Lunar Eclipse

ঘন্টাখানেকের মধ্যে চন্দ্রগ্রহণ, কুসংস্কার ভেঙে বাড়ছে ভিড়

জাতীয় রাজ্য

পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের ফেসবুক পেজ থেকে।

পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ দেখতে দিল্লির নেহরু প্ল্যানেটেরিয়ামের সামনে জড়ো হয়েছেন বিভিন্ন বয়সের বাসিন্দারা। আকাশকে জানতে এমনই আগ্রহ।  
রবিবার পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ। রাজ্যেরও যে কোনও প্রান্ত থেকে দেখা যাবে এই মহাজাগতিক ঘটনাটি। ভারতীয় সময়ে চন্দ্রগ্রহণ শুরু হবে রাত ৯.৫৮ মিনিটে। চলবে রাত্রি ১.২৬মিনিট পর্যন্ত। পূর্ণ গ্রহণ শুরু হবে রাত ১১টা থেকে। চলবে রাত ১২.২২ মিনিট পর্যন্ত। ওই সময়ই পূর্ণাবয়বের চাঁদ আঁধারে ঢাকা পড়বে। গ্রহণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে ১১.৪১ মিনিটে। এটাই পূর্ণ গ্রহণ দেখার সবচেয়ে ভালো সময়। 
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের তরফে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্রহণের পাশাপাশি অনেক জায়গায় রাতের আকাশ দেখার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। 


উত্তর কলকাতার সিঁথিতে পাইকপাড়া বিজ্ঞান কেন্দ্রের তরফে সাউথ সিঁথি রোডে কাঠগোলা মাঠে আয়োজন করা হয়েছে গ্রহণ পর্যবেক্ষণ শিবির। দক্ষিণ কলকাতার বাঘাযতীনে রায়পুর গালর্স হাইস্কুলে রবিবার বসছে বিশেষ শিবির। গ্রহণের সঙ্গে এই শিবিরে টেলিস্কোপে আকাশ চেনার কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের শিবপুর বিজ্ঞান কেন্দ্রের তরফে প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। গ্রহণের ছবি তুলে নিজের গুগল জিপিএস যোগ করে হোয়াটসঅ্যাপে (৭০০৩২৩৪৫৫১) পাঠাতে বলা হয়েছে।
হলদিয়া দুর্গাচক যুব সম্প্রদায় ক্লাব সংলগ্ন মাঠে রবিবার পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সুতাহাটা হলদিয়া বিজ্ঞান কেন্দ্রের তরফে গ্রহণ পরিলোকন শিবিরের আয়োজন করা হচ্ছে। রাত আটটা থেকে সেখানে সাধারণ মানুষের জন্য গ্রহণ দেখানোর সব রকমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে অক্ষয়কুমার দত্ত বিজ্ঞান কেন্দ্রের তরফে গ্রহণ দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। গুমা ইউনাইটেড ক্লাব ময়দানে রবিবার রাতে বসছে গ্রহণ শিবির। সেখানে টেলিস্কোপে আকাশ চেনানোর কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞান মঞ্চের কলকাতা জেলার উদ্যোগে আগামীকালের চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে একটি জনমত সমীক্ষা করা হচ্ছে। কুসংস্কার মুক্ত হয়ে কত মানুষ চন্দ্রগ্রহণ দেখার উদ্যোগ নিচ্ছেন, তা জানতে গুগল ডকে প্রশ্নাবলী পাঠিয়ে সমীক্ষা চালানো শনিবার শুরু হয়েছে। 
তবে যাঁরা পর্যবেক্ষণ শিবিরের সন্ধান পাননি, তাঁদেরও রবিবারের গ্রহণ দেখতে কোন বাধা ঘটবে না। চন্দ্রগ্রহণ যেহেতু কোনও বিশেষ চশমা ছাড়াই খালি চোখে দেখা যায়, তাই যাঁরা শিবিরে আসার সুযোগ পাবে না, তাঁরা খোলা মাঠ কিংবা বাড়ির ছাদ থেকে অনায়াসে দেখতে পারবেন সেই বিরল দৃশ্য। রবিবারের পূর্ণ গ্রহণের সময় চাঁদকে কিছুটা রক্তাভ বা তামাটে দেখাবে। ওই রঙের জন্যই আগামীকালের চাঁদকে ‘ব্লাড মুন’ বা ‘কপার মুন’ বলা হচ্ছে।   পূর্ণিমায় চাঁদ, সূর্য আর পৃথিবীর একতলে সরলরেখায় অবস্থানের জেরে পৃথিবীর ছায়া চাঁদকে ঢেকে দেওয়ায় ঘটে গ্রহণ। পূর্ণ সূর্যগ্রহণে সূর্য, চাঁদের আড়ালে পুরো ঢাকা পড়লেও পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণে চাঁদ পুরোপুরি পৃথিবীকে আড়াল করতে পারে না। তখনই চাঁদকে তামাটে বা রক্তাভ দেখায়। পৃথিবীর ওপরে পড়া সূর্যের আলোর খানিকটা আবহমণ্ডল থেকে সরাসরি চাঁদে চলে যায়। স্তিমিত আলোয় জেগে থাকে চাঁদের অবয়ব।  ওই অবস্থায় স্বল্প তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের নীল বা বেগুনি আলোর বিচ্ছুরণ বেশি হতে থাকে বেশি দৈর্ঘ্যের লাল বা কমলা আলোর তুলনায়।  চাঁদে পৌঁছানো আলোর প্রকৃতির জন্য তখন চাঁদকে লালচে বা তামাটে দেখায়।  চন্দ্রগ্রহণ পূর্ণ সূর্যগ্রহণের মতো ততটা আকর্ষণীয় না হলেও এটিও একটি বিরল মহাজাগতিক ঘটনা। গ্রহণ নিয়ে কুসংস্কারের শেষ নেই। খাওয়া-দাওয়া, রাশি মিলিয়ে জাতক-জাতিকার বিহিত করা, বাইরে না বেরোনো, গ্রহণ শেষে স্নান– সবটাই  কুসংস্কার। গ্রহণ দেখা নিয়ে মানব দেহে কোনও সমস্যাই ঘটে না। তাই নির্ভয়ে গ্রহণের দৃশ্য দেখা যেতে পারে।

মন্তব্যসমূহ :0

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন