Abhaya RG Kar

কোনও সভ্য দেশে এমন হয় না

সম্পাদকীয় বিভাগ

গোটা একটা বছর পার হয়ে গেলেও ন্যায় বিচার মিলল না অভয়ার। নিজের কর্মস্থল সরকারি মেডিক্যাাল কলেজে কর্মরত অবস্থায় দলবদ্ধ ধর্ষিতা হয়ে খুন হয়ে গেলেন চিকিৎসক তরুণী। ঘটনার পর থেকেই ন্যায় বিচারের দাবিতে, অপরাধীদের কঠোরতম সাজার দাবিতে, সর্বোপরি যাবতীয় সত্য উদ্‌ঘাটনের দাবিতে ও সমস্ত তথ্য প্রমাণ লোপাট করে যারা নিকৃষ্টতম অপরাধীদের আড়াল করতে শাসন যন্ত্রকে পুরোপুরি ব্যবহার করেছিল তাদের মুখোশ খুলে দেবার দাবিতে যে মানুষ মুখর হয়েছিলেন, প্রতিবাদ-বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন তারা ফের প্রতিবাদের উত্তাল তরঙ্গে কলকাতাকে নাড়িয়ে দিয়েছেন। সোচ্চার হয়েছেন দুষ্টচক্র মমতা ব্যানার্জির রাজ্য পুলিশ এবং নরেন্দ্র মোদীর কেন্দ্রীয় সিবিআই’র যোগসাজশের শয়তানির বিরুদ্ধে।
এমন এক নজিরবিহীন ভয়ঙ্কর ঘটনার যে কোনও একজন সিভিক পুলিশের যৌন কামনার পরিণতি নয়, বরং এক বৃহত্তর পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ফসল সেটা একটা বাচ্চা ছেলেমেয়েরও বুঝতে বাকি নেই। তাই মমতার পুলিশের দেখানো পথে চোখে ঠুলি পরে এক বছর ধরে চোর পুলিশ খেলেছে নরেন্দ্র মোদীর সিবিআই। ভারতের শ্রেষ্ঠতম তদন্ত সংস্থা দুনিয়াকে দেখিয়ে দিয়েছে কলকাতা পুলিশ অপরাধীদের সুরক্ষিত রাখতে দু’-তিন দিনে যে নিখুঁত ষড়যন্ত্রের ছক তৈরি করে দিয়েছে সিবিআই সারা বছর ধরে তার এক কণারও তল খুঁজে পায়নি।
সিবিআই দায়িত্ব ছিল শুধু ধর্ষক-খুনিদের ধরে সাজা দেওয়া নয়, একই সঙ্গে এই খুন-ধর্ষণকে ঘিরে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের কিনারা করা। খুন-ধর্ষণ কে করেছে, ক’জনে করেছে সেটা একটা দিক। কিন্তু ধর্ষণ-খুনের পর ভয়ঙ্কর কাণ্ড কারখানা ঘটেছে এবং যাকে ঘিরে হাজারো প্রশ্ন, অসঙ্গতি, স্ববিরোধী ছড়িয়ে আছে তার কোনোটির কোনও উত্তর খোঁজেনি সিবিআই। ঘটনার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ পদে পদে নিয়ম বিরুদ্ধ পথে হেঁটেছে। যে কাজ যখন যেভাবে আইন ও নিয়ম অনুযায়ী করার কথা পুলিশ তা করেনি। তদন্তের মাধ্যমে অপরাধী ধরা ও সত্য উদ্‌ঘাটনের বদলে পুলিশ নিমগ্ন ছিল যাবতীয় তথ্য প্রমাণ লোপাটের বহুমুখী কাজে। সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশে পুলিশের তীক্ষ্ণ নজর ছিল একটা তথ্য-প্রমাণও যেন অক্ষত না থাকে। অর্থাৎ অভয়ার ন্যায় বিচারে সব রাস্তা বন্ধ করার সব ব্যবস্থা পুলিশও করে দিয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে। আর সিবিআই প্রথমে সক্রিয় হয়েও পরে ঝিমিয়ে পড়ে হাল ছেড়ে দেয় তার উপরওয়ালার ইঙ্গিতে। রাজ্য ও কেন্দ্রের দুই উপরওয়ালার রাজনৈতিক বোঝাপড়া ও সেটিংয়ের ফলে অভয়ার ন্যায় বিচার অধরা হয়ে গেছে। দি‍‌দি-মোদীর বোঝাপড়াই যাবতীয় অপরাধীদের রক্ষা কবচ। এক বছর ধরে চেষ্টা করেও অভয়ার বাবা-মা প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারলেন না। এরপর কারও বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়। যাঁরা বোঝার বুঝে গেছেন এবং তাঁরা লড়াইয়ের ময়দানে আছেন অভয়া মঞ্চকে সামনে রেখে। যাঁরা এখনো বোঝেননি অচিরেই বুঝে যাবেন। এটাও বুঝবেন শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে নবান্ন অভিযানের অন্তঃসারশূন্যতা।
 

Comments :0

Login to leave a comment