বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) একসময় জনকল্যাণের জন্য কাজ করত। বিভিন্ন দেশে রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে এবং গরিব দেশগুলোতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কিন্তু আজকাল দেখা যাচ্ছে, এই সংস্থা তার মূল লক্ষ্য থেকে সরে এসেছে। এখন তারা যেন বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ রক্ষা করছে। এর পেছনে কিছু শক্তিশালী অর্থ প্রদানকারী সংস্থার ভূমিকা স্পষ্ট।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জাতিসঙ্ঘের একটি অংশ। প্রায় ২০০টি ছোট-বড় দেশ তাদের জাতীয় আয় অনুযায়ী এখানে অর্থ সাহায্য করে। তবে এই সংস্থা চাইলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকেও অনুদান নিতে পারে।
বিগত শতকের শেষের দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গরিব মানুষের কথা ভেবে কিছু জনহিতকর প্রকল্প হাতে নেয়। এর মধ্যে ছিল গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ওষুধ উৎপাদন করা এবং গুটিবসন্তের মতো রোগ নির্মূল করা। গুটিবসন্ত নির্মূলের প্রকল্পটি দারুণ সফল হয়েছিল।
কিন্তু ১৯৮০-র দশকের শেষ দিকে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। দেশগুলোকে বলা হয়, স্বাস্থ্য প্রকল্প চালানোর জন্য ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা সংগ্রহ করতে। ১৯৮২ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জন্য ব্যয় বরাদ্দ সঙ্কুচিত করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ছিল উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জীবনদায়ী ওষুধ তৈরির ব্যবস্থা করা। কিন্তু আমেরিকার সরকার এটি পছন্দ করেনি এবং তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় অর্থ দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এর ফলে ১৯৮৫ সালে এই প্রকল্পের অনেক বিশেষজ্ঞ ও কর্মীকে অন্য দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং প্রকল্পটি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মোট ব্যয়ের ৮০ শতাংশ আসে স্বেচ্ছাসেবী অনুদান থেকে। এর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অনুদান দেয় ‘বিল অ্যান্ড মিলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’। তারা ২০২৩ সালে প্রায় ৫,৯২,২৭১ মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছে। বিশ্ব ব্যাঙ্ক সেই বছর দিয়েছিল ১৫,৮১,৩৪১ মার্কিন ডলার। বিশ্বব্যাঙ্কও অনুদান দেয়, কিন্তু সেটি দীর্ঘমেয়াদি ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়। এর ফলে এই দু’টি বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নীতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতি নির্ধারণে বড় প্রভাব ফেলে। এছাড়াও, সানোফি, বোয়েহরিঙ্গার ইনগেলহাইম, নোভো নরডিস্ক, টিকটক, মেবেলাইন, মেটা-এর মতো বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানও বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য অনুদান দিয়ে থাকে। তবে, কিছু রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার কর্পোরেট দাতাদের পরিচয় গোপন রাখে, ফলে কর্পোরেটদের অনুদানের স্বচ্ছতা অনেক প্রশ্নের অবকাশ থেকে যায়। কোভিড-১৯ মহামারী দেখিয়ে দিয়েছে যে, বেসরকারি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এমন বিপদ মোকাবিলায় কতটা ব্যর্থ। এজন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে তখন তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।
প্রতিবছর মে মাসে জেনেভায় অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলন, সব দেশের স্বাস্থ্য আধিকারিকদের উপস্থিতিতে। বিগত ২০২৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অতিমারী নিয়ে একটি চুক্তির খসড়া উপস্থিত করে। এর আগে ২০১১ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়েও একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছিল সমস্ত অনুদানকারী দেশের সম্মতিতেই, যদিও এই চুক্তির অধিকাংশ শর্ত রূপায়ণ করা সম্ভব হয়নি। সেই চুক্তিতে অবশ্য কোনও বাণিজ্যিক স্বার্থ জড়িত ছিল না।
বিল গেটস এবং বিশ্বব্যাঙ্কের অনুদান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বড় পুঁজির নির্দেশে চলতে বাধ্য হচ্ছে। ওষুধ কোম্পানিগুলোও এখন নতুন ধরনের গবেষণায় বেশি মনোযোগ দিচ্ছে, যা খুবই ব্যয়বহুল। এসব গবেষণার ফল ২০ বছর পর্যন্ত পেটেন্টের আওতায় থাকার কারণে ওষুধের দাম অনেক বেশি হবে। যেমন, ম্যালেরিয়া রোগের টিকা আবিষ্কারে বিল গেটস বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু সেই টিকা যদি পেটেন্টের কারণে চড়া দামে বিক্রি করা হয়, তবে গরিব মানুষ তা কিনতে পারবে না। অথচ গরিব মানুষই ম্যালেরিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়। বেশকিছু দিন আগে থেকেই বিল গেটসের নজরে এসেছে টিকা বাজারিকরনের বিষয়টি, এজন্য এরা বিপুল পরিমাণে অর্থ লগ্নি করা শুরু করে দিয়েছে।
কোভিড-১৯ টিকার বিশাল ব্যবসা দেখে বিল গেটস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ব্যবহার করে ভ্যাক্সিন অ্যালায়েন্স (GAVI) ও সিইপিই (Coalition for Epidemic Preparedness Innovations)-এর মতো সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগগুলোকে তার অনুদান দিয়ে সাহায্য করেন। বিল গেটস বলেন যে, এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৯৩টি দেশের মূল লক্ষ্য হলো টিকা উৎপাদন করা। এজন্যই ২০২১ সালে একটি বাধ্যতামূলক চুক্তি করার জন্য ইন্টারগভর্মেন্টাল নিগোশিয়েটিং বডি তৈরি করা হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংবিধানের ১৯নং ধারা বলে অতিমারীর মোকাবিলা করার জন্য বোঝাপড়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী অবস্থা বিশেষে এরা কাজ করবেন সর্বাত্মক উদ্যোগ নিয়ে, দক্ষতার সাথে এবং সমস্ত দেশ সম্মিলিত ভাবে সিদ্ধান্ত মেনে চলবে।
অবশেষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সম্পাদকমণ্ডলী অতিমারী প্রতিরোধ ও নির্মূলের জন্য অতিমারী চুক্তির (Pandemic Treaty) একটি খসড়া প্রস্তুত করলেন। এই খসড়ায় ২৪টি বিভ্রান্তিকর ও আপত্তিজনক প্রস্তাব আছে। এ নিয়ে বিভিন্ন দেশের সাথে নানা পর্যায়ে ২০২২-২৩ সালে বহুবার আলোচনা হয়। তবুও ২০২৪ পর্যন্ত ২২টি দেশের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়। অতিমারী চুক্তি বা প্যান্ডেমিক ট্রিটি (Pandemic Treaty) হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র সদস্য দেশগুলোর মধ্যে প্রস্তাবিত একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি, যার উদ্দেশ্য হলো ভবিষ্যতে যেকোনো মহামারী মোকাবিলায় দেশগুলোকে সম্মিলিতভাবে ও আরও ভালোভাবে প্রস্তুত করা। এই চুক্তির মূল লক্ষ্য হলো -
সমন্বিত প্রতিক্রিয়া: একটি মহামারী দেখা দিলে দেশগুলো যাতে বিচ্ছিন্নভাবে কাজ না করে, বরং সবাই মিলে একটি সুসংগঠিত এবং দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারে, সেই ব্যবস্থা তৈরি করা।
সম্পদের সমবণ্টন: টিকার মতো জীবন রক্ষাকারী সামগ্রীগুলো যেন শুধু ধনী দেশগুলোর হাতে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং সব দেশ, বিশেষত দরিদ্র দেশগুলোও যেন তা দ্রুত ও ন্যায্য মূল্যে পেতে পারে।
তথ্য আদান-প্রদান: কোনও দেশে নতুন রোগ দেখা দিলে সেই সম্পর্কিত সব তথ্য দ্রুত এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া।
অর্থা সংগ্রহ: মহামারীর প্রস্তুতি ও মোকাবিলায় পর্যাপ্ত অর্থের সঙ্কুলান নিশ্চিত করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক তহবিল গঠন করা।
কোভিড-১৯ মহামারীর সময় বিশ্বজুড়ে যে অসমতা এবং সমন্বয়ের অভাব দেখা গিয়েছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে এই চুক্তির প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। এই চুক্তিটি এখনও আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে এবং বিভিন্ন দেশ এর কিছু শর্ত নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। বিশেষত, কিছু দেশ মনে করে এই চুক্তি আপাতভাবে শনতে ভালো মনে হলেও, এই চুক্তি স্বাক্ষ্রিত হলে তাদের সার্বভৌমত্ব এবং নিজস্ব স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সীমিত হয়ে যাবে।
টীকা ব্যবসার প্রতি বিল গেটসের আকর্ষণ নতুন কিছু নয়। গেটস ফাউন্ডেশন জন্মলগ্ন থেকেই ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে নিবিড় ভাবে জড়িত ছিল। এরা বহু ওষুধ কোম্পানির বৃহৎ অংশের শেয়ারের মালিক। ইন্টারনেটে খোঁজ করলে জানা যাবে এই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির সম্পর্ক হচ্ছে - ‘উভয় উভয়ের স্বার্থ রক্ষার জন্য’। এই সম্পর্ককে 'ফিলান্থ্রপিক ক্যাপিটালিজম' বলা হয়, যেখানে জনকল্যাণের আড়ালে আসলে ব্যবসায়িক স্বার্থকেই রক্ষা করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন চিকিৎসক বিজ্ঞানী হারমেইন ভাসক্যুয়েজ বলেছেন, ‘বিশ্বের সর্বাধিক মারাত্মক অসুখের ওষুধ আবিষ্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেইসব পুঁজিপতিকে যারা মুনাফা ছাড়া আর কিছু বোঝে না’। বাজার অর্থনীতিকে রক্ষা করার স্বার্থে এজাতীয় বৃহৎ পুঁজির সাথে যুক্ত হয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখন বৃহদাকার অর্থ প্রদানকারীর উপরে নির্ভর করেই চলছে।
২০০ বছর ধরে প্রকাশিত একটি চিকিৎসা বিষয়ক একটি পত্রিকাও লিখেছে যে, এই চুক্তি দেশগুলোর স্বাধীনভাবে জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতাকে সীমিত করবে। এর ফলে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক, বিশ্ব অর্থনৈতিক মঞ্চ এবং জাতিসঙ্ঘের হাতে চলে যাবে। এই অধিকার কেবলমাত্র বিশ্ব অর্থনৈতিক মঞ্চ (World Economic Forum) রাষ্ট্রসঙ্ঘ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হাতে ছেড়ে দিতে হবে। স্বাস্থ্য সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত ও কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব আর তৃতীয় দুনিয়া বা উন্নয়নশীল দেশগুলোর থাকবে না। আর রাষ্ট্র সঙ্ঘের নীতি নির্ধারণের ওপর নিয়ন্ত্রণ যেহেতু এই বৃহৎ কর্পোরেটদেরই হাতে থাকছে, তাই আসলে তারাই সমগ্র ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করবে নিজেদের মুনাফার স্বার্থে।
এই চুক্তি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) বিতর্কিত ‘ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট’ চুক্তির কথা মনে করিয়ে দেয়। তেমনই নতুন চুক্তির মাধ্যমে একটি নতুন সংস্থা তৈরি হবে, যারা দেশগুলো এই চুক্তি কতটা কার্যকর করছে, তা পর্যালোচনা করবে। এর ফলে এই দেশগুলো নিজেদের রোগ প্রতিরোধের পরিকল্পনা তৈরি করার অধিকার এবং স্বাধীনতা হারাবে। এই চুক্তির মাধ্যমে তৃতীয় বিশ্বের ছোট দেশগুলোকে কার্যত নিজেদের স্বাস্থ্য বাজারের অধীনে আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
একই ভাবে এই চুক্তি একটি পৃথক ব্যবস্থা সৃষ্টি করবে যার নাম দেওয়া হবে ‘মহামারী সামলানোর জন্য বিভিন্ন দেশের সম্মেলন’। এরা প্রতিবছর অধিবেশন করে দেশগুলো এই চুক্তির রূপায়ণ কিভাবে করছে তার পর্যালোচনা করবে। দেশগুলোর নিজের দেশের রোগ প্রাদুর্ভাব প্রতিহত করার স্বাধীন অধিকার আর থাকবে না। ২০২৫ এর ১৫ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সকল দেশ একমত হয়ে চুক্তি সম্পাদন করেছে বলে জানানো হয়েছে।
কোভিড কালে যে সমস্ত বিষয়ে তীব্র মতানৈক্য হয়েছিল সেগুলো মেটানো যায়নি। বিতর্কিত বিষয়বস্তু এড়িয়ে একটা মোটা দাগের চুক্তি সাক্ষরিত হলো। যে লক্ষ্য পূরণ হয়েছে সেটা হলো, তৃতীয় বিশ্বের ছোট ছোট দেশগুলোর স্বাস্থ্যের বাজার দখল করে নেওয়া।
যেটা আশা করা গিয়েছিল ধনী দেশের থেকে যথেষ্ট অর্থ সংগ্রহ করে বিশ্বের বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও অতিমারীর বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটা বিশাল যৌথ গবেষণার মাধ্যমে অতিমারীর বিরুদ্ধে টিকা আবিষ্কার করার কাজ করবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, তার পরিবর্তে বকলমে সেই কাজ করছে গেটস ফাউন্ডেশন বিপুল মুনাফার লক্ষ্যকে সামনে রেখে। এর ফলে বিশ্বব্যাঙ্কের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হবে ছোট দেশগুলিও এবং কর্পোরেটদের তৈরি ওষুধ তৃতীয় বিশ্বের বাজারজাত করার পথ তৈরি করা হলো এই চুক্তির মাধ্যমে।
World Health Organization
কর্পোরেট দখলে এবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অমিতাভ গুহ

×
মন্তব্যসমূহ :0