Dhupguri Flood

নিঃস্ব ৮ বুথের বাসিন্দারা, ঘরহারা ৫ হাজারের বেশি, দাবি জলঢাকায় বাঁধের

জেলা

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ঘর হারানো সুখবালা রায় দাবি তুলছেন বাঁধের।

কৌশিক দাম: ধূপগুড়ি

অস্থায়ী ত্রাণ নয়, এই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের এখন একটাই দাবি, স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।
ভুটান পাহাড়ে অবিরাম বৃষ্টিতে  গত ৫ অক্টোবর সাত সকালে জলঢাকা নদীর বাঁধ ভেঙে রাতারাতি ভেসে যায় গধেয়াকুঠি অঞ্চলের হোগলাপাতা, কুল্লাপাড়া, ধাপ্পারডাঙ্গা, বেতগাড়া, চরচরাবাড়ি সহ আটটি বুথ এলাকার বহু গ্রাম। এর মধ্যে চারটি বুথ প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। 
এই সব এলাকায় ঘরবাড়ি, চাষের ফসল, গবাদি পশু কিছুই রক্ষা পায়নি আকস্মিক এই বিপর্যয় থেকে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বগরিবাড়ির হোগলাপাতা, কুল্লাপাড়া এলাকা। প্রায় ৫–৬ হাজার মানুষের মাথায় কোনও ছাদ নেই।
​"আমাদের অবস্থা খুব খারাপ, আমরা ভালো থাকতে চাইলে বাঁধ চাই"— জলঢাকা নদীর ভাঙা বাঁধের পাশে বসে থাকা বৃদ্ধা সুখবালা রায়ের কণ্ঠে আজ শুধু অসহায়তার আর্তি। ধূপগুড়ি ব্লকের গধেয়াকুঠি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকায় জলঢাকা নদীর বাঁধ ভেঙে জনজীবন এখন সম্পূর্ণ তছনছ।
ভেঙে যাওয়া ঘরের ধ্বংসস্তূপের পাশে পড়ে রয়েছে ভিজে শস্যদানা, ভেসে যাওয়া আসবাব, ভেঙে পড়া টিনের চাল। কেউ আশ্রয় নিয়েছেন স্কুলে, কেউ বা রেললাইনের ধারে। কেউ প্রশাসনের রিলিফ ক্যাম্পে ঠাঁই পেয়েছেন। প্রশাসন থেকে খাবার দেওয়া হলেও দুর্গতদের প্রশ্ন, "আর কতদিন এভাবে ক্যাম্পে থাকতে হবে?"
ত্রাণে ক্ষোভ, স্থায়ী সমাধানের দাবিতে সরব মানুষ। ত্রাণ শিবিরে থাকা সাবিত্রী মন্ডল ক্ষোভ ভরে বলেন, "বাচ্চাদের নিয়ে আর কতদিন ত্রাণ শিবিরে থাকব? রোদের মধ্যে, মশার কামড়ে বাচ্চারা কষ্ট পাচ্ছে। সরকার যদি অবিলম্বে বাঁধটি ঠিক করে দেয়, তাহলে অন্তত ভবিষ্যতে বাঁচতে পারব।" ​
প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত রিলিফ ক্যাম্প চালু রাখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কবে দুর্গতরা নিজেদের ভিটেমাটিতে ফিরবেন সেই প্রশ্নের জবাব কেউ দিতে পারছে না। আশ্বাস মিললেও, নেই স্থায়ী সমাধানের কোনও রূপরেখা। ক্ষোভ বাড়ছে দুর্গতদের মধ্যে।
বন্যা-পরবর্তী এই বিপর্যয়ে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সিপিআই(এম)। গধেয়াকুঠি অঞ্চলের সিপিআই(এম) নেতা নিরঞ্জন রায় বলেন, "সরকার শুধু ত্রাণ দিয়ে দায় সারে। কিন্তু এখন প্রয়োজন স্থায়ী সমাধান। দ্রুত ভাঙা বাঁধ মেরামত করতে হবে, পাশাপাশি যাদের ঘরবাড়ি ভেসে গেছে, তাদের জন্য নতুন করে ঘর তৈরি করতে হবে।" ​তিনি আরও বলেন, "যদি সরকার দ্রুত ও স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আমরা দুর্গত মানুষদের নিয়ে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।"
জলঢাকা পাড়ের বিপর্যস্ত মানুষ অস্থায়ী ত্রাণ শিবিরে নয়, চাইছেন স্থায়ী ও নিরাপদ বাসস্থান। চাইছেন নিশ্চিন্ত জীবনযাত্রা। চাইছেন স্থায়ী বাঁধ।

Comments :0

Login to leave a comment