মুক্তধারা
গল্প
নতুন ভোর
-----------------------------
রাহুল চট্টোপাধ্যায়
-----------------------------
২৬ অক্টোবর ২০২৫, বর্ষ ৩
প্রতিদিন সকালে রামখুড়ো হাতে লাঠিখানা নিয়ে মাঠের দিকে যায়। কোনদিন পারুল সঙ্গে থাকে কোনদিন একাই যায়। একফালি জমি আছে তার , নিজের মনের মতো সবজি লাগায়।বেলা হলে ঘরে ফেরে। পারুল বাপের সঙ্গে সবজি চাষ করতে যায়, সবজি বললে ঘরে তুলে আনে, বাড়ি নিয়ে এসে রান্না করে বাপ-বেটিতে খায়
যদি কখনো মাছ খাওয়ায় ইচ্ছে হয় পারুলকে যেতে হয় পাশের গ্ৰামে। মাছবাজারে দর কষাকষি,ভিড়, আওয়াজ ঠেলাঠেলির মধ্যেও শান্ত দুটো চোখ চারিদিকে দেখে।কতো মানুষ, কতো দরাদরি,হাঁক ডাক।
পারুল মাছ কিনতে কিনতেই রোদ ঝলমলে বাজারের রাস্তায় দেখেছিল মৈত্রী দিদিকে। একটা চোঙা নিয়ে বলে চলেছে তাদের মতো লোকদের কথা। মানুষের রোজকার দুঃখের কথা। খুব ভালো লেগেছিল পারুলের।মন দিয়ে শুনেছিল সে। জমি থেকে বাপের সঙ্গে ফেরার পথে গল্প করেছিল মৈত্রীদিদির কথাগুলো ।রামখুড়ো জানে এসব কথা।তারও কম বয়েসে এমন কথা অনেক শুনেছে। তবে পারুল যেমন বলছে তেমন করে ভাবে নি। জোয়ান বয়সে খেটেছে খুটেছে,আর যা রোজগার হয়েছে পারুলের মা'র হাতে তুলে দিয়েছে।এর বেশি ভাবেনি। কিন্তু রামখুড়ো অবাক হয়ে ভাবে পারুন যেন কেমন অন্যরকম।সে নিজেকে ছাড়িয়ে অন্যের কথা ভাবে, বেঁচে থাকার সমস্যার কথা ভাবে।
সেদিন বাজারের পথে পারুল অনেক মানুষ দেখালো ।দেখলো মৈত্রী দিদিকে। পারুল অনেক ক্ষণ তাকিয়ে থাকলো,শুনলো দিদির কথা,তারপর মিশে গেল ভিড়ে।গলা মেলালো ওদের সঙ্গে।
রামখুড়ো মেয়ের দেরি হচ্ছে দেখে লাঠি ঠুকতে বাজারের পথ ধরে এগিয়ে চললো। কিছুটা এগিয়ে মেয়েকে দেখতে পায় সে। একদল ছেলেমেয়েদের সঙ্গে পারুল এগিয়ে আসছে গ্ৰামের পথ ধরে। ও গলা মিলিয়ে ডাক দিচ্ছে ।রামখুড়ো চেয়ে থাকে, জলকণা এসে গড়িয়ে পড়ে গাল বেয়ে, ভাবে ,মেয়েটা তার কতো বড়ো হয়ে গেল।
Comments :0