Bangladesh

হেপাজতে বাংলাদেশের ১৫ সেনা আধিকারিক

আন্তর্জাতিক

মীর আফরোজ জামান: ঢাকা 
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন কর্মরত মিলিয়ে ১৫ জন সেনা আধিকারিক হেফাজতে। অভিযোগ, দেহ নিখোঁজ করে দেওয়া ও মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত বাংলাদেশের ১৫ সেনা আধিকারিক। শনিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মামলা-সংক্রান্ত বিষয়ে আয়োজিত ঢাকা সেনানিবাসের হলে সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান এই তথ্য দিয়েছেন।
মানবতা বিরোধী অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগে শেখ হাসিনা ও তাঁর দলের একাধিক মন্ত্রী-সাংসদ, দলের শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ আওয়ামি লিগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-এর নেতা হাসানুল হক ইনু ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। এছাড়াও আওয়ামি লিগ, যুবলিগ, ছাত্রলিগ ও বিভিন্ন গণসংগঠনের অসংখ্য কর্মীর বিরুদ্ধেও একই মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে প্রাক্তন কর্মরত মিলিয়ে ১৫ জন সেনা আধিকারিকের নাম। অভিযুক্তরা হলেন মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, কর্নেল কে এম আজাদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন। 
অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান এদিন জানান,শেখ হাসিনা ভারতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত দেহ নিখোঁজ ও মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারির নির্দেশ জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তিনি বলেন, যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট হয়েছে, তাদের মধ্যে ১৫ জন বর্তমানে সেনা হেফাজতে রয়েছেন। আমরা মোট ১৬ জনকে সেনা হেফাজতে আসার জন্য বলেছিলাম, তাদের মধ্যে ১৫ জন এসে হেফাজতে দিয়েছে। তিনি বলেন, ৩টি মামলায় ২৫ জন সেনা আধিকারিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অবসর নিয়েছেন ৯ জন, এলপিআরএ একজন, আর বর্তমানে কর্মরত ১৫ জন। মেজর জেনারেল কবির আত্মগোপনে করেছেন। তিনি যাতে বিদেশে চলে যেতে না পারেন, সেজন্য নজরদারি তৎপরতা অব্যাহত রাখা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত ৮ অক্টোবর মানবতা বিরোধী অপরাধের দুটি মামলায় ৩০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। প্রথম মামলায় র্যাাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে আটক ব্যক্তিদের নির্যাতনের অভিযোগে ১৭ জন এবং দ্বিতীয় মামলায় জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) নির্যাতনের ঘটনায় ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
দুটি মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে প্রক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। রয়েছেন তাঁর প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিকী এবং ডিজিএফআই’র প্রাক্তন ৫ ডিজি। এই ৩০ জনের মধ্যে ২২ জনই কর্নেল থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পর্যায়ের প্রাক্তন ও বর্তমান সেনা আধিকারিক।
মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রাক্তন ও বর্তমান ২৪ জন সেনা আধিকারিকদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।  গত ৮ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল এই নির্দেশ দেন। আগামী ২১ অক্টোবরের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করে ২২ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে বলা হয়েছে। 
তবে একসঙ্গে কর্মরত এতো সেনা আধিকারিককে আটকের ঘটনা নজীরবিহীন বলছেন  ওয়াকিবহাল মহল। বিষয়টি নিয়ে সেনাবাহিনীর মধ্যেও নানা আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment