Post Editorial

বাংলার মাটিতে স্যারের পা

উত্তর সম্পাদকীয়​

অলকেশ দাস

২০০২ সালে যখন রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন হয় তখন মোট ভোটার ছিল ৪ কোটি ৯৬ লক্ষ। ২০২৫ এর জানুয়ারিতে পশ্চিমবঙ্গে ভোটারের সংখ্যা ৭ কোটি ৬৩ লক্ষ। দু’দশকে ভোটের বৃদ্ধির হার ৬৬ শতাংশ। অস্বাভাবিক। এ বছরের আগস্ট মাসে ২০২৪ এর পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনী তালিকা সম্পর্কে এক সমীক্ষা করা হয়। ভিত্তি করা হয় ২০০২ বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) পরবর্তী ২০০৪ সালের ভোটার তালিকাকে। জন্ম তথ্য, স্যাম্পল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমে মৃত্যুহার, বয়স ভিত্তিক বেঁচে থাকার প্রবণতা, গড় আয়ুষ্কালের তথ্য, স্থানান্তরের পরিসংখ্যান, সব মিলিয়ে এক সমৃদ্ধ জনসংখ্যাগত তথ্যগুচ্ছে উপনীত হন তারা। সব মিলিয়ে প্রত্যাশিত নির্বাচকদের সংখ্যা হওয়ার কথা আনুমানিক ৬ কোটি ৫৭ লক্ষ ৬ হাজার ৮৪৯। কিন্তু সরকারি ভোটার তালিকায় মোট নির্বাচকদের সংখ্যা ৭ কোটি ৬১ লক্ষ ২৪ হাজার ৭৮০। প্রায় ১ কোটি ৪ লক্ষ ১৭ হাজার ৯৩১ অতিরিক্ত ভোটার। ১৩.৬৯ শতাংশ অতিরিক্ত ভোটার। রাজ্যে ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্র। গড়ে প্রতিটি বিধানসভা ভিত্তিক অতিরিক্ত ভোট ৩৫,৩৭৪। ২০১১ থেকে ২০১৫-র মধ্যে শুধু রাজারহাট নিউ টাউনেই প্রায় ৭৪ হাজার ভোট বেড়েছে। আর রাজারহাট সহ নন্দকুমার, ময়না, বারুইপুর পূর্ব কেন্দ্রে যখন আধিকারিকরা ভোটার তালিকায় জালিয়াতি করার দায়ে ধরা পড়ে তখন চিত্র আরও পরিষ্কার হয়। ঘটনা স্ফটিক স্বচ্ছ হয় যখন মুখ্যমন্ত্রী এই আধিকারিকদের পাশে এসে দাঁড়ান। এত কুৎসিত দলটা। তবু তৃণমূল এত ভোট পায় কেন? তার কয়েকটা উত্তরের  কিছুটা এখানে। 
সর্ববৃহৎ ভোটার সঙ্কোচন 
পশ্চিমবঙ্গে  অনেকের ধারণা এসআইআর সেই অস্ত্র যা দিয়ে ভোটার তালিকায় গণতন্ত্রের প্রতিবন্ধকতাকে রোধ করা যাবে। এ ধারণা যে অসার তার উদাহরণ বিহারের এসআইআর। এসআইআর-এ বলা হয় প্রত্যেক ব্যক্তিকে এনুমারেশন ফর্ম ফিলাপ করতে হবে ভোটার হওয়ার আবেদন জানিয়ে। শুধু ফর্ম নয়, সঙ্গে প্রমাণ পত্র। মূলত জন্ম শংসাপত্র। নিজের, মা বা বাবার, কখনো মা ও বাবার একসাথে। যে ১১ টি প্রমাণপত্র দেওয়ার কথা বলা হলো তার অনেকগুলো জন্মশংসাপত্র সম্পর্কিত। এগুলো সবই নাগরিকত্ব প্রমাণ করা সম্পর্কিত। অথচ নাগরিকত্ব যাচাইয়ের এক্তিয়ার নির্বাচন কমিশনের নয়। এতদিন প্রত্যেক ব্যক্তির ভোটাধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব ছিল রাষ্ট্রের। এবার ভোটার তালিকায় নাম তোলার দায় এবং দায়িত্ব ব্যক্তির ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হলো। খসড়া তালিকায় ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ গেল। নির্বাচন কমিশন তাদের নাম পর্যন্ত প্রকাশ করল না। কেন তাদের নাম বাদ গেল তাও জানালো না। প্রশ্ন উঠল তাহলে বিযুক্তরা আবেদন বা অভিযোগ করবে কি করে? শেষ অবধি সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করল। বলল অন্তত আধারকে প্রমাণপত্র হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। একমাস সময় দেওয়ার পর চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণা হলো। চূড়ান্ত তালিকায় নতুন করে ৩ লক্ষ ৬৬ হাজার ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হলো। আসলে মোট বাদ গেল প্রায় ৬৯ লক্ষ।  কিন্তু নতুন করে এদের নাম বাদ গেল কেন? কেউ অভিযোগ করেছিল? চ্যালেঞ্জ করেছিল? এরা অন্তর্ভুক্তির আবেদন কিভাবে করবে? নতুন যে ২১ লক্ষ ৫৩ হাজারের নাম যুক্ত করা হলো তাদের মধ্যে আগে বাদ দেওয়া নামের কেউ কি যুক্ত হলো? এদেরকে শুনানিতে ডাকা হয়েছিল? বিহারে প্রায় সাড়ে তিন কোটি মহিলা ভোটার। এদের মধ্যে ২৩ লক্ষকে বাদ দেওয়া হলো। যে ছটি জেলায় সবচেয়ে বেশি মহিলা ভোটারদের নাম বাদ গেছে সেখানে মোট ৬০টির মতো বিধানসভা আসন রয়েছে। বিজেপি বলেছিল বোরখা পরা মহিলা ভোটারদের দিকে বাড়তি নজর দেওয়া উচিত কমিশনের। বাদ দেওয়া হয়েছে উল্লেখযোগ্য বিপুল সংখ্যক মুসলিম পরিযায়ী শ্রমিক ভোটারদের। যে জেলায় জনসংখ্যার ১০ শতাংশ মুসলমান আছে সেই জেলাগুলিতে ভোটার লিস্ট থেকে বাদ পড়াদের ৯.৭ শতাংশ আছে। তারপরেই বাদ পড়াদের সর্বোচ্চ আছে সীমান্ত অঞ্চলে, ৭.৪ শতাংশ। যে ৬৮ লক্ষ ৬৬ হাজার ভোটারের নাম কাটা গেল তার ১০ ভাগের ১ ভাগ নির্দিষ্ট ১৫ টি বিধানসভা আসনের। এটা  এদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ভোটার সঙ্কোচন শুধু নয়, তা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্য যুক্ত এবং পরিকল্পিত।
কিভাবে ভোটবন্দি বাংলায়
এই নিরিখেই বিচার করতে হবে এ রাজ্যে সম্ভাব্য প্রযুক্ত নির্বাচক তালিকায় এসআইআর-এর প্রয়োগ ফলকে। এরাজ্যে ভোটার তালিকার শেষ নিবিড় সংশোধন হয়েছিল ২০০২ সালে। বলা হচ্ছে ২০০২ সালে এবং ২০২৫ সালের ভোটার তালিকায় যাদের নাম আছে তাদের অন্য কোনও প্রমাণ পত্র লাগবে না। এনুমারেশন ফর্মে শুধু ভোটার তালিকার পার্ট নম্বর এবং সিরিয়াল নম্বর দিলেই হবে। আগে ছিল ২০২৫ ভোটার লিস্টে যার নাম আছে কিন্তু ২০০২ সালের তালিকায় নেই তাকে দেখাতে হবে যে তার বাবা বা মার নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় আছে। গোটা দেশে তৈরি হওয়া জনমতের চাপে নির্বাচন কমিশন পিছিয়ে আসে। বলে আত্মীয়তার সূত্রের কারোর নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় থাকলেই হবে। ২০০২ এবং ২০২৫ সালের ভোটার তালিকায় এই নাম মেলানোর কাজ চলছে, ম্যাপিং। এই নাম যাদের মিলবে না তাদেরই দিতে হবে নিজেদের, মা-বাবার জন্মশংসাপত্র, অন্যান্য প্রমাণপত্র। ম্যাপিংয়ের অর্ধেক কাজ হয়েছে এক মাসে। নির্বাচন কমিশন বাকি অর্ধেক কাজ এক সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন করতে বলেছে। এত অল্প সময়ের ভেতরে হিমালয় পর্বত সমান এই কাজ করতে গেলে যে অস্বচ্ছতা তৈরি হবে তার দায় নিতে হবে সাধারণ ভোটারদের। ম্যাপিংয়ে মিল কম পাওয়া যাচ্ছে উদ্বাস্তু অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে। বিহারে ২০০৩ এবং ২০২৫-এর দুটি ভোটার তালিকাতেই নাম ও আত্মীয়তা ছিল ৭৭ শতাংশের। সুতরাং বাকি ২৩ শতাংশকে জন্মশংসাপত্র প্রমাণপত্র হিসাবে দাখিল করতে হয়েছিল। আমাদের রাজ্যে আনুমানিকভাবে এই সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৩০ শতাংশে। অর্থাৎ প্রায় ২ কোটি ৩০ লক্ষ ভোটারকে নিজের, মা-বাবার জন্মশংসাপত্র বা প্রমাণপত্র দাখিল করতে হবে। ১৯৮৭ সালের আগে জন্ম হলে নিজের জন্ম শংসাপত্র। ১৯৮৭ থেকে ২০০৪-এর মধ্যে জন্ম হলে বাবা অথবা মা এর একজনের জন্মশংসাপত্র। ২০০৪ এর পরে জন্ম হলে বাবা এবং মা দু’জনেরই জন্মশংসাপত্র। এছাড়া অন্য যে তথ্য বা প্রমাণপত্র দিতে বলা হয়েছে তা খুবই দুরূহ।  সুতরাং প্রমাণ প্রদানের অঙ্ক এ রাজ্যে বেশ কঠিন। বিশেষত তফসিলি, আদিবাসী ও গরিব প্রান্তিক মানুষের। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের। যাদের ঘরে চাল ডাল নেই, এই ডিজিটাল ব্যবস্থায় এসআইআর তাদের কাছে দুর্বোধ্য। 
অশনি সঙ্কেত: মহিলা,পরিযায়ী
এরাজ্যে ৩ কোটি ৭৬ লক্ষ ৬১১ জন মহিলা ভোটার। মেয়েরা এই সমাজে প্রতি পদে পদে ব্রাত্য। কোনও জায়গায় তাদের নাম থাকে না। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। জমি, জায়গা, অন্যান্য নথিপত্রে মহিলাদের নাম পদবির ঠিক থাকে না। রাখা হয় না। মহিলাদের বলা হয় জন্ম পরিযায়ী। যখন স্বামীর ঘরে যায় তখনই সে প্রায় মুছে যায় পিতার পরিচয় থেকে। অভিভাবক স্বামী, নতুন পদবিও তার। স্বামীহারা হলে আরও অস্তিত্বের সঙ্কটে। এই বাংলায় এসআইআর মহিলা ভোটারদের কাছে এক অশনি সংকেত। বিপদ হবে পরিযায়ী শ্রমিকদের। এ রাজ্যে কাজ না পেয়ে অন্য রাজ্যে কাজ করতে যেতে হয়েছে।  তাদের দু'দিকে টান। একদিকে মাতৃভূমি ও পরিবারের টান অন্যদিকে মমতারাজে কাজ না পেয়ে অন্য রাজ্যে পেশা রক্ষার তাগিদ। এদের এক উল্লেখযোগ্য অংশ মুসলমান। আরএসএস বা বিজেপি পরিচালিত নির্বাচন কমিশনের লক্ষ্য অর্ডিনারি রেসিডেন্টে সংজ্ঞায়িত করে তাদের কর্মস্থলের অজুহাতে বাসস্থানের ভোটার তালিকা থেকে বিযুক্ত করা। এদের নাম যদি বাদ যায় তাহলে চ্যালেঞ্জ করবার জন্য ফর্ম ফিলাপ করে আসতে গেলেও মালিক এদের আসতে বাধা দেবে। রোজগার,সময় নষ্ট হবে। কাজের টানে নিজের ভিটেয় অনুপস্থিতির খেসারত দিতে হতে পারে এই আশঙ্কায়  পরিযায়ী শ্রমিকেরা।
আরএসএস ও সর্বজনীন ভোটাধিকার
এসআইআর অভিযানের সঙ্গে আরএসএস’র লক্ষ্য হিন্দুত্বের সম্পর্ক গভীর। আরএসএস প্রথম থেকেই সর্বজনীন ভোটাধিকারের বিরুদ্ধে ছিল। স্বাধীন দেশের সংবিধানে সর্বজনীন ভোটাধিকারের প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার বিরোধিতা করেছিল। যারা জাত এবং ধর্মের ভিত্তিতে সমাজের উঁচু, নিচু বা প্রথম, দ্বিতীয় প্রথা সমাজে চালু করেছিল মনুবাদ অনুসারে। সকলের সমান ভোটাধিকারের মৌলিক ধারণার বিরোধী ছিল আরএসএস। দেশের ক্ষমতা দখল করবার পর তাদের রাজনৈতিক ডানা বিজেপি-কে তারা ব্যবহার করে এনআরসি ও সিএএ-কে বাস্তবে প্রয়োগ করার কাজে। নাগরিকত্বের ধারণার উপরই আঘাত। তাতে ধর্মীয় বিভাজনের কাজ সহজ হয়। এবার নির্বাচন কমিশনকে করায়ত্ত করে ভোটার তালিকার এসআইআর করে সর্বজনীন ভোটাধিকার খর্ব করতে চাইছে।

কাটা ঘুড়ি গাছের মগডালে
বাঙালি উদ্বাস্তু এসআইআর-এর আক্রমণের আর এক লক্ষ্যবস্তু।  এদেশে, এ বাংলায় তারা আসে। প্রতিবন্ধকতাকে দু’হাতে অতিক্রম করে। পরিশ্রম, অধ্যবসায়ের মধ্য দিয়ে এদেশের একজন হিসাবেই নিজেদের গড়ে তোলে। তারা ভোটারও হয়। বরের ঘরের মাসি আর কনের ঘরের পিসি সেজে একদিকে নাগরিকত্ব আইন দিয়ে তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়, আবার নাগরিকত্ব আইনের বিধিকে সামনে রেখে আবেদনের মাধ্যমে নাগরিকত্বের লোভ দেখায়। দিশাহারা মতুয়া, তফসিলি, উদ্বাস্তুরা বিজেপি-এর পাতা সেই ফাঁদে পা দেয়। এসআইআর-এ যত নাম বাদ যাবে ততই বিজেপি’র রমরমা। শান্তনু ঠাকুররা তাদের মতুয়া কার্ড দেবে, কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা নেবে, আর হিন্দু বানিয়ে নাগরিকত্বের আবেদন করিয়ে গাজর ঝোলাবে।

যারা ছড়ায় ঘৃণার হুলিয়া

অনুপ্রবেশকারী আর তার মানেই মুসলমান — এই তত্ত্ব বিজেপি’র। অথচ কোনও অঙ্কেই তা মেলে না। ১৯৯১ থেকে ২০১১, এই সময়ে পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২১.১ থেকে কমে ১০.৮ শতাংশ হয়েছে। প্রায় অর্ধেক। মুসলমানের অনুপ্রবেশ হলে জনসংখ্যার বৃদ্ধি হতো। রাজ্যে মুসলিম বৃদ্ধির হার ১৯৯১ থেকে ২০১১, ৩৩.৯ শতাংশ থেকে কমে ২১.৮ শতাংশ হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে যদি মুসলিম অনুপ্রবেশ হয় তবে বাংলাদেশের মুসলিম জনশতাংশ কমে যাওয়ার কথা। সেটাও হয়নি। দেশের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম। মুসলিমদের টোটাল ফার্টিলিটি রেট পশ্চিমবঙ্গে ২.০৪, দেশে ২.৬১।  বাংলাদেশের তুলনায় এ রাজ্যে ভয়াবহ কাজের অবস্থা, শিল্প-অর্থনীতি বন্ধ্যা। তাহলে কিসের টানে বাংলাদেশ থেকে মুসলমানেরা আসবে? তারা ওপার বাংলা থেকে খবর পায় যে মুসলমানদের এদেশে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। মুসলিম বিদ্বেষ তৈরি করা হচ্ছে। ওদেশে তারা তো সংখ্যাগুরু। এদেশে সংখ্যালঘু হয়ে খামোখা মোদী-মমতার রোষানলে পড়তে যাবে কেন? সুতরাং এই মিথ্যাতেও হিন্দুত্বের তুলির টান।

অসম্ভবের সম্ভাব্যতা

২০০২ সালে রাজ্যে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনের সময় লেগেছিল ছ'মাস।  বিহারের অভিজ্ঞতায় বলা যায় বলা যায় এরাজ্যে সম্ভবত সময় পাওয়া যাবে ৩ মাস। অথচ ভোটার বেড়েছে ৪.৭ কোটি থেকে ৭.৬ কোটি। এবারে অতিরিক্তভাবে বিএলও-রা বাড়ি বাড়ি যাবে তিনবার করে। সঙ্গে যাবে রাজনৈতিক দলগুলোর বুথ লেভেল এজেন্টরা। প্রত্যেক ভোটারের কাছ থেকে এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করানো হবে। সঙ্গে নিতে হবে প্রমাণ তথ্য। রাজ্যের এক বড় অংশ সীমান্তবর্তী এলাকা, উদ্বাস্তু ঘন রাজ্য, বস্তি যেমন আছে তেমনি আকাশ ছোঁয়া ইমারত আছে, আছে কাজের সূত্রে ভিন রাজ্যে বসবাসরত পরিযায়ী শ্রমিক। নির্বাচনের প্রাক্কালে এই বিশেষ নিবিড় সংশোধনের ফলে আদালতে মামলা বাড়বে। এদিকে নির্বাচনী বুথের সংখ্যা ৮০,৬৮১ থেকে বেড়ে ৯৪,৪৯৭ হয়েছে।  
এমনিতেই প্রশাসনিক ব্যবস্থায় কাজের অতিরিক্ত চাপ। নির্বাচন কমিশনের কেন্দ্রীয় নির্দেশে এক অসম্ভব অতিরিক্ত কাজের বোঝা এদের উপর নেমেছে এবং নামছে। স্বল্প সময়ে কার্যকরী স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে বর্তমান কাঠামো যথেষ্ট নয়। অথচ একজন প্রকৃত ভোটারের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাওয়া, ভোটার লিস্টে একজন অবাঞ্ছিত ঢুকে পড়ার চেয়েও বেশি সংবেদনশীল। বর্তমান প্রকৃত ভোটারের পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থা রাজনৈতিক মেরুকরণ দ্বারা নির্ধারিত হয়। আর এই সব কিছুর শিকার হবে সাধারণ মানুষ — নিজেদের ভোটের অধিকার বিসর্জন দিয়ে।

দেখনা হ্যায় জোর কিতনা
এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আবার উচ্চ মাত্রায় বিজেপি’র বিরুদ্ধে গলা তুলতে শুরু করেছেন। বাইনারির শুরু। কেরালায় পিনারাই বিজয়নরা সাহস দেখাতে পারেন। এসআইআর-কে নির্বাচন কমিশনের পুতুল হিসাবে কেরালা রাজ্যে ব্যবহৃত হতে না দেওয়ার সর্বসম্মত প্রস্তাব বিধানসভায় গ্রহণ করে। মমতা পারেন না। আরএসএস’-এর গলা জড়িয়ে থাকলে তা পারা যায় না। সাধারণ জনগণকে দায়িত্ব নিতে হবে নিজের বুথের ভোটের তালিকার আবর্জনা দূর করতে ভূমিকা পালনের। অন্যদিকে এসআইআর রাজনৈতিক লক্ষ্য যুক্ত হিন্দুত্ববাদী প্রজেক্ট। ভোটার লিস্ট সংশোধনের নামে বাছাই করা বিয়োজন। যাতে সংসদীয় ক্ষমতা দখলে এগিয়ে যেতে পারে বিজেপি। ধুবুলিয়ার সোনডাঙ্গায় আসাদ আলী শেখ ও সরজো শাহি শেখের নামে আসাম এনআরসি’র নোটিস এসেছে। তাদের ওই রাজ্যে গিয়ে প্রমাণ করতে হবে কেন তারা অনুপ্রবেশকারী নয়। ১৯ বছর আগে এরা আসামে কাজ করতে গিয়েছিল। তাও কেবল দু'সপ্তাহের জন্য। এনআরসি-এর সমনে এদের থরহরি কম্প। এসআইআর আদতে ঘুরপথে এনআরসি। বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা। দেখা যাক এসআইআর আমাদের কত ঘা দিতে পারে, আর আমরা কতখানি গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি।

 

Comments :0

Login to leave a comment