যে নতুন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো তা শুধুমাত্র বেশি ক্ষমতাশালী দেশ দু’টির উপর প্রভাব বিস্তার করল না। পরিস্থিতির ধাক্কায় অন্যান্য দেশের বিদেশ নীতিতেও পরিবর্তন ঘটাতে হলো। ভারত, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা ইরান সহ মাঝারি শক্তির দেশ তাদের বিদেশ নীতিতে কোনও বড় দেশের দালালি করতে নাম লেখাতে কিছুটা বাধ্য হয়েছে। এটা স্থায়ীভাবে তাদের নতুন বিদেশনীতি নয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নয়া রাষ্ট্রপতি তার দুটো টার্মের জন্য ক্ষমতায় আসায় তার মাথার সুস্থতার সম্পর্কে দুনিয়ার দেশে দেশে প্রশ্ন উঠেছে। সেই হেডমাস্টার ট্রাম্প বোঝাতে চাইছেন যে তিনি নোবেল প্রাইজের দাবিদার– কারণ যুদ্ধ তিনিই থামিয়েছেন– অন্তত দুটো যুদ্ধ– ইজরায়েল ও হামাস আর এদিকে ভারত ও পাকিস্তান। ইরান ও ইজরায়েল, তাদের সভ্যতা ধ্বংসের ক্ষমতা প্রদর্শনে যে যুদ্ধ শুরু করল তাতে নীরব সায় ছিল ট্রাম্পের। আর বিশ্ব দেখল সর্বাধুনিক অস্ত্র বিশেষ করে আকাশ যানের প্রদর্শনী যা দেওয়ালির রাতকেও হার মানায়।

৯০-এর দশকের পৃথিবী কাঁপানো যে ঘটনা (অথবা দুর্ঘটনা) বিশ্বময় জনমানসে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করে তা আমরা জানি সোভিয়েতের পতনকাল বলে। দুই মেরুর বিশ্বকে একমেরুতে পরিণত করার মতো অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে। কমিউনিস্টরা সর্বত্র, যে দেশে বিপ্লব সমাধা হয়নি বা হয়েছে,  যেমন পূর্ব ইউরোপে, কমিউনিস্টরা  বিরাট আকারে প্রশ্নের সম্মূখীন হয়েছেন বা হচ্ছেন— কমিউনিজমের ভবিষ্যৎ নিয়ে । পৃথিবীতে অনেক দেশ আছে যেখানে কমিউনিস্টরা জনগণের ভালো সমর্থন পেয়ে আসছে অনেকদিন যাবৎ। কিন্তু চালু নির্বাচনী ব্যবস্থা এবং সরকার গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ডান, বাম এবং মধ্য পন্থীদের অবস্থান সম্পর্কে একটা ধারণা ক্রমশ জন্মায়। আর এসবের মধ্যে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এবং ফ্যাসিবাদী শক্তির নতুন করে বিশ্ব দখল করার আর রাজ করার ঐকান্তিক বাসনা লুকোছাপা থাকে না। বিষয়টি শুধু ভালো বা মন্দের দৃষ্টিতে না দেখে একমাত্র শক্তিধর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নয়া উপনিবেশবাদের কাঠামো এবং দর্শন গড়ে তোলার তীব্র প্রচেষ্টা গ্রহণের মধ্য দিয়ে বিশ্বের সামনে নতুন বিপদ সম্পর্কে একটা সাধারন ধারণা দিকে দিকে ছড়িয়ে দেয়।
আমাদের পার্টি সিপিআই (এম) বেশ কয়েক বছর ধরে সোভিয়েতের মহান নেতা লেনিনের নেতৃত্বে প্রথম সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সফল হওয়া এবং বিশ্ব রাজনীতিতে এই পরিবর্তনের বিশেষ করে খেয়াল রেখে বিভিন্ন ইস্যুতে কমিউনিস্টদের নতুন দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে স্বাধীন মতামত নেওয়ার উপর জোর দেওয়ার উপর গুরুত্ব দেয়। বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বেশি জনগণের বাস সেই ভারতে কমিউনিস্ট-বাম ও ভাষাভিত্তিক জনগণের কর্তব্য নির্দিষ্ট করার উপরে গুরুত্ব আরোপ করে এবং কমিউনিস্ট ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার উপরে বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ ছাড়া কয়েক বছরের মধ্যে সমাজতন্ত্র তার অগ্রগতির প্রশ্নে যখন নতুন করে উত্তর খুঁজছে সেই অবস্থায় সময় কিছুটা দিয়ে পার্টি কংগ্রেস থেকে মতাদর্শগতভাবে পার্টির বক্তব্য হাজির করে এবং আত্মসমালোচনার দৃষ্টিভঙ্গিতে কিছু বিষয়ে নিজেদের বক্তব্য পার্টি এবং জনগণের কাছে সুনির্দিষ্ট করে কমিউনিস্ট আন্দোলনকে সঠিক দিশা দেখানো এবং সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বের  উল্লাসের   সামনে দেশে দেশে নতুন বাস্তবতাকে সামনে নিয়ে আসে। ভারতের জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের ধারণা শুধুমাত্র একটা স্লোগান নয়, বাস্তবের কঠোর সংঘাতে এটা একটা জনমুক্তির একান্ত জরুরি কর্তব্য।

বিশ্বজুড়ে বেশিরভাগ মহাদেশেই এখন রাষ্ট্রনায়করা  যে কথাবার্তা বলছেন তাতে ইতিমধ্যেই ঘটে যাওয়া অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক এবং বিভিন্ন সামাজিক প্রথা প্রকরণের সাথে এই বিষয়গুলি মিলিত হয়ে বড় মাপের প্রক্সি ওয়ার বা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পাঁয়তারা চলছে। এটা সাধারণ মানুষের বুঝতে খানিকটা অসুবিধা হলেও দেশে দেশে প্রচার মাধ্যম, পণ্ডিতপ্রবর, যুদ্ধবিশারদ সর্বোপরি মাতব্বর দেশগুলিতে অস্ত্রভাণ্ডার গড়ে তোলার বেপরোয়া চেষ্টার মধ্য দিয়ে সত্যিকারের অশুভ এক পরিমণ্ডল গড়ে উঠছে।
আর একবার পৃথিবীকে যদি বিশ্বযুদ্ধ দেখতে হয় (তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ) তাহলে সেই বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর তার আউটলাইন লেখার লোক থাকবে না। ইতিহাস লেখার তো প্রশ্নই নেই। হলিউড বলিউড কাঁপিয়ে আমাদের কলকাতায় ফিল্মে নানা যা সব কাণ্ডকারখানা দেখা যায় তাতে অবস্থাটা অনুমেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে এবং পরে পৃথিবীতে মানুষ দেখেছেন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ঔদ্ধত্য এবং আগ্রাসী রূপ। মার্শাল প্ল্যানের দ্বারা বিশ্বে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির আর্থ-সামাজিক পুনরুদ্ধারের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া আর সব কিছু ওরা করেছে নিজেদের সঙ্কীর্ণ স্বার্থে। আর আজ খেয়ে না খেয়ে ছোট গরিব দেশগুলোও নিজেদের মধ্যে লড়াই করছে। যেখানেই যুদ্ধ বা বড় আকারের মারামারি চলছে সেখানেই আমরা দেখতে পাচ্ছি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সক্রিয় আছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে নতুন নতুন শক্তির আত্মপ্রকাশ ঘটছে—  বিশ্বের রাজনীতিতে বিভিন্ন রণাঙ্গনে। মধ্য এশিয়ার কাজাখস্তান, পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্গত একটি প্রদেশ হিসাবে চিহ্নিত ছিল এবং উন্নয়নের প্রশ্নে বিশ্বের দেশগুলির মধ্যে খুব একটা আহামরি জায়গায় ছিল না। বৈকানুর প্রদেশে সেই কাজাখস্তান ও এখন তার কাজকর্মের ধারাতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে বিশ্ব মানদণ্ডে অনেককে পিছনে ফেলে অতি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। সমাজতন্ত্র ত্যাগ করে কাজাখরা পুঁজিবাদী পথে ঝাঁপিয়ে পড়েনি। পৃথিবীর মানচিত্রের দিকে গভীর অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি নিয়ে চোখ বোলালে আজ নয়, অনেক অনেক বছরে আগে থেকে বিশ্ববাসী পরিচিত ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের উঠানে’ বিশেষ করে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলিতে ইচ্ছামত রাজা পালটানোর খেলাতে। ফিদেল এবং চে’র নেতৃত্বে সংগঠিত হলো প্রথম বিপ্লব– কিউবায়। মার্কিনদের নাকের ডগায় ফ্লোরিডার উপকূলে প্রথম সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। চোখ মুখ লাল করে মার্কিনীরা অ্যাটম বোমা নিয়ে হাজির হলো কিউবায়।

আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্রের পতনের পর থেকে বিশ্বের রাজনৈতিক- অর্থনৈতিক চালচিত্রে এক অভূতপূর্ব অভাবিত পরিবর্তন দেখা দেয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন দেশটিই উঠে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে  মধ্য এশিয়ার এক গুচ্ছ দেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং আলাদা দেশের মর্যাদা নিয়ে আলাদা আলাদা প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতি-সৈন্যবাহিনী গঠন করে। এতে স্বয়ং সোভিয়েত ইউনিয়ন সহ বিশ্ব সমাজতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সাম্রাজ্যবাদী ঐক্য আরও আঁটসাঁট করতে বিশেষ করে বিশেষ করে বৃহৎ পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের যথেষ্ট মদত মেলে। সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব যা করতে বলবে তাই হাঁটু গেড়ে বসে করতে হবে  না হলে তাদের উপর সাম্রাজ্যবাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ আক্রমণ ছিল শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা আর স্বাভাবিক ঘটনা।
চীনের নেতৃত্বে বিশ্বের অনেকগুলি দেশে বিশেষ করে কিউবা, কোরিয়া , নিকারাগুয়া, লাওস, ভিয়েতনাম প্রভৃতিতে সমাজতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা চলেছে।  এছাড়া ল্যাটিন আমেরিকায়– বলিভিয়া, ভেনেজুয়েলা এবং আফ্রিকার অনেকগুলি দেশে সাম্রাজ্যবাদীদের তাঁবেতে রাখার চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে। এছাড়াও আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে যে দ্বন্দ্ব বর্তমান তাকে ব্যবহার করে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন সংগ্রামের নামে তারা কার্যত রাশিয়া বা চীনের পক্ষে তাদের অবস্থান নিচ্ছে।
উন্নয়নের সাথে সাথে আমাদের তীক্ষ্ণভাবে নজর রাখতে হয় যে ভারত সরকার ছাড়াও আমাদের দেশের বিভিন্ন রাজ্যগুলির রাজ্যভিত্তিক  অথবা আঞ্চলিক দলগুলি দেশের মূল মূল সমস্যাগুলি সম্পর্কে কি অবস্থান গ্রহণ করছে। সেন্সাস এবার এখনো হয়নি। কেন হয়নি তা জানানো হয়নি। বিভিন্ন সূত্র থেকে যেটা বোঝা যায় যে ভারত এবার বিশ্বে এক নম্বর জনবহুল দেশ হবে– তারও ঘোষণা হয়নি। দীর্ঘকাল ধরে এই অবস্থান ধরে রেখেছে লালচীন।
বিশ্বের দেশে দেশে সমাজতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক এবং গণতান্ত্রিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। বেশি বেশি করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে রাজপথে শামিল হচ্ছেন ওই মুলুকের অগণিত মানুষ।
দ্রুত পরিবর্তনশীল এই বিশ্বে যেখানে ২০০৮ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা যা শেষ হবার কোনও লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না– সেখানে সেই মন্দার উপরে এসেছে মহা শক্তিধর রাষ্ট্রপতির মার্কিনী পণ্যের আমদানি শুল্ক ১০০ শতাংশের ও বেশি চাপানো,— আরও, আরও বাড়াচ্ছে– বাড়িয়েই চলেছে।

এখানে ভারতে বিজেপি সরকার এবং তাদের সর্বভারতীয় নেতারা কি ভাবছেন বা করছেন? বরং বলা ভালো বিজেপি-তে ভগবানের পরেই স্থান ( মোদী, ব্যবসাদার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ , রাজনাথ) এবং সরাসরি সদস্য পদ নেননি সুভাষিত মধুর কণ্ঠস্বরের অধিকারিণী, সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার আর গাছে গাছে বানর সেনা যার সর্বক্ষণের সহচর; আমাদের গ্রেট ‘দিদি’ – তার কথা না বলাই ভালো। অযোধ্যায় বানর সেনাপতি হনুমানের নেতৃত্বে হাজারো গ্রাম শহর তছনছ করে সীতা উদ্ধারের নাটকে তিনি কি নিশ্চুপ থাকার পাত্রী– কখনই না। সেই তৃণমূল ছাত্রপরিষদের ছত্রী সেনা রেডি-স্টেডি-গো বলার অপেক্ষায়।

অন্যদিকে কমিউনিস্টরা ছোট ছোট পাথরের টুকরো ফেলে সেতুবন্ধন করে ঝাঁপিয়ে পড়েছে শ্রীলঙ্কার উপর। ছোট ছোট কাজ নীরবে নিভৃতে, কখনো সোচ্চারে কখনো উত্তাল আন্দোলনে তারা রয়েছে গ্রাম শহরে। সর্বত্র অনুরণিত হচ্ছে এই আওয়াজ– ‘মমতা হটাও, দেশ বাঁচাও’। ’৬৭ তে আন্দোলন সংগ্রামের তুঙ্গে উঠে এই বাংলায় প্রথম যুক্তফ্রন্ট, তারপরে ’৬৯ এ দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট আর সর্বশেষ ‘৭৭এ ৩৪ বছরের জন্য বামফ্রন্ট সরকারে বসে লুম্পেনদের মাথা তুলতে দেয়নি। এই নিরবচ্ছিন্নতা বাংলার মাটিকে আরও শক্ত করেছে। বাংলার গ্রামে গ্রামে শহরে শহরে এই প্রস্তুতি চলছে নিরবচ্ছিন্নভাবে। আর সিপিআই(এম) জানে তেভাগা,জানে তেলেঙ্গানা। মমতা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার করে যা পয়সা দিচ্ছে– তার থেকে অনেক অনেক বেশি মানুষের স্বার্থ রক্ষা করেছে বামফ্রন্ট, জমি উদ্ধার আর বণ্টনে। আর গ্রাম পেয়েছে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর হাতিয়ার গ্রাম পঞ্চায়েত। আর মহিলারা পেয়েছেন একই সাথে পঞ্চায়েতে নির্বাচিত হবার অধিকার আর স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠনের মাধ্যমে নিজের পায়ে দাঁড়াবার সামর্থ্য। আমরা লুম্পেনদের আর ক্ষমতায় আসতে দেবনা– এই প্রতিজ্ঞার শরিক হতে হবে সকলকেই।

Comments :0

Login to leave a comment