‘ভিবি জি রাম জি’ বিল এনে গ্রামীণ গরীব মানুষের কাজের অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। এমজিএনরেগা প্রকল্পের বদলে কেন্দ্রীয় সরকার যেই নতুন প্রকল্পের বিল লোকসভায় পেশ করেছে তা নিয়ে আলোচনার সময় বললেন শিকরের সিপিআই(এম) সাংসদ অমরা রাম। তিনি বলেন, ‘বামপন্থীরা গোটা দেশে প্রথম থেকেই শ্রমিক এবং প্রান্তিক মানুষের দাবি নিয়ে লড়াই করে এসেছে। ২০০৪ সালে বামপন্থীদের সমর্থন নিয়ে যখন প্রথম ইউপিএ সরকার তৈরি হয় তখন গ্রামীন মানুষদের রোজগারের জন্য ১০০ দিনের কাজ চালু করেছিল। বিজেপি সরকার সেই আইন বাতিল করতে চাইছে। ওরা ১২৫ দিনের কথা বলছে। কিন্তু গরীবের মানুষের কাজ কেড়ে নেওয়া হবে এই নতুন আইনের মাধ্যমে। কেরালার বামপন্থী সরকার একমাত্র সরকার যারা এমজিএনরেগা কর্মীদের জন্য আলাদা একটা বোর্ড তৈরি করেছে। তাদের সমস্যার সমাধান করার জন্য। বিজেপি শাসিত একটা রাজ্যেও সেই বোর্ড হয়নি।’
অমরা রাম বলেন, ‘আগে এই ১০০ দিনের কাজের জন্য এক লক্ষ কুড়ি হাজার কোটি টাকার বাজেট ছিল। এখন ৬২ হাজার কোটি টাকা মাত্র বরাদ্দ করা হয়েছে। এখান থেকে বোঝা যাচ্ছে এই সরকার গরীব বিরোধী।’
যেই বিল পেশ করা হয়েছে তাতে কেন্দ্রীয় আইনে চালু হবে প্রকল্প। কিন্তু একশো দিন কাজের আইন (এমজিএনরেগা)’র মতো নয়। বেশিরভাগ রাজ্যে মজুরি বাবদ খরচের ৪০ শতাংশ দায়ভার চাপবে রাজ্যের ওপর।
বস্তুত নাম পালটে নতুন আইন ‘ভিবি জি রাম জি’ গ্রামে কাজের আইনি অধিকারের আর্থিক দায়ভারের বড় অংশই ঠেলে দেবে রাজ্যের ওপর।
মঙ্গলবার গ্রামীণ পরিসরে জনপ্রিয় এমজিএনরেগা-র পরিবর্তে বিকশিত ভারত রোজগার ও আজীবিকা মিশন (গ্রামীণ) বিল (ভিবি জি রাম জি), ২০২৫ পেশ করা হয় সংসদে। তুমুল প্রতিবাদ জানান বিরোধী সাংসদরা। এমজিএনরেগা বাতিলের প্রতিবাদে সংসদ ভবনের বাইরে বিক্ষোভ দেখান বামপন্থী সাংসদরা। বিলে ১২৫ দিন কাজের নিশ্চয়তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিরোধীরা বলেছেন, চালু আইন সংশোধন করেই তা করা যেত। দুশো দিন কাজ দেওয়ার দাবিও রয়েছে। আসলে গ্রামে কাজের নিশ্চয়তার আইনি অধিকারকে চৌপাট করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান পেশ করেন এই বিল। তাতে বলা হয়েছে, বিল পাশের ছয় মাসের মধ্যে আইন অনুযায়ী প্রকল্প রূপায়ণ করতে হবে রাজ্যগুলিকে। এতদিন এই দায়িত্ব ছিল কেন্দ্রের উপরই। এজন্য, বিল পেশ হওয়ার পরেই লোকসভায় সামনে বিলের বিরোধিতা করে প্রতিবাদ জানায় বিরোধী দলগুলি। পাশাপাশি, বিল থেকে মহাত্মা গান্ধীর নাম সরিয়ে দেওয়া নিয়েও বিক্ষোভ দেখান তাঁরা।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিবরাজ শিং চৌহান বিল পেশ করার সময় বলেন, সরকার শুধুমাত্র মহাত্মা গান্ধীর আদর্শকে নয়, তাঁর নীতিকেও মান্যতা দেয়। পাশাপাশি, তিনি আরও বলেন, আগের সরকারের তুলনায় মোদী সরকার গ্রামীণ জনজীবনের উন্নয়নের জন্য অনেক বেশি চিন্তা করে।
বিভিন্ন বিরোধী দল বিরোধিতা করায় বিশদ পর্যালোচনার জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।
নতুন বিলে সরকার একটি আর্থিক বর্ষে ১২৫দিনের কর্মসংস্থান সহ মজুরি গ্যারান্টি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
‘ভিবি জি রাম জি,২০২৫ বিল’ অনুযায়ী, মজুরি বাবদ খরচের ৬০ শতাংশ বইবে কেন্দ্র। বাকি ৪০ শতাংশ বইতে হবে রাজ্যকে। কেবল জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তর পূর্বের রাজ্য, পাহাড়ি রাজ্যে এই অনুপাত হবে ৯০:১০। যে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিধানসভা নেই কেবল আন্দামান ও নিকোবরের মতো এমন কয়েকটি এলাকায় মজুরি খরচের পুরোটাই বইবে কেন্দ্র।
এখন চালু এমজিএনরেগা অনুযায়ী মজুরি খরচের গোটাটাই বইতে হয় কেন্দ্রকে। রাজ্যকে খরচ করতে হয় জবকার্ড হোল্ডার কাজ না পেলে তার জন্য ভাতা। এছাড়া সামগ্রী সরঞ্জাম বাবদ খরচের ২৫ শতাংশ বইতে হয়, রাজ্যকে। আর রাজ্য স্তরে প্রশাসনিক খরচ করতে হয়।
Amra Ram
গ্রামীণ গরীব মানুষের কাজের অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার : অমরা রাম
×
Comments :0