প্রকৃতির বাঁধা ও ট্যুর গাইডের বিচক্ষণতায় রক্ষা পেল কল্যাণী বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫ জন পড়ুয়া। গত ২০ এপ্রিল পেহেলগাম থেকে তাদের কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার কথা থাকলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তাঁরা ২২ তারিখে বেরনোর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ট্যুর গাইড ঘুর পথে প্রায় ১৪ ঘণ্টায় তাদের জম্মুতে পৌঁছায়, সেখানে তারা টিভিতে পেহেলগামের বর্বরোচিত হামলার ঘটনা দেখে আতঙ্কে কেঁপে ওঠেন।
ওই দলে ছিলেন ইসলামপুর ক্ষুদিরামপল্লীর মেয়ে তিয়াসা মৈত্র। তিনি কল্যানী বিধানচন্দ্র কৃষি বিদ্যালয়ে এমএসসি প্রথম বর্ষের পড়ুয়া। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩৫ জন পড়ুয়াকে নিয়ে বাৎসরিক ভ্রমণ কাশ্মীর নিয়ে যায়। গত ১২ এপ্রিল তাঁরা কলকাতা থেকে কাশ্মীরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। কাশ্মীর পৌঁছে বৈষ্ণদেবী মন্দির দর্শনের জন্য তাঁরা দুইদিন কাটরায় এক হোটেলে থাকে। তারপর শ্রীনগর, সোনমার্গ, গুলমার্গ ভ্রমণ করে ১৯ তারিখে পেহেলগামে হোটেলে পৌঁছায়। সেখানে একদিন ভ্রমণ করে ২০ তারিখে বেরিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে প্রবল বৃষ্টির কারণে পার্শ্ববর্তী রামবানে ধস নামে। পেহেলগামের হোটেলে তাঁরা আটকে পড়ে। এরপর তারা সেখান থেকে ২২ তারিখ বেরোনোর পরিকল্পনা করে। তারা ঠিক করেছিলেন যেহেতু ধ্বসের কারণে রাস্তা বিপর্যস্ত হয়েছে তাই তারা ২২তারিখে ফিরবে। কিন্তু হঠাৎ করেই টুর গাইডের পরামর্শে প্ল্যান পরিবর্তন হয়। ট্যুর গাইড বুদ্ধি করে অপেক্ষা না করে ২১ তারিখে সকাল বেলা ঘুরপথে মোঘল রোড হয়ে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। সাধারণত এই মোঘোল রোড নিরাপত্তা কর্মীরাই বিশেষভাবে ব্যবহার করে। তাই স্বাভাবিকভাবে এই রাস্তাটি অনেকেরই অপরিচিত। ১৪ ঘণ্টা পর তারা জম্মুতে এসে পৌঁছায়। কিন্তু তাঁরা ধ্বস বিপর্যস্ত রাস্তা রামমান এলাকা অর্থাৎ জম্মু –শ্রীনগর জাতীয় সড়ক দিয়ে আসলে ৬ ঘন্টাতেই পৌঁছে যেত।
জানা যায়, শুধুমাত্র কল্যাণী ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীই নয়, বহু পর্যটক ওই এলাকায় বিভিন্ন হোটেলে আটকে পড়েছিল।
কল্যাণী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশ।
গত ২২ তারিখে জম্মুতে হোটেলে ফিরে টিভিতে যখন হামলার খবর দেখতে পায় তখন তারা আতঙ্কে কেঁপে উঠেছিল। টুর গাইডকে ধন্যবাদ জানাতে থাকে সবাই। তিয়াসা বলেন, কলকাতা থেকে যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকেই আমরা অনেক আনন্দ করেছি। হঠাৎ করে পেহেলগামে আমরা আটকে পড়েছিলাম। ট্যুর গাইডের বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করতেই হয়। তিনি যদি সেদিন আমাদের বুদ্ধি করে ২১ তারিখে ওখান থেকে বের করে না আনতেন। তাহলে ২২ তারিখে আমাদের এই হামলার মুখে পড়তে হতো। ট্যুর গাইডকে অনেক ধন্যবাদ।
তিয়াসার বাবা বাবুলাল মৈত্র ও মা নিবেদিতা মৈত্র জানান, আমার মেয়ে সহ সবাই ঠিকঠাক ফিরেছে এটাই বড় সান্তনা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কাশ্মীরে শিক্ষামূলক ভ্রমণে নিয়ে যাওয়ার খবর শোনার পর থেকেই আনন্দিত হয়েছিলাম। কখনও ভাবতে পারিনি এত বড় ঘটনা ঘটে যাবে। টুর গাইডের বুদ্ধিমত্তার কারণেই আমার মেয়ে সহ অন্যান্যরা বিপদমুক্ত।
Comments :0