PROBANDHA / ASHOK ADHIKARY / CHILD BOOK READING / MUKTADHARA / 30 OCTOBER / 3rd YEAR

প্রবন্ধ / অশোক অধিকারী / ছোটদের বই পড়ার অভ্যেসটাই চলে যাচ্ছে / মুক্তধারা / ৩০ অক্টোবর ২০২৫, বর্ষ ৩

সাহিত্যের পাতা

PROBANDHA  ASHOK ADHIKARY  CHILD BOOK READING  MUKTADHARA  30 OCTOBER  3rd YEAR

প্রবন্ধ 

মুক্তধারা 

ছোটদের বই পড়ার অভ্যেসটাই চলে যাচ্ছে

অশোক অধিকারী 

৩০ অক্টোবর ২০২৫, বর্ষ ৩

 

সারাদিনের স্কুল, টিউশান,গানের ক্লাশ,নাচের ক্লাশ,আঁকার ক্লাস,সাঁতার শেখা,আবৃত্তির পাঠ সেরে রণক্লান্ত শিশুটি যখন মা’র হাত ধরে বাড়ি ফেরে তখন আর তার খিদেই থাকে না।বিছানায় শরীরটা ফেলে দিয়ে মা’কে যখন বলে,‘মা,মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও না।’ ছেলের আবদার মন থেকে ঠেলে মা তখন কালকের হোমটাস্ক মনে করিয়ে দিয়ে ছেলেকে তুলে বসায় বিছানায়।সব সেরে রাতে শোবার বিছানায় আবার তার আবদার,‘মা,একটা গল্প বলো না।শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ি।’বিরক্তির সুরে মা বলে,‘জ্বালাস নি তো। টিভিতে কার্টুন চালিয়ে দিচ্ছি।দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়।’গল্প শোনার বিকল্প যখন কোট আনকোট কার্টুন হয়ে যায় তখনই ‘দুই খান কথা এসে পড়ে।’ছোটদের অভ্যেস তৈরির বয়সে আমরা যে শিক্ষায় তাদের শিক্ষিত করে তুলতে চাইছি তাতে এক যান্ত্রিক রোবট তৈরী হচ্ছে সত্য কিন্তু ছোটদের মস্তিষ্ক থেকে শিশুমন হারিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু কে কার কথা শোনে!আমি যা হতে পারুনি যতক্ষণ না আমার ছেলে বা মেয়েটি সেইটি হচ্ছে তার নিস্তার নেই। অবন ঠাকুরের ‘ ক্ষীরের পুতুল’ বা উপেন্দ্র কিশোরের ‘টুনটুনি আর রাজার কথা’কিংবা দক্ষিণারঞ্জনের(মিত্র মজুমদার) ‘ঠাকুরমার ঝুলি’তাকে পড়তে দেওয়া হয় না, বদলে বইমেলা এলে নানা ফিক্সান,ভূতের গল্প,হ্যরি পটার ইত্যাদি তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে শিশুমনের মানসিক গঠন,আবেগ বা অনুভূতি সংগঠনের বিষয়টিকে মাঠে মেরে দেওয়া হয়।এখন সে ‘গোপাল অতি সুবোধ বালক’; তার জলে ভেজা বারণ,বাগানে গিয়ে পাখি চেনা ও তার ডাক শোনা বারণ,ফড়িংয়ের পিছু ধাওয়া করায় মানা,বর্ষায় ভেজা নৈব নৈব চ।সারাদিনের নানা অনুশাসন তাকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধেছে।শৈশবের যে আনন্দ যে সময় তার পাওয়ার কথা সেই সময় বইয়ে দিয়ে এখনই তাকে বিশেষজ্ঞ করার বিপুল আয়োজন কার্যত ক্রিয়াশীল।‘কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা/ মেলে দিলেম গানের সুরের এই ডানা মনে মনে’(রবীন্দ্রনাথ) গাওয়া তার মানা হোমটাস্কের চাপে।এর থেকেই বৃহত্তর পরিসরে কোনো এক স্তরে তার অসাফল্য এক গভীর বিষন্নতা ডেকে আনে।পিছিয়ে পড়ার ভয়ে অনেক কথা এখন সে শেয়ার করেনা মা-বাবা বা ক্লাশের বন্ধুদের।তারপর যা হবার তাই ঘটে যায়। কারন,মনকে নিয়ন্ত্রণ করার শিক্ষা তাকে কেউ দেয়নি।জীবনের কোনো এক স্তরে অসফল হওয়া মানে যে জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া নয়, তাকে কেউ সেভাবে বোঝায়নি।
   আইনস্টাইন তাঁর আপেক্ষিকতা তত্ত্ব আবিষ্কারের পর মেয়ে লিজারেলকে লিখছেন তাঁর আবিষ্কারের প্রজ্ঞা নিয়ে,”ভালবাসা আসলে এক অদৃশ্য ক্ষমতা যে আমাদের মধ্যে থাকা যৎসামান্যকে প্রাচুর্যে পরিণত করে।”মেয়েকে লেখা চিঠির এটি একটি ক্ষুদ্র অংশ।এখানে ভালবাসা অর্থে যে প্রগাঢ় প্রেমের অনুভূতি আসে মনে তাঁর সেই ভালবাসা আদি ও অকৃত্রিম হয়ে বিজ্ঞানীর উদ্ভাবনকে সঙ্গ দিয়েছে।মেধা ও মননের যে চর্চায় ভালবাসা আসে সৃষ্টির অনিমিখে। আইনস্টাইনের চিঠি লেখার আগ্রহ ও উৎসাহ এতটাই গভীর ছিল যে জীবনে ছোটখাটো সব প্রশ্নের যেমন উত্তর দিতেন তিনি,তেমনই রবীন্দ্রনাথের মতো সব চিঠিরই লিখিত উত্তর দিতেন।একটা সময় বিশিষ্টদের চিঠিপত্র দেদার পড়েছি।পড়ার ফলে তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনের নানা অনুসঙ্গ যেমন পাঠক হিসাবে আমাকে তৃপ্ত করেছে তেমনই একটু আধটু যা লিখি তারও নানা উপাদান আমি পেয়েছি চিঠিপত্র গুলিতে।সাহিত্য হিসাবে তারা যেমন দুর্মূল্য তেমনই আদরনীয়।মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামসের ওপর একটা লেখা পড়ছিলাম।১৯৫দিন মহাকাশে বেড়াতে গিয়ে সুনীতা তার সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল তিনটি জিনিস।গণেশমূর্তি, তাকে লেখা বাবার চিঠি আর শ্রীমদ্ভাগবতগীতা।আমাদের চিরন্তন ভাবনায় গণেশ যেমন সুনীতার সফরে সাফল্য আনবে তেমনই বাবার চিঠির স্মৃতিমেদুরতা তার মূল্যমান সোনার চেয়েও দামী।যদি প্রশ্ন আসে বিজ্ঞান যাত্রায় গীতা কেন। তবে কি সকলের বিশ্বাসকে মান্যতা দিতেই তার গীতা নেওয়া।ঐ যে আমাদের বিশ্বাসে স্থায়ী রূপে দেবদেবীরা বিরাজ করেন দূরের আকাশের অলৌকিকত্বে,আর সেখানেই তার অভিযান তাই এই ভগবৎকৃপা গ্রন্থটি সঙ্গে নেওয়া।

সমাপ্ত আগামী সপ্তাহে

Comments :0

Login to leave a comment