Kargil veteran tortured suspecting Bangladeshi

কারগিল সংঘর্ষের সৈনিককে বাংলাদেশি তকমায় হামলা

জাতীয়

ছবি প্রতিকী

এবার কার্গিল সংঘর্ষের একজন সৈনিকের বাড়িতে ঢুকে বাংলাদেশি বলে হামলা চালালো উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। বিজেপি জোট শাসিত মহারাষ্ট্রের পুনেতে এই জঘন্য ঘটনা ঘটেছে। হাকিমুদ্দিন শেখ নামে সেনাবাহিনীর ওই প্রাক্তন কর্মীর পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত কমপক্ষে ৮০ জনের একটি দল পুনেতে তাঁদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে এবং জোর জবরদস্তি তাঁদের ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ দেখতে চায়। এমনকী জয় শ্রী রাম স্লোগান দিয়ে ওই সেনা কর্মীর বাড়ির প্রত্যেককে বাংলাদেশি বলেও অভিযোগ করে উগ্র হিন্দুত্ববাদী দুষ্কৃতীরা। 
শনিবার মধ্যরাতে শহরের চন্দননগর এলাকায় অবসরপ্রাপ্ত সেনার বাড়িতে হামলা হয়েছে। বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, সাদা পোশাকে থাকা পুলিশের সামনেই এই হামলা চলেছে। পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। হাকিমুদ্দিন শেখের ভাই ইরশাদ জানান, তাঁর বড় ভাই এখন উত্তর প্রদেশের প্রতাপগড়ে থাকেন। তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং কার্গিল যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। হাকিমুদ্দিন শেখ ২০০০ সালে ইঞ্জিনিয়ার্স রেজিমেন্ট থেকে হাবিলদার হিসেবে অবসর নেন। ইরশাদের কথায়, বড় ভাই উত্তর প্রদেশে থাকলেও আমি, আমার দুই ভাই এবং তাঁদের সন্তানদের সঙ্গে গত কয়েক দশক ধরে এই এলাকায় বাস করছি। শনিবার মধ্যরাতে কমপক্ষে ৮০ জন লোক হঠাৎ আমাদের বাড়িতে এসে দরজায় ধাক্কা দিতে শুরু করে। আমরা যখন দরজা খুললাম, তখন তাদের মধ্যে কয়েকজন হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পরিবারের সদস্যদের আধার কার্ড দেখাতে হবে বলে হুজ্জতি শুরু করে। আমরা বাধ্য হয়ে সমস্ত নথিপত্র দেখাই। তখন ওরা বলতে থাকে এগুলো সব জাল। বাড়ির মহিলা এবং বাচ্চাদের আধার কার্ডও দেখতে চায়। আমরা বারবার ওদের বোঝানোর চেষ্টা করি যে, গত ৬০ বছর ধরে এখানেই থাকি। আমার বড় ভাই এবং দুই কাকাও সেনাবাহিনীতে চাকরি করেছেন। কিন্তু ওরা কিছুই শুনতে রাজি হননি। আমাদের গালিগালাজ করতে থাকে এবং বাংলাদেশি-বাংলাদেশি বলে চিৎকার করে। আমি বলেছিলাম, তদন্ত করে দেখতে চাইলে দেখুক। কিন্তু মধ্য রাতে কারও বাড়িতে ঢুকে গালিগালাজ করা এবং বাচ্চাদের কাগজপত্র দেখাতে বাধ্য করা ঠিক নয়। তাতেও ওরা দমেনি।
ইরশাদ জানান, হিন্দুত্ববাদীদের ওই দল এরপর 'জয় শ্রী রাম' স্লোগান দিতে শুরু করে। পরিবারের প্রত্যেককে থানায় যেতে বাধ্য করে। ওদের সঙ্গে থাকা দুই ব্যক্তি নিজেদের পুলিশ হিসেবে পরিচয় দেয়। পুরো সময় সাদা পোশাকে থাকা এই দুই পুলিশ সদস্য নীরবে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং কিছুই করেননি। তিনি আরও অভিযোগ করেন, তাঁরা চন্দননগর থানায় পৌঁছালে এক মহিলা পুলিশ আধিকারিক তাঁদের কাগজপত্র নিয়ে বাইরে অপেক্ষা করতে বলেন। আমাদের দুঘন্টা অপেক্ষা করানোর পর অফিসার আমাদের পরের দিন আবার দেখা করতে বলেন এবং সতর্ক করে দেন যে আমরা যদি তা না করি, তাহলে আমাদের বাংলাদেশী নাগরিক ঘোষণা করা হবে। ফলে আমরা পরের দিন আবার থানায় যেতে বাধ্য হই। পুলিশ এখন আমাদের উপরই চাপ তৈরি করছে। প্রমাণ করতে চাইছে যে কেউই আমাদের বাড়ি ঢোকেনি। যদি নথিতে কোনও অসঙ্গতি থাকত, তাহলে পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারত। তা তো করেনি। যেহেতু আমাদের সমস্ত নথিপত্র আসল, তাই এখন আমাদের চুপ থাকতে বলছে। 
ইরশাদের কথা থেকে জানা গিয়েছে, তাঁদের পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চাকরি করেছেন। তিনি জানান, আমার কাকা ১৯৭১ সালের যুদ্ধে বোমা বিস্ফোরণে আহত হন এবং তাঁর বীরত্বের জন্য তাঁকে পুরস্কৃত করা হয়। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাক সংঘর্ষের সময়ে লড়াই করেছিলেন আরেক কাকা। শেখ বলেন, তাঁরা সমাজকর্মী রাহুল ডাম্বলের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। তিনি একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে সাহায্য করেছিলেন। ওই আধিকারিক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন, কিন্তু তিন থেকে চার দিন পরেও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
হাকিমউদ্দিন শেখ পিটিআই-কে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুনেতে আমার পরিবারের সঙ্গে যা ঘটেছে তা ভুল। আমরা ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পুনেতে বাস করছি। পুনেতে থাকাকালীন আমার কাকা মহম্মদ সেলিম ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কাজের সুযোগ পান। আমার পরিবারের সঙ্গে যা হলো তা ঠিক হলো না।  প্রয়োজনে আমি পুলিশের সঙ্গে কথা বলব এবং ব্যাখ্যা চাইব।" 
এদিকে, ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ (জোন ৪) সময় মুন্ডে দাবি করেছেন, এরকম কোনও ঘটনাই ঘটেনি।  তিনি বলেন, কিছু পুলিশ কর্মী তাদের নথিপত্র যাচাই করার জন্য গিয়েছিলেন। শহরে অবৈধ বাংলাদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। এই অভিযানের আওতায় পুলিশ কিছু তথ্য পেয়ে ওই বাড়িতে যায় এবং তা যাচাই করার জন্য যায়। রাত হওয়ায় কোনও মহিলাকে থানায় আনা হয়নি এবং কেবল কিছু পুরুষ সদস্যকে পুলিশের সাথে যেতে বলা হয়েছিল। দেরি হয়ে যাওয়ায় তাদের পরের দিন ফিরে আসতে বলা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে, তাদের নথিতে কোনও ত্রুটি পাওয়া যায়নি পুলিশের কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে বলেও দাবি তাঁর।
'ন্যাশনাল কনফারেন্স ফর মাইনরিটি'র সভাপতি ডাম্বলে বলেছেন, উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যরা সৈনিকের পরিবারের সদস্যদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করে।  আমরা এফআইআর দায়েরের দাবি জানিয়েছি। পুনের পুলিশ কমিশনার অমিতেশ কুমারের সঙ্গে দেখা করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাব।
দেশজুড়ে সর্বত্রই এখন অমিত শাহের মন্ত্রকের নির্দেশে এই 'সাফাই অভিযান' চলছে। বাংলাভাষী সংখ্যালঘু দেখলেই চরম হেনস্তা করা হচ্ছে। প্রথমে এঁদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া, তারপর থানায় তুলে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর এবং সবশেষে 'পুশ ব্যাক' অর্থাৎ বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া কার্যত নিয়ম - নীতি বানিয়ে ফেলতে চাইছে মোদী সরকার। ইতিমধ্যে অনেককে এভাবে বাংলাদেশে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে। এমনকি পে লোডারে তুলে জঞ্জালের মতো সীমান্তে ফেলে দেওয়া হয় এক বাঙালি যুবককে। এবার সৈনিকের পরিবারও রেহাই পেল না।

Comments :0

Login to leave a comment