কোন অপরাধের ঘটনার তা সে সাধারণ অপরাধ হোক বা সন্ত্রাসবাদী হামলা হোক, ন্যায় বিচার তথা অপরাধীর উপযুক্ত সাজা শুধুমাত্র আদালত বা বিচারকের উপর নির্ভর করে না। বিচারকের ভূমিকা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে তার থেকেও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ তদন্তকারী সংস্থার তদন্ত এবং সরকারি উকিলের ভূমিকা। সর্বোপরি সরকারের ভূমিকা ও সদিচ্ছা। সরকার যদি সত্যি সত্যি চায় তাহলে ন্যাবিচার কখনোই অধরা থাকতে পারে না।
সরকারের অবস্থান এবং চাওয়া-পাওয়া অনুযায়ী তদন্ত সংস্থা ঠিক হয় এবং তদন্তকারী অফিসার বাছাই হয়। তদন্ত এগোয় সরকারের প্রত্যাশা মতোই। সরকারই নিযুক্ত করে তার পছন্দের বিশ্বস্ত উকিল যাতে সরকারের ইচ্ছা প্রতিফলিত হয় উকিলের যুক্তি বিন্যাসে ও তথ্য-প্রমাণাদি দাখিলে। সরকারের অভীষ্ট লক্ষ্যে বিচার প্রক্রিয়া অগ্রসর না হলে বিচার প্রক্রিয়া অদৃশ্য সুতোর টানে থমকে যাবে। মাঝপথে বার বার তদন্ত সংস্থা বদলে যেতে পারে, বদলাতে পারে তদন্তকারী অফিসারও। উকিল যদি কথা না শোনেন বদলে যেতে পারেন তিনি। অবাক হবার থাকে না খোদ বিচারকও বদলে গেলে। এসব অবশ্য নতুন কিছু নয় গুজরাটের দাঙ্গার কলঙ্কিত নায়ক নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে আরএসএস-বিজেপি’র সরকার গঠনের পর থেকে দেশে এমন ঘটনা আকছার ঘটে চলেছে। হিন্দুত্ববাদীদের অন্যতম প্রধান ডিসকোর্সই হলো হিন্দুরা সন্ত্রাসবাদী হতে পারে না। সন্ত্রাসবাদী হয় কেবল মুসলিমরা। তাই সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে যুক্ত থাকার অভিযোগে ধৃত মুসলিমদের যেকোনও মূল্যে কঠোরতম সাজা দেবার সর্বাত্মক প্রয়াস চালালেও মোদী সরকার একই অভিযোগে অভিযুক্ত হিন্দুদের বিশেষ করে সঙ্ঘঘনিষ্ঠ হিন্দুত্ববাদীদের ছাড় দিতে বদ্ধপরিকর। তার জন্য তদন্ত সংস্থা, তদন্ত অফিসার, উকিল, বিচারক ইত্যাদি সবকিছু বদল করে তদন্তের অভিমুখ ভিন্ন পথে ঘোরাতে দ্বিধা করে না। এমন কৌশল অবলম্বন করে গুজরাট দাঙ্গা ও এনকাউন্টারে খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ থেকে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ সহ গুজরাটে অন্য মন্ত্রী ও শীর্ষ আধিকারিকদের যেমন মুক্ত করার ব্যবস্থা হয়েছিল তেমনি সমঝোতা এক্সপ্রেস বিস্ফোরণ, আজমের শরিফ, মক্কা মসজিদ বিস্ফোরণে অভিযুক্ত হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসবাদীদের ছাড় দেবার ব্যবস্থা হয়েছিল। এই সবই হয়েছে মোদী প্রধানমন্ত্রী হবার পর। সর্বশেষ মহারাষ্ট্রের মালেগাঁও বিস্ফোরণের মামলায় অভিযুক্ত সাতজন হিন্দুত্ববাদী নেতাকেই বেকসুর খালাস করে দেওয়া হয়েছে যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে। এরা সকলেই সাভারকারের তৈরি করা হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ‘অভিনব ভারতের’ সঙ্গে যুক্ত। মুসলিম সন্ত্রাসবাদীদের পালটা সংগঠন হিসাবে কাজ করছিল এই অভিনব ভারত। এদের টার্গেট মসজিদ, মুসলিম ধর্মস্থান এবং মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা। মালেগাঁও’র মুসলিম জনবহুল এলাকায় দু’বার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। মারা যায় ৬ জন, আহত ১০০। ১৭ বছর আগের সেই ঘটনায় অভিযুক্ত ছিল গেরুয়া নেত্রী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর, প্রাক্তন সেনা প্রসাদ পুরোহিত সহ অনেকে। গোড়ায় তদন্ত যেভাবে এগচ্ছিলো এবং আদালতে বিচার যেভাবে চলছিল তাতে ন্যায় বিচারে প্রত্যাশা জেগেছিল। মোদী ক্ষমতায় সবটাই পালটে দিয়েছেন।
Hindu Terrorism Malegaon
গেরুয়া তাই বেকসুর

×
Comments :0