অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, জীবনমান এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবনের বিকাশের সংযোগ ব্যাখ্যা করার জন্য অর্থনীতিতে নোবেল দেওয়া হলো তিন অর্থনীতিবিদকে।
জোয়েল মোকির, ফিলিপ অ্যাঘিয়ঁ, পিটার হাউইটকে এ বছরের জন্য বেছে নিয়েছে নোবেল কমিটি।
নোবেলের অর্ধেক অর্থ দেওয়া হয়েছে মোকিরকে। বাকি অর্ধেক অ্যাঘিয়ঁ এবং হাউইটকে। গাণিতিক উপস্থাপনায় এই দুই অর্থনীতিবিদ দেখিয়েছেন বাজারে নতুন প্রযুক্তি আসার সঙ্গে পুরনো প্রযুক্তিতে তৈরি পণ্যের বিনাশ। যে প্রক্রিয়াকে তাঁরা বলেছেন ‘সৃজনশীল বিনাশ’।
সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যায় নোবেল কমিটি বলেছে, মানবসভ্যতার ইতিহাসে শতাব্দীর পর শতাব্দী স্থবিরতা দেখা গিয়েছে। বৃদ্ধি হয়নি অর্থনীতির। উদ্ভাবন এবং তার বিকাশ অতি সীমায়িত থেকেছে। কখনও কখনও বৃদ্ধি হলেও তা স্থায়ী হয়নি।
বলা হয়েছে, গত ২০০ বছরের অভিজ্ঞতা সেই তুলনায় একেবারে আলাদা। নতুন প্রযুক্তি চালিত উদ্ভাবন এবং বৃদ্ধি স্থবিরতাকে দূর করেছে। নতুন ওষুধ, খাদ্য উৎপাদন প্রযুক্তি, ইন্টারনেট এবং সংযোগ প্রযুক্তির বিপুল উন্নতি আমরা দেখেছি। দুই শতাব্দীতে প্রায় সব কিছু বদলেছে। পরিবর্তনই স্বাভাবিক হয়ে উঠতে দেখা গিয়েছে।
বলা হয়েছে যে নতুন প্রযুক্তি যখন পুরনোকে সরিয়ে দিচ্ছে সমাজে দ্বন্দ্বও দেখা দিয়েছে। অর্থনৈতিক পরিকল্পনা কিভাবে নিশ্চিত করতে পারে যে সমাজ ফের স্থবিরতার যুগে ফিরে যাবে না তা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নতুন প্রযুক্তি, উদ্ভাবন এবং বৃদ্ধি এগুলি সর্বদা স্বাভাবিক নিয়মে হয় না। মোকির ইতিহাস ঘেঁটে সেই সব উপাদান খুঁজে বের করেছে যা স্থবিরতা কাটাতে সহায়ক হয়েছে।
নোবেল কমিটি জানিয়েছে, অ্যাঘিয়ঁ এবং হাউইট ‘সৃজনশীল বিনাশ’ প্রক্রিয়াকে তাত্ত্বিক রূপ দিয়ে তার ব্যাখ্যা করেছেন। এই তত্ত্ব আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে কোন অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ায় বৃদ্ধি স্থায়ী হয় এবং স্থবিরতাকে দূরে রাখা যায়।
বলা হয়েছে, মাথা পিছু অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, আমেরিকা এবং ব্রিটেনে, এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে দ্বিগুন হয়েছে। তার মূলে রয়েছে নতুন প্রযুক্তির বিকাশ।
কেন উদ্ভাবন চালিত বৃদ্ধি স্থায়ী ধরনের হয়েছে? কিভাবে পরস্পরবিরোধী স্বার্থকে জয় করেছে এই বৃদ্ধির প্রক্রিয়া। নোবেল কমিটির পক্ষে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে এই প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, মোকির ইংল্যান্ড এবং সুইডেনে মধ্যযুগে চারশো বছরের অর্থনীতিকে ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছেন যে উদ্ভাবনের উপাদান সত্ত্বেও চারশো বছর মাথা পিছু জাতীয় উৎপাদন বাড়েনি।
মোকিরের ব্যাখ্যা, প্রযুক্তি উদ্ভাবন হলেই হয় না। সমাজকে জানতে হয় সেই উদ্ভাবনকে কিভাবে কাজে লাগানো যায়। কিভাবে সেই উদ্ভাবন কাজ করবে সমাজকে তা-ও জানতে হয়। সমাজকে এগতে হয় নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগের দক্ষতা অর্জনের জন্যও। ব্যাপক অর্থে বললে বিজ্ঞানের গুরুত্ব সম্পর্কে সমাজকে সচেতন থাকতে হয়।
হাউইট এবং অ্যাঘিয়ঁর ‘সৃজনশীল বিনাশ’ তত্ত্বের ব্যাখ্যায় নোবেল কমিটি বলেছে যে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে উদ্ভাবনে একাধিক সংস্থাই বিনিয়োগ করে। তার মধ্যে যেগুলি চলে না তারা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে। একদিকে উদ্ভাবনে বিনিয়োগের জন্য উৎসাহ দিতে হবে নীতি নির্মাতাদের। আবার যারা এঁটে উঠতে পারেনি তাদেরও বিবেচনায় রাখতে হবে। এই তত্ত্বে বলা হয়েছে অর্থনৈতিক নীতিতে কোন কোন ক্ষেত্রে ভরতুকি দেওয়া প্রয়োজন, কোথায় নয়। কাজ হারানোর শঙ্কায় ভুগছেন যে শ্রমিকরা তাঁদের জন্য সুরক্ষা জালিকা কোথায় কোথায় করা প্রয়োজন, সে সম্পর্কেই দিশা দেখাচ্ছে এই তত্ত্ব।
উল্লেখ্য, এ বছরই তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্র সহ একাধিক ক্ষেত্রে বিপুল সংখ্যায় কর্মী ছাঁটাই হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির কারণে।
Nobel Prize Economics
এআই-ছাঁটাই পর্বে অর্থনীতিতে নোবেল প্রযুক্তি উদ্ভাবনের তত্ত্বে

×
Comments :0