মুক্তধারা
গল্প
ভূতভুতুম চোদ্দশাক পুঁজিরবাজারে
------------------------
সৌরভ দত্ত
------------------------
২ অক্টোবর ২০২৫, বর্ষ ৩
সকালের তপ্ত রোদ্দুর গায়ে মেখে শিউলি কুড়োচ্ছে বালিকা । বাজারে হইচই কাণ্ড।আজ না ভূত চতুর্দশী।আলোর উৎসব দীপাবলি।গেরস্থ বাড়ির চৌহদ্দিতে ভূতেদের আনাগোনা। ঘর্মাক্ত শম্ভুনাথ বাবু চলেছেন বাজারে। ভুটানের চায়ের দোকানে চায়ের চুমুক দিতে দিতে গল্পের তুফান ওড়ে। প্রসঙ্গত কি না আসে– সেকালের ইউনিয়নের বড় কালীপুজো। স্কুল মাঠে তুবড়ির প্রতিযোগিতা। রামপ্রসাদী সুর বাজত ব্যানার্জি বাড়ির পুজোয়।অণুর দিদিমা চোদ্দশাক তুলতে বেরোত খিড়কির দিকে,গোলবাড়িতে।সজনে শাক,ব্রাহ্মী শাক, তেলাকুচা শাক ,হিঙচে শাক,কালকাসুন্দা আরও কত কি! চোদ্দ শাক এর সাথে সন্ধ্যায় চোদ্দ প্রদীপের সলতে ধরানো। এরপর সেজকার এজোপেঁজো।ঘটা করে অলক্ষী বিদায়। অন্যতম লোকাচার।ভূত চতুর্দশীতে ভয় মানে– গা ছমছমে ভূতের ভয়। হাউমাউ খাঁও মানুষের গন্ধ পাউ।বেশ অন্যরকম একটা ব্যাপার স্যাপার।মজা করে দাদামশাইয়ের ধুতির নিচে ছুঁচো বাজি ছেড়ে দেওয়া। দীপান্বিতা আমাবস্যায় হাজার হাজার প্রদীপের উৎসারিত আলোর উৎসবে মহিমান্বিত হত প্রকৃতি। দু-এক আনা চাঁদা তুলে বাচ্চাদের পুজোয় অনাবিল আনন্দ ছিল একথাই অনিল বাঁড়ুজ্জেকে বলছিলেন শম্ভুনাথ বাবু।
কিভাবে পৃথিবীটা হঠাৎ বদলে গেল বিশ্বায়ন ঘটল দ্রুত। বাঙালির পাতে চোদ্দশাক আজ অমিল।চোদ্দ শাক তুলতে গিয়ে তুহিনের ঠাকুমা দেখলেন জলার ধারে শাকের খেতে দাঁড়িয়ে আছে ঝাঁ চকচকে মায়াবী শোরুম।ভূত চতুর্দশী এক এখন পুরোপুরি ধনতেরাস হয়ে গেছে।সবাই মেতেছে ধনতেরাসের কেনাকাটায়। বাজারের মোড়ে মোড়ে বিজ্ঞাপনের হোডিং। ধনতেরাসে গয়নায় ছাড়। শাসকদলের মদতে রমরমিয়ে বাজী বাজার চলছে।চড়া দামে সেল,ফানুস বিক্রি বাটা হচ্ছে। শম্ভুনাথ বাবু উঁকি মেরে দেখলেন এক ঝলক।তিনি বেড়িয়েছেন চোদ্দশাকের জন্যে। সারা বাজার হন্যে হয়ে খুঁজে দুএকটা পরিচিত শাক ছাড়া কিছুই পেলেন না। মাটির প্রদীপ মেলে প্রসাদ পাল রোজকার বসে আছে কিন্তু মাটির প্রদীপের সেরকম চাহিদা নেই। পাড়ায় নতুন আউটলেট হয়েছে সদ্য। অফার চলছে।মানবদার ইলেকট্রিকের দোকানে চাইনিজ আলো ও মিনিয়েচার এর ছড়াছড়ি। ইউনিয়নের পুজোটা ও বন্ধ বেশ কয়েক বছর। প্রতিযোগিতার জন্য মৃত্যুঞ্জয় আর তুবড়ি বানায় না।দূষণে দূষণে রাতচরা জোনাকি ,শ্যামা পোকারা উধাও। প্রদীপ,বাতিতেওও কর্পোরেট সংস্কৃতির ছোঁয়া কত শত নতুন নতুন ডিজাইন।বাজার থেকে উধাও চোদ্দ শাকের চোদ্দগুষ্ঠী। গুটিগুটি পায়ে বাড়ি ফিরে আসেন শম্ভুনাথ বাবু। স্মৃতির দিকে চেয়ে থাকেন । জ্বলজ্বল করে ওঠে চোখের পাতা।ছাদে চোদ্দপ্রদীপ দেওয়ার লোক নেই। পুঁজিরবাজারে ছুটছে সবাই। চলনে চরকির ঘুরপাক নেই। যে যার ব্যস্ত কর্মক্ষেত্রে।ধনতেরাস ধামাকায় ভূত চতুর্দশীর ভূতেরা ও আজ উধাও…
Comments :0