Demand for judicial inquiry into Deucha Panchami's lies

দেউচা পাঁচামী মিথ্যাচারে বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি

রাজ্য

দেউচা পাঁচামী ব্যাসল্ট (পাথর) খনি প্রকল্প নিয়ে রাজ্য সরকারের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি উঠেছে। সোমবার দেউচা পাঁচামী কয়লাখনি প্রকল্প নিয়ে ডাকা এক সাংবাদিক বৈঠকে একথা জানিয়েছেন সিপিআই(এম) বীরভুম জেলার সম্পাদক গৌতম ঘোষ। 
এদিন এই কয়লাখনি সংক্রান্ত বিষয়ে কলকাতার কিরণশঙ্কর রায় রোডে সাংবাদিক বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন অর্থনীতিবিদ সমাজকর্মী প্রসেনজিৎ বসু। এই বৈঠকে হাজির হয়েছিলেন দেউচা পাঁচামী এলাকার আদিবাসী অধিকার রক্ষা মঞ্চের সদস্যরা। হাজির ছিলেন জয় কিষাণ আন্দোলনের জাতীয় আহ্বায়ক অভীক সাহা এবং প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলি ইমরান খান। 
এদিনই এই দেউচা পাঁচামী কয়লাখনি প্রকল্প নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি সুজয় পালের ডিভিসন বেঞ্চে মামলার শুনানি ছিল। রাজ্য সরকারের তরফে কয়লাখনির বরাত সংক্রান্ত এবং ব্যাসল্ট খনির চুক্তিপত্র সহ যাবতীয় নথি আদালতে জমা দেওয়ার কথা ছিল। রাজ্য সরকার এদিন কোন নথি এবং তথ্য জমা করতে পারেনি। সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে আরও বেশ কিছুদিন সময় চাওয়া হয়েছিল। ডিভিসন বেঞ্চ রাজ্য সরকারকে একদিন সময় দিয়েছে। মামলাটি ফের বুধবার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে। 
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে এই কয়লাখনির বিরোধিতা করে গৌতম ঘোষ বলেন, ব্যাসল্ট বা কয়লাখনি নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের মিথ্যাচার চরমে পৌঁছেছে। এনিয়ে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে সিউড়িতে একটি বড়ো কনভেনশনের আয়োজন করা হয়েছে। আগামী ১৮ অথবা ১৯ সেপ্টেম্বর এই কনভেনশন হবে। সেখান থেকেই আদিবাসী মানুষকে রক্ষা করার কর্মসূচী নির্ধারণ হতে পারে। তিনি বলেন, বহু বছর আগে থেকেই মানুষ জানেন ওই অঞ্চলে মাটির অনেক নিচে কয়লা আছে। বীরভূমের গোটা মহম্মদবাজার ব্লক জুড়েই পাথর খাদান (ব্যাসল্ট) রয়েছে। এই অঞ্চলে বেশির ভাগটাই সংখ্যালঘু মানুষের বসবাস। এই পাথর খাদানের জন্য প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন রকমের অসুখে ভুগছেন। এই অঞ্চলে জলের স্তর রয়েছে মাটি থেকে ২৫০ থেকে ৩০০ ফুট নিচে। ফলে পানীয় জল এবং সেচের জলের জন্য হাহাকার রয়েছে। এই অবস্থায় কয়লাখনির জন্য জমি নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। উচ্ছেদ হচ্ছেন গ্রামের আদিবাসী মানুষ। জমি দখল করতে রাজ্য প্রশাসন হিংস্র হয়ে উঠেছে। আদিবাসী মানুষের লড়াই আন্দোলনে গ্রামের মহিলারা সামনে থাকেন। সম্প্রতি এই আন্দোলন প্রতিহত করতে সরকারের পুলিশ মহিলাদের ওপর অত্যাচার করেছে। এই অত্যাচারের ফলে একজন আদিবাসী মহিলার গর্ভস্থ সন্তান নষ্ট হয়ে গিয়েছে। গৌতম ঘোষ বলেন, এই অত্যাচারের পরও গ্রামে গ্রামে প্রতিরোধের ডাক রয়েছে। এই প্রতিরোধ ভাঙতে প্রতিদিন সন্ধ্যায় জেলাশাসকের অফিসে বৈঠক হয়। বৈঠকে গ্রামের কিছু তৃণমূলের সমর্থককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই বৈঠকে থানার ওসি এবং বিডিও থাকেন। কয়লাখনির নামে পাথর খাদানের কাজ বন্ধ করতে মানুষের প্রতিবাদ প্রতিরোধেও মানুষ জড়ো হচ্ছেন। 
আদিবাসী অধিকার রক্ষা মহাসভার পক্ষে জগন্নাথ টুডু বলেন, সরকার প্রচার করছে যাঁরা জমি দেবে তাঁদের পরিবারের একজনকে সরকারি চাকরি দেওয়া হবে। হাতে গোনা কয়েকজনকে সিভিক ভলেন্টিয়ার এবং অন্যান্য কাজ দেওয়া হয়েছে। যাঁদের কাজ দেওয়া হয়েছে তাঁদের সঙ্গে অনেক আগে থেকেই ডিএম অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। আবার এমন ঘটনাও ঘটেছে কাজ পেয়েছিলেন এমন যুবক কাজ ছেড়ে কয়লাখনির বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, গোটা অঞ্চলে এখন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে রান্না হয় না। স্কুলগুলিতে শিক্ষক নেই। রাজ্য পুলিশের অত্যাচার ক্রমশ বাড়ছে।
অভীক সাহা, প্রসেনজিৎ বসু এবং আলি ইমরান খান বলেন, রাজ্য সরকার বেআইনি কাজ করছে। কয়লাখনি এবং ব্যাসল্ট খনির সঙ্গে ওয়েস্টবেঙ্গল পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডের চুক্তি সম্পূর্ণ বেআইনি এবং একইসঙ্গে এখানে হিমাদ্রি কেমিক্যাল লিমিটেডের অংশগ্রহণ অনেকগুলি প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রসেনজিৎ বসু বলেন, ব্যাসল্ট খনির সঙ্গে হিমাদ্রি কেমিক্যাল লিমিটেডের সংযোগ নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। টেন্ডার এগ্রিমেন্টের কাগজপত্র বেআইনি। এই কেমিক্যাল লিমিটেডের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের লোকজন জড়িয়ে রয়েছেন বলে জোরালো অভিযোগ উঠেছে।

Comments :0

Login to leave a comment