সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, স্বেচ্ছাসেবী অথবা এনজিও, তা যে পরিচিতিতেই দেখা হোক না কেন আড়ে- বহরে, ক্ষমতায়, প্রভাব-প্রতিপত্তিতে, অর্থ সম্পদে, লোকবলে এদেশের সবচেয়ে বড় সংগঠন বা সংস্থা যদি কাউকে চিহ্নিত করতে হয় তাহলে সবার আগে উঠে আসে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক তথা আরএসএস’র নাম। সম্প্রতি এই সংগঠন সাড়ম্বরে এবং মহা সমারোহে শতবর্ষ উদ্যাপন শুরু করেছে দেশজুড়ে। আরএসএস’র হিন্দত্ববাদী মতাদর্শগত লক্ষ্য হলো ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করা, যে রাষ্ট্রের সংবিধান হবে মনু সংহিতার অনুসারি। এই লক্ষ্যপূরণে আরএসএস তাদের ছাতার নিচে গড়ে তুলেছে শতাধিক অনুসারি সংগঠন। তাদের প্রধান কাজ ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরি করা এবং মুসলিম বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়ানো। এদের মধ্যে অন্যতম বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরঙ দল ইত্যাদি। শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র সহ সমাজের বিভিন্ন অংশের মধ্যে তাদের রয়েছে স্বতন্ত্র হিন্দত্ববাদী সংগঠন। অন্ধ ও বিকৃত চেতনা প্রসারে এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া ছোট থেকে ছেলে মেয়েদের বিকৃত ইতিহাস, ধর্মান্ধতা ও হিন্দুত্ববাদী পাঠ দেবার জন্য দেশের সর্বত্র গড়ে তুলেছে অসংখ্য বিদ্যালয়। অর্থাৎ গুছিয়ে সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে আরএসএস। এইসব শাখাপ্রশাখার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাদের রাজনৈতিক শাখা বিজেপি। আরএসএস’র মতাদর্শগত লক্ষ্য অনুযায়ী হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং মনুবাদী সমাজ গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিজেপি-কে। স্বতন্ত্র-স্বাধীন রাজনৈতিক দল হিসাবে বিজেপি নিজেকে জাহির করলেও বিজেপি’র মতাদর্শগত অভিভাবক আরএসএস। আরএসএস’র অনুমতি ছাড়া বিজেপি’র পক্ষে কোনও পদক্ষেপ নেবার উপায় নেই। বিজেপি’র আসল চালক আরএসএস।
যত অবিশ্বাস্যই মনে হোক না কেন সরকারি খাতায় আইনগতভাবে এহেন আরএসএস’র নাম লেখা নেই। ক্লাব, সমিতি, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, এনজিও ইত্যাদি সকল ধরনের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সরকারিভাবে নথিভুক্ত করার ব্যবস্থা থাকলেও সচেতনভাবে সেই ব্যবস্থা এড়িয়ে চলেছে শতবর্ষে পা দেওয়া এই সংগঠন। আইনের আওতার বাইরে নিজের মতো করে চলছে গোপনে, আড়ালে, আবডালে। কেন সরকারি আইন মাফিক নথিভুক্ত নয়, সমস্যা কোথায় কেউ জানে না।
সারাদেশে বিস্তৃত অতিকায় সংগঠন। নাগপুরে বিশাল সাম্রাজ্য, দিল্লিতে রাজকীয় দপ্তর, রাজ্যে রাজ্যে, শহরে শহরে অসংখ্য অফিস, বাড়ি, সম্পত্তি। লক্ষ লক্ষ কর্মী, সদস্য। প্রতিনিয়ত পালিত হচ্ছে হাজারো কর্মসূচি। কোথা থেকে টাকা আসছে, কে দিচ্ছে কেউ জানে না। প্রতিবছর বিজয়া দশমীতে বন্ধ খামে আসে গুরু দক্ষিণা। অনেকটা ইলেক্টোরাল বন্ডের মতো।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা সারাদেশে জনসমাজে কাজ করে তাদের স্বচ্ছতা সবার আগে প্রয়োজন। আয়-ব্যয়ের হিসাব অডিট হবে না কেন? হলে তা প্রকাশ্যে আনতে অসুবিধা কোথায়? যেদেশে, যে দেশের আইন ও সংবিধানের আওতায় যে সংগঠন কাজ করে তাদের আইন ও সংবিধানের কাছে দায়বদ্ধ থাকা উচিত। নিজেদের নথিভুক্ত না করে আড়ালে কাজ করা মোটেই ভালো লক্ষণ নয়। আরএসএস জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত ও ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সংবিধানকে মান্যতা দেয় না। হিন্দ রাষ্ট্রের জন্য তারা ভিন্ন সংবিধান, পতাকা, সঙ্গীত ভেবে রেখেছে। সম্ভবত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ভারতের আইন ও সংবিধানের আওতায় স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে তাদের আপত্তি আছে।
Editorial
অনথিভুক্ত কেন?
×
Comments :0