Bangladesh

সিপিবি সহ বাম জোটের নেতাকর্মীরা আটক বাংলাদেশে, তীব্র নিন্দা

আন্তর্জাতিক

মীর আফরোজ জামান: ঢাকা 
বাংলাদেশের সিলেটে ব্যাটারিচালিত রিকশা শ্রমিকদের আন্দোলনে মদত  দেওয়ার অভিযোগে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি’র জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন সুমনকে আটকের পর বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) ২২ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের পরিচয় জানা যায়নি। ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।
শনিবার দুপুরে বাসদের সিলেট নগরীর আম্ভরখানা অফিস ঘেরাও করে তাদের আটক করা হয়। পরে তাদের কতোয়ালি থানায় নিয়ে রাখা হয়। বাসদ নেতারা দাবি করেছেন পাঠচক্র চলাকালে অফিস ঘেরাও করে ২২ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের কারও আন্দোলনের সঙ্গে যোগাযোগ নেই।
এ বিষয়ে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যকে  জানান, নিষেধাজ্ঞা জারির পরও ব্যাটারিচালিত রিকশা শ্রমিকরা কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করেন। বাসদ অফিস থেকে তাদের আটক করা হয়। যাচাই-বাছাই চলছে। আটকদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মদত দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পেলে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
বাসদ সিলেট জেলা সভাপতি আবু জাফর জানান, ‘‘ব্যাটারিচালিত রিকশার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া সহ ১১ দফা দাবিতে শনিবার নগরের চৌহাট্টা থেকে পূর্বঘোষিত 'ভুখা মিছিল' কর্মসূচি ছিল। কিন্তু শুক্রবার রাতে পুলিশ নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। দলীয় অফিসে তাদের নিয়মিত পাঠচক্র চলছিল। দুপুরে অফিস ঘেরাও করে পুলিশ ২২ নেতাকর্মীকে ধরে নিয়ে যায়। অথচ এঁরা কোনো কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।’’
শুক্রবার রাতে একই ইস্যুতে নগরীর আখালিয়া কালিবাড়ি এলাকার বাসা থেকে সিপিবি নেতা আনোয়ার হোসেন সুমন আটক করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ‍ওঠে- ব্যাটারিচালিত রিকশা শ্রমিকরা গত মঙ্গলবার নগরীর চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনকালে সুমনসহ কয়েকজন রাজনীতিক নেতা বক্তব্য দেন।
এছাড়া বিভিন্ন মহল থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের দাবি ওঠার পর গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে মহানগরীতে অভিযান শুরু করে পুলিশ। এর প্রতিবাদে দফায় দফায় মাঠে নামেন শ্রমিকরা। তাদের মদত দেওয়ার অভিযোগ ওঠে সিপিবি ও বাসদের নেতৃবৃন্দসহ কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। সর্বপ্রথম গত ২৬ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলা বাসদের আহ্বায়ক আবু জাফর ও সদস্য সচিব প্রণব জ্যোতি পালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা ইতোমধ্যে জামিনে বের হয়েছেন।
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ, সিপিবি’র সভাপতি কমরেড সাজ্জাদ জহির চন্দন, সাধারণ সম্পাদক কমরেড আব্দুল্লাহ কাফি রতন, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক কমরেড ইকবাল কবির জাহিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশরেফা মিশু, বাসদ (মার্কসবাদী)’র সমন্বয়ক কমরেড মাসুদ রানা, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি কমরেড আব্দুল আলী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। নেতৃবৃন্দ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অফিসে পুলিশী অভিযান ও মিথ্যা হয়রানী মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের এবং শ্রমজীবী মানুষের উপর নির্যাতন নিপীড়ন চালানো হতো। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও রাজনৈতিক দলের অফিসে পুলিশী হামলা, মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার নির্যাতন দেশবাসী প্রত্যাশা করে না। বর্তমান সরকারের আমলে একদিকে নতুন কর্মসংস্থান নাই, শত শত কারখানা বন্ধ হয়ে শ্রমিক বেকার হচ্ছে। নিজের কর্মসংস্থানে যে সব মানুষ রিকশা, হকারি করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে সেই রিকশা উচ্ছেদ করে শ্রমজীবী মানুষদের জীবন জীবিকার পথ বন্ধ করে তাদের পরিবার পরিজনসহ অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিচ্ছে। শ্রমিকরা যখন তাদের জীবিকা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করছে তখন হামলা-নির্যাতন চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পুরছে।  অবিলম্বে গ্রেপ্তার নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তি এবং সকলের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।

Comments :0

Login to leave a comment