কেবল পাহাড় নয়। পুরো উত্তরবঙ্গকে এখানকার বাসিন্দাদের জন্য নিরাপদ করতে হলে সবার আগে এখানকার প্রকৃতিকে লুটেরাদের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। কিন্তু প্রকৃতির লুটেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন জোগাচ্ছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
দার্জিলিঙে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সফর প্রসঙ্গে একথা বলেছেন সিপিআই(এম) নেতা এবং রাজ্যের প্রাক্তন পৌর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য।
বৃহস্পতিবার ভট্টাচার্য বলেছেন, আশা ছিল, এতো বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উত্তরের পাহাড় ও সমতল ঘুরে দেখে উত্তরবঙ্গবাসীর মনোভাব, তাঁদের নিরাপত্তাহীনতার কারণ বুঝতে পারবেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তিনি তা পারেননি। শুধুমাত্র নির্বাচনকে সামনে রেখেই মুখ্যমন্ত্রীর আসা-যাওয়া হয়েছে উত্তরবঙ্গের পাহাড় ও সমতলে।
ভট্টচার্য বলেন, দার্জিলিঙ পাহাড় সহ উত্তরবঙ্গের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মূল কারণ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী একটি কথাও বলেননি। দক্ষিণবঙ্গে দামোদরের বাঁধ ভেঙে দেবার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তিস্তার উপরে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩৩টি ডাম্প তৈরি হওয়ার ফলেই আজকে তিস্তা নদীর গতিপ্রকৃতি পরিবর্তিত হচ্ছে। তিস্তার অববাহিকা অঞ্চলে একের পর এক ধস নামছে। ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগে। এত বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের এটি যে মূল কারণ, সে বিষয়েও মুখ্যমন্ত্রী কিছুই বলেননি। পাহাড় কেটে সুড়ঙ্গ করে যে রেলপথ নির্মাণ করা হলো, তা নিয়েও কোনও কথা নেই মুখ্যমন্ত্রীর মুখে।
বৃহস্পতিবারও সিপিআই(এম) দার্জিলিঙ জেলা কমিটির প্রতিনিধিদল ত্রাণসামগ্রী নিয়ে পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছে মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিলিবণ্টন করেছেন। দার্জিলিঙ জেলার ধসবিধ্বস্ত এসব এলাকাগুলিতে এখনও সরকারের দৃষ্টি পৌঁছায়নি। স্বাভাবিকভাবেই সরকারি ত্রাণও পাননি ক্ষতিগ্রস্তরা। ভূমিধসের এতদিন পরেও কেমন আছেন মিরিক ব্লকের তিরুয়া বস্তি ও ডাম্ফেটারের মানুষ, তার খোঁজ নিতেই এদিন সকালে দুই এলাকায় পৌঁছে যান সিপিআই(এম) কর্মীরা। ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে ত্রাণসামগ্রী তুলে দিয়েছেন পার্টি নেতৃবৃন্দ। ক্ষতিগ্রস্তদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি সাধ্যমতো তাঁদের পাশে থাকার কথাও বলেন নেতৃবৃন্দ।
এদিন মিরিক ব্লকের দুধিয়ার তিরুয়া বস্তি এবং ডাম্ফেটারে ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন ছাত্ররাও। এসএফআই রাজ্য কমিটির উদ্যোগে, দার্জিলিঙ জেলা কমিটির সহযোগিতায় এই ত্রাণসামগ্রী বিপর্যস্ত মানুষের মধ্যে বিলি করা হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) দার্জিলিঙ জেলা সম্পাদক সমন পাঠক, ছাত্রনেতা অঙ্কিত দে, শৌভিক দাসবক্সী, ডাঃ অনুরণ পাল, তাজবুল হক সহ অন্যান্যরা।
এদিন অশোক ভট্টাচার্য বলেন, পাহাড় এখানে মূলত ভঙ্গুর। শক্তি বহনের ক্ষমতা নেই। সেই পাহাড় আরও দুর্যোগপ্রবণ হয়ে উঠেছে রেললাইনে স্থাপনের দরুন। আমরা হোম-স্টের বিরুদ্ধে নই। পাহাড়ের স্থানীয়রা তাঁদের বাড়ির একটি বা দু’টি ঘর ভাড়া দিতে পারেন। হোম-স্টে’র মানে তাই ছিল। আর এভাবেই পাহাড়ে হোম-স্টে’র বিষয়টি শুরু হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে হোম-স্টে’র নামে পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সের জমি কোথাও বা নদীর পাড়ের জমি, উপজাতিদের জমি দখল হচ্ছে। দখলের এই জমি চলে যাচ্ছে বাইরের মানুষের হাতে, কর্পোরেট সংস্থার দখলে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে গড়ে উঠছে সুদৃশ্য চার-পাঁচতারা হোটেল ও রিসর্ট। নিয়ম রয়েছে পাহাড়ে ১১ মিটারের নিচে বাড়ি তৈরির। কিন্তু সেসব নিয়ম উপেক্ষা করে দার্জিলিঙে একের পর এক ১১ মিটারের বেশি উচ্চতার বেআইনি বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। সেবিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী কোন নীতি গ্রহণ করেছেন? নদীগুলির বাঁধ কেন টেঁকসই হচ্ছে না? বারবার কেন ভেঙে পড়ছে নদীবাঁধ? এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর না দিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরের সফর সেরে ফিরে গিয়েছেন।
তিনি বলেন, হোমগার্ডের চাকরি কোনও স্থায়ী চাকরি নয়। এভাবে হয় না। বিপর্যয়ের সময়ে আমিও পাহাড়ের নানা জায়গায় ঘুরেছি। মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। পাহাড়ের মানুষ ত্রাণশিবিরে আর থাকতে চাইছেন না। নিরাপদ স্থানে স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক, এমনটাই চাইছেন তাঁরা।
এদিকে, এদিন সারা ভারত কৃষকসভা মাটিগাড়া ব্লক কমিটির উদ্যোগে মাটিগাড়া খাপরাইল মোড় এলাকায় ত্রাণ সংগ্রহ করা হয়। এখানে ছিলেন কৃষকসভার দার্জিলিঙ জেলা সম্পাদক ঝরেন রায়, তাপস সরকার, শম্ভু প্রসাদ, চৈতন্য মণ্ডল, ধনহরি বর্মণ সহ অন্যান্যরা। এছাড়াও বুধবার সন্ধ্যায় সিপিআই(এম) মাটিগাড়া এরিয়া কমিটির উদ্যোগে মাটিগাড়া হাটে ত্রাণ সংগ্রহ করা হয়। উপস্থিত ছিলেন পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য গৌতম ঘোষ, পার্টিনেতা তাপস সরকার, ভবেন্দু আচার্য, শম্ভু প্রসাদ, নিমাই চক্রবর্তী প্রমুখ।
North Bengal Loot
উত্তরবঙ্গে প্রকৃতির লুটেই মদত মুখ্যমন্ত্রীর, ক্ষোভ অশোক ভট্টাচার্যের

×
Comments :0