Bangla Banchao Yatra

দিন বদলের স্বপ্নমাখা বাংলা বাঁচাও যাত্রা

উত্তর সম্পাদকীয়​

মানবেশ চৌধুরি
কোচবিহার থেকে কামারহাটি— গ্রাম, নগর, মাঠ-পাথারকে আক্ষরিক অর্থেই আলোড়িত করে ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’ সবেমাত্র শেষ হলো। মূল যাত্রীদের বেশিরভাগ যুব বয়সের কমিউনিস্ট, বিভিন্ন ফ্রন্টের নেতা। তাঁরা পালা করে সহজ সরল ভাষায় মানুষের কথা তুলে ধরলেন। যাত্রাপথে জমায়েত হওয়া মানুষের মধ্যে এক বিশাল আবেগ আর বাঁচার দাবিতে লড়াই করার স্পৃহা তৈরি হলো! যে সমস্ত বিষয় উঠে এসেছে এই পথযাত্রায়, তার অনেকগুলি সবাই জানতামও না। যন্ত্রণার বিষে নীল হয়ে যাওয়া গ্রাম গ্রামান্তর, গঞ্জের মহল্লা, শহর-নগরের মানুষের হৃদয়ে সংগ্রামী মেজাজ সঞ্চারিত করতে পেরেছে— বাংলা বাঁচাও যাত্রা! যাত্রীদের স্লোগানে, নেতৃত্বের সহজ ভাষণে মানুষের মনে অনেক দিন ধরে অনুপস্থিত নতুন ধরনের সাহসের সঞ্চালন হয়েছে নিঃসন্দেহে। 
বামপন্থীরাই যে সত্যিকারের বিকল্পের কথা বলে, তার সন্ধান অনেকটাই পেয়ে গিয়েছেন এ রাজ্যের মানুষ। মানুষের কথায় সেই বিকল্পের কথাগুলো উঠে আসছে। যখন অভিযাত্রীরা মানুষের সঙ্গে সন্ধে কি রাতের বৈঠকি সভায় মিলিত হয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে কথোপকথন হয়েছে, তখন, মানুষের মনে এক নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। তাঁরা যেন একটা ভরসার জায়গা ফিরে পেয়েছেন।
দুই
বাংলা বাঁচাও যাত্রা ধারাবাহিক সংগ্রামের এক উচ্চতর মাত্রা। গত বছর এপ্রিল মাসে ব্রিগেডে শ্রমজীবীদের যে বিশাল জমায়েত হয়েছিল, তার বর্ণনা পাই কলকাতা কলেজ স্ট্রিটের বুলবুল ইসলামের এই বর্ণনায় - “মানুষ... মানুষের মুখ... গলার হার বেরিয়ে আসছে প্রায়, একটা ফতুয়া, একটা ধুলো জমা লুঙ্গি, জরাজীর্ণ একটা জুতো, মিছিলে হাঁটছেন... কয়েকজন ফোর্ট উইলিয়ামের ঠিক উল্টোদিকের মাঠে বসে পড়েছেন টিফিন বাক্স করে ছোলা এনেছেন গুটি কয়েক, সঙ্গে কয়েক কিলো মুড়ি, খেতে বসেছেন একটা থালায় পাঁচজন থেকে সাতজন মিলে... কেউ মুড়ি, কেউ শসা, কেউ শাকালু, কেউ মুড়ি জল দিয়ে ভিজিয়ে খাচ্ছেন, কেউ মুড়ি দিয়ে ঘুঘনি মেখে খাচ্ছেন...
একজন ভদ্রমহিলা হাঁটতে পারছেন না, পায়ের কিছু সমস্যার কারণে সঙ্গে যিনি আছেন তাঁর কাঁধে ভর করে চলছেন গোটা মাঠ ভর্তি ধুলো ওড়া ব্রিগেডের দিকে... একজন সত্তরোর্ধ্ব মানুষ একজন মধ্য বয়সির কাঁধে চড়ে চলেছেন মিছিলে...মাঠের চারদিকে তাকালে গ্রামের মানুষের গন্ধ। মাঠের চারদিকে চোখ রাখলে মুড়ির গন্ধ...
মাঠের চারদিকে চোখ ফেরালে রোদের তাপে মুখের চারদিকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা উজ্জ্বল অথচ চকচকে নয় এমন মুখের সারি...
কেউ লুঙ্গি, কেউ ছোট ধুতি, কেউ সদ্য কেনা ছাপা শাড়ি, কেউ একটা ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া সালোয়ার, কেউ ফ্রক...
এই ছবিগুলো বহুদিন দেখিনি, দেখছি আরও এগচ্ছি...আমাদের টিশার্ট, জিন্স, প্যান্ট, সানগ্লাস, স্নিকারগুলোও যেন অবাক হয়ে দেখছে তাঁদের... খেতমজুর, কলকারখানার শ্রমিক, অসংগঠিত শ্রমিক থেকে বস্তিবাসী গ্রামীণ মানুষের দৃপ্ত পদচারণা সারা ব্রিগেড জুড়ে...
এটাই আলো, আলোর রেখা, এই আলোর রেখায় উদ্ভাসিত মাথায় লাল টুপি, কাঁধের লাল ঝান্ডা তুলে নেওয়া আমাদের আবেগের আমাদের স্বপ্নের লাল টুকটুকে একটা দিন...
বক্তারা তাঁদের কাজ শেষ করেছেন...
মাঠের চারদিকে বর্জ্য পদার্থের স্তূপ ইতিউতি ছড়িয়ে...
লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে এক মাঝ বয়সি ভদ্রমহিলা অনেকের সঙ্গে মাঠে ঝাড়ু দিচ্ছেন ... তিনিই ছিলেন এবারের ব্রিগেডের অন্যতম বক্তা নাম বন্যা টুডু...”
এরকম এক ব্রিগেডের বৃহত্তর রূপ দেখলো রাজ্যের মানুষ এই বাংলা বাঁচাও যাত্রায়। যেখানে প্রতিজ্ঞা-প্রতীতিটা ছিল মূল বিষয়। 
তিন
বছর চল্লিশেক আগে থেকেই উৎকটভাবে হিংস্র জিঘাংসা নিয়ে হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িকতার দাপট বেড়েছে। এখন তার চেহারা বীভৎস। কমরেড কারাট বলেছেন, এরা হিন্দু রাষ্ট্র নয়, ‘হিন্দুত্ব রাষ্ট্র’ কায়েম করতে চায়। নাগপুরে আরএসএস’র হেড কোয়ার্টারে দেশের রাঘববোয়াল পুঁজিপতিদের নিয়মিত যাতায়াত আছে এবং তারা অর্থ দিয়ে আরএসএস–কে সহযোগিতা করে। বদলে আরএসএস, তাদের শাখা সংগঠন রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন বিজেপি-কে দিয়ে, ওরা যাতে বেপরোয়াভাবে লুটপাট চালাতে পারে তার গ্যারান্টি দেয়। তাই আজকের বিজেপি দল ইটালি বা জার্মানির মতো হুবহু এক না হলেও, এক ধরনের ফ্যাসিবাদ ছাড়া কিছু নয়। নয়া ফ্যাসিবাদ। এরা হিংসা জিঘাংসাকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে। সঙ্গে ফ্যাসিবাদের অন্যান্য বিকৃতিগুলি তো আছেই!
আমাদের রাজ্যটা ঐ পাপ-শক্তির দোসর। ফ্যাসিবাদ কায়েমের দানবদের দ্বারা এরাও সৃষ্ট। এই সরকারের কাজ-কর্ম, চলন বলন সবই আরএসএস-বিজেপি’র অনুসারী। এসব এখন আমাদের সব সাথিরাই জানেন, তাই বাগবিস্তার করছি না।    
চার  
নির্বাচনী সংগ্রাম— নির্বাচনে আমাদের অংশগ্রহণ করতে হয় আমাদের মতাদর্শ আর রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য। কিন্তু অর্থ বলে, মিডিয়া বলে, গুন্ডা মস্তান মাফিয়া বলে, পুলিশ-প্রশাসন বলে, তার সঙ্গে এবারে নতুন আপদ নির্বাচন কমিশন – সিএএ-এনআরসি’র বলে, স্বদেশি ও বিদেশি পুঁজিপতিদের স্বার্থে, তাদেরকে পরোক্ষভাবে সঙ্গে নিয়ে, নির্বাচনী প্রচারণা আমাদের শত্রু বিজেপি–তৃণমূল দল দু’টি করে থাকে।
পশ্চিমবঙ্গের কোনও ভোটেই মানুষের প্রকৃত মানোভাবের প্রকাশ হয় না। কারণ, বুথগুলো তো তৃণমূলী গুন্ডারা দখল করে নেয় ডিএম–এসডিও–বিডিও; এসপি-ডিএসপি–আইসি–ওসি’দের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে। তারা আবার চলে, কলকাতার নবান্ন’র অফিসারদের দ্বারা, আর সেই অফিসাররা আবার চলে পিসি–ভাইপোর অঙ্গুলি হেলনে। ২০২৪-এর নির্বাচনে তৃণমুল সরকার ওদের দাসানুদাস প্রশাসন, আর দুষ্কৃতীবাহিনী অশ্রাব্য গালি দিতে দিতে বেরিয়ে, আবার মদ-মাংসের আড্ডায় বসে পড়ে। ভোট লুটের সঙ্গেই চলে ব্যালট পেপার লোপাট— গণনা কেন্দ্রে, ঐ তৃণ গুন্ডাদের দ্বারাই; আর আগাপাশতলায় ছড়িয়ে থাকা পূর্বোল্লিখিত পুলিশ-প্রশাসকদের প্রত্যক্ষ মদতে। সব ভোটের কথাই বলছি। শুধু ভোটের সময় নয়, গণনার সময় নয়, ভোটে ‘জিতে’ তাদের রোয়াব আরও বেড়ে যায়। কোনও বামপন্থীর ফসল নষ্ট করে, কারও পুকুর লুট করে, কোথাও সমবায়ী প্রথায় আইনসংগতভাবে চলা পুকুরের মাছ লুট করে, আর কোথাও বিজয়োল্লাসে বামপন্থী ভোটারের ছোট্ট শিশুকন্যাকে হত্যা করে!       
এই অপশক্তিকে পরাজিত করার রাস্তা মূলত দুটি— জনগণের সঙ্গে নিবিড়তম সংযোগ রক্ষা করা ও তাদের সক্রিয় করা। বড় জনসভা করতে হলে, তার প্রস্তুতির কাজ মাইক যোগে প্রচারের হাতে ছেড়ে দিলে চলবে না, তার প্রস্তুতিতেও মূলত বৈঠকিসভার ওপর জোর দিতে হবে।   
আগের দুষ্কৃতী কাণ্ডগুলির বিষয়, মানুষের মানসপটে যাতে জাগরিত হয়, সেজন্য প্রসঙ্গগুলো উত্থাপন করে, অবাধ ভোট নিশ্চিত করতে মানুষকে একাধারে জেদি ও জঙ্গি কর্মীতে পরিণত করতে হবে। বুথে বুথে ভলান্টিয়ার বাহিনীকে সক্রিয় করতে হবে, সজ্জিত করতে হবে। তারই ডাক দিয়েছে এই ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা।’ 
এজন্য কোনও মামুলি গতানুগতিক ধারণা থেকে নয়, উল্লিখিত ধরনের নির্বাচনী যুদ্ধের অংশ হিসাবে বুথ পার্টি টিম গঠন করার কাজ কোনও জায়গায় যদি দীর্ঘিদিন ধরে পড়ে থাকে, তাকে দ্রুত শেষ করতেই হবে। 
এবারে নতুন আপদ নির্বাচন কমিশন, এসআইআর। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এসআইআর’র কাজে সতর্ক নজর রাখতে হবে। যাতে কোন ভুয়ো, মৃত, স্থানান্তরিত ভোটার— যার হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না – তাদের নাম যেন ভোটার তালিকায় না থাকে। এই লড়াইয়ে সাধারণ মানুষকে শামিল করতে হবে। আর কয়েকদিন পরে এসআইআর’র জটিলতা অনেক বাড়বে। তাই আমাদের খুব সতর্ক উদ্যোগ জরুরি।   
বিজেপি-তৃণমূলের বাইনারি 
তৃণমূল দলটি যে বিজেপি’র দ্বারা সৃষ্ট, দলটির যে বিজেপি’র সঙ্গে আদতে কোনও তফাত নেই, এসব উদাহরণ দিয়ে বারবার বলতে হবে মানুষের কাছে। বিজেপি–তৃণমূলের অশুভ আঁতাত মোকাবিলা করতে যে একমাত্র সিপিআই(এম)’র নেতৃত্বে বাম গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির নীতিসম্মত জোটই যোগ্য, সেই বিশ্বাস ও আস্থাবোধ জাগিয়ে তোলাটাই এখনকার অন্যতম কাজ। এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের যুক্তফ্রন্ট, বামফ্রন্ট, কেরালার বাম-গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট, ত্রিপুরার বামফ্রন্ট্রের সুকৃতির বিষয়গুলো তুলনামূলকভাবে তুলে ধরা বিশেষ গুরুত্বপুর্ণ। মানুষের মধ্যে হতাশা কাটার ইতিবাচকতা দেখা যাচ্ছে। আমরা ভুলবোঝা মানুষকে অনেক সময় আলোচনায় পরাজিত করে আনন্দ পাই। কিন্তু সেটা ঠিক পথ নয়। আসলে তাঁদের জয় করতে হবে আমাদের। মানুষের প্রলোভন ও ভয়ও আছে ভালো পরিমাণে। এগুলো কাটানোর কাজে গুরুত্ব দিতে হবে সব থেকে বেশি। তার সঙ্গে গণঅর্থসংগ্রহ না করতে পারলে কাজে কর্মে আমরা হোঁচট খাবো প্রতিপদে। সেই কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের শেষ করতে হবে। উল্লিখিত অনেক আহ্বানই দিয়েছে ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’।  
এতো গেলো মূল পার্টির বিষয়ে কথা। কিন্তু গণসংগঠনগুলির কাজের মাত্রা ও পরিমাণ না বাড়ালে এবং ইতিমধ্যে উল্লিখিত ধারার কাজে, তাদেরও না নামাতে পারলে অভিপ্রেত গন্তব্যে আমরা পৌঁছাতে পারব না! বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে এদের কাজে নামাতে হবে। 
পার্টির পত্র-পত্রিকা, ওয়েবসাইট এবং সামাজিক মাধ্যমে যা প্রতিদিন প্রকাশিত হয় তা নিয়মিত পড়তেই হবে। নিজেদের আপডেটেট না রাখলে হবে না।  
অতএব আমরা জীবন্ত সংযোগ রেখে প্রধানত শ্রমিক (অসংগঠিত শ্রমিক সহ), গ্রামীন শ্রমজীবী সহ খেতমজুর, গরিব কৃষক, মাঝারি কৃষক, শহর গঞ্জের বিভিন্ন মধ্যবিত্ত গণতান্ত্রিক মানুষের ইস্যুগুলিকে নিয়ে সংগ্রাম বা আন্দোলন করতে বাধ্য। কারণ, তারাই চরম শোষিত এবং তাদের সংখ্যাই সর্বাধিক। এভাবে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের।     
কমরেড বিনয় কোঙার বলতেন– একটা পাথরের চাঙড়কে নিচ থেকে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে বেয়ে বিরাট শক্তি ব্যয় করে অনেক দূর পর্যন্ত উঠিয়ে যদি ছেড়ে দেওয়া যায়, তবে তা গড়িয়ে নিচেই চলে আসবে আবার। তাই পাথরের চাঙড় ছেড়ে দেওয়া চলবে না। সম্মিলিত শক্তি প্রয়োগ করে ধরে, তাকে অভিপ্রেত লক্ষ্যে নিয়ে যেতে হবে।  
নিয়ত জনগণের মধ্যে থাকলে আমরা অপরাজেয়। বিশ্ব কমিউনিস্ট নেতারা আমাদের এই কথাই নানা ভাবে শিক্ষা দিয়েছেন। কমরেড স্তালিনের আন্টিয়ুস বনাম হারকিউলিসের উপখ্যান আমরা প্রায় সবাই জানি। আন্টিয়ুস মাটি লগ্ন এক অপরাজেয় বীর ছিলেন। কিন্তু মাটি থেকে তুলে কিছুক্ষণ শূন্যে ধরে রাখলেই, তিনি আর কিছু করতে পারতেন না। হারকিউলিস এই বিষয়টি জানতেন এবং তিনি আন্টিউসকে কিছুক্ষণ দু’হাত দিয়ে ওপরে রাখতেই তাঁর দম ফুরিয়ে গেল। তিনি পরাজিত হলেন। 
কমরেড স্তালিন সেই কাহিনিটি বিবৃত করে বললেন— 
“আমার মনে হয় যে, বলশেভিকরা গ্রিক পুরাণের বীর আন্টিয়ুসের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আন্টিয়ুসের মতো বলশেভিকরাও শক্তিশালী। জনগণই তাদের জন্ম দিয়েছে, বাঁচিয়ে রাখিয়াছে, লালন-পালন করেছে; বলশেভিকরা তাদের সেই মাতা অর্থাৎ জনগণের সাথে সংযোগ বজায় রাখে বলেই শক্তিশালী। যতদিন বলশেভিকরা তাহাদের জননী এই জনগণের সহিত সংযোগ বজায় রাখিয়া চলিবে, ততদিন তাহাদের অপরাজেয় থাকার পূর্ণ সম্ভাবনা থাকবে। এটাই হলো বলশেভিক নেতাদের অপরাজেয়তার মূল সূত্র।”
অতএব আমাদের, গ্রাম, পাড়া, বস্তি, মহল্লায় মহল্লায় বৈঠকগুলি নিয়মিত করতে হবে। সভাগুলিতে মানুষ যাতে আন্তরিকভাবে তাদের মতামত দেয় এবং কথাবার্তা বলে, তারপর আমাদের কথা বলতে হবে। একাজে তরুণ কমরেডদের থাকা আবশ্যিক। আর বলার ধরন হতে হবে সহজ সরল। উপমা দিয়ে বিষয় বোঝানোর অনেক গল্প আছে। সেগুলি ব্যবহার করলে খুব ভালো হবে।  
মানুষকে নিয়ে, এখনকার বিদ্যমান পরিস্থিতির মধ্যে আদায়যোগ্য বিষয়ে স্থানীয় আন্দোলন করার অনেক সুযোগ এসেছে। যেমন, ধানের ধলতা কাটার বিরুদ্ধে আন্দোলন। অনেক জায়গায় এই দাবি আদায়ও করা সম্ভব হচ্ছে। এরকম অনেক জ্বলন্ত সমস্যায় মানুষ জর্জরিত, এইসব আদায়যোগ্য দাবিগুলি নিয়ে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলার সুযোগ আমাদের আছে। সেগুলিতে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দিতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত নাছোড় আন্দোলন করেই প্রতিকুল পরিবেশের মোড় ঘুরাতে হবে।  
সাম্প্রতিক বন্যার সময় বিপন্ন মানুষের পাশে তড়িৎ গতিতে পৌঁছে আমাদের সাথিরা ত্রাণ পৌঁছে দিলেন, দাবি আদায়ে সঙ্গ দিলেন, সাহস জোগালেন– এসব আমাদের কাছে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ ধরনের কাজ প্রগতিবাদীরাই করতে পারেন। তাই সঙ্কটের সমস্ত বিহ্বলতা কাটিয়ে আমাদের জনগণের পাশে থাকতেই হবে। 
আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য প্রচারের কাজ গুরুত্বপুর্ণ। আন্দোলন গড়ে তুলতে ও তার প্রস্তুতির কাজে গতি আনতে সাংস্কৃতিক উপাচার আবশ্যিক। গণনাট্যের গান, আদিবাসী ও লোকসংস্কৃতি সঙ্ঘের লোকগান, লোকনাটক ও সহজ ছোট নাটকের ওপর বিশেষ জোর দিতে হবে। এগুলি পাড়া বৈঠকগুলি শুরুর আগে/পরে করতে হবে। তাহ’লে বৈঠকি সভাগুলো আন্তরিকতায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে।
আমাদের পরিবৃত্তের মধ্যবিত্ত অনেকের জীবন-যাপনের, মন-মানসিকতার মধ্যে যে জাড্যতা বিরাজ করছে, তার পরিবর্তন ঘটাতেই হবে। কাজের ধারার পরিবর্তনের জন্য তাঁর এই কথাগুলোকে আমাদের মান্যতা দিতেই হবে। এসব আহ্বানই নিয়ে এসেছে এই ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’। 
অর্থাৎ ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’ যে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে দিল, তা আমাদের অম্লান রাখা শুধু নয়, অতঃপর আমাদেরকে নির্বাচনী সংগ্রামে বিপুল বিজয় সহ, আরও আরও উজ্জ্বল সোনালি দিগন্ত উন্মোচিত করতে হবে। হবেই।
Highlight
তৃণমূল দলটি যে বিজেপি’র দ্বারা সৃষ্ট, দলটির যে বিজেপি’র সঙ্গে আদতে কোনও তফাত নেই, এসব উদাহরণ দিয়ে বারবার বলতে হবে মানুষের কাছে। বিজেপি–তৃণমূলের অশুভ আঁতাত মোকাবিলা করতে যে একমাত্র সিপিআই(এম)’র নেতৃত্বে বাম গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির নীতিসম্মত জোটই যোগ্য, সেই বিশ্বাস ও আস্থাবোধ জাগিয়ে তোলাটাই এখনকার অন্যতম কাজ।

Comments :0

Login to leave a comment