বেহাল গ্রামীণ রাস্তা। সামান্য বৃষ্টিতেই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে সেই রাস্তা। এই রাস্তা দিয়ে প্রসূতি নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছতেই পারল না পরিবার। গাড়ির চাকা গড়লো না প্রায় ৫৫ মিনিট। ঝুঁকি নিয়ে গাড়ির ভিতরেই মহিলার প্রসব করালেন আশাকর্মী।
ঘটনা মেদিনীপুরের নারায়ণগড় ব্লকের পাকুড়সেনি সংলগ্ন এলাকার।
ওই আশাকর্মীর প্রশংসা করেছেন প্রসূতির পরিবার ও স্থানীয় মানুষ। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেন, ‘‘আশা দিদি যে ভাবে প্রসব করিয়ে মা ও শিশুকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন তার প্রশংসা করতেই হয়।’’
বুধবার ভোর পাঁচটায় পাকুড়সেনি গ্রাম থেকে এক প্রসূতিকে মকরামপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন স্থানীয় আশাকর্মী মানসী পাত্র। তিনি বলেন, ‘‘ভোর তিনটে নাগাদ তাঁকে জানানো হয় পাকুড়সেনি আদিবাসী পাড়ার সুব্রত সিং’র স্ত্রী সোনালি সিংয়ের প্রসব যন্ত্রণা উঠেছে। তিনি তক্ষুনি অ্যাম্বুলেন্সকে খবর দেন। কিন্তু ভোর পাঁচটা পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্স না ঢোকায় স্থানীয় একটি চার চাকার গাড়িতে প্রসূতিকে নিয়ে পরিবারের লোকজন হাসপাতালের উদ্দেশ্য রওনা দেন। গাড়ি কিছুটা রাস্তা পৌঁছানোর পরই বিপত্তি ঘটে। গ্রামীণ মোরাম এবং ঢালাই রাস্তার উপর পিচ্ছিল কাদায় গাড়ির চাকা আর গড়ায় না। কোদাল জোগাড় করে কাদা মাটি সরিয়ে গাড়ি গড়াতে গিয়ে প্রায় এক ঘন্টা আটকে থাকে। আর ততক্ষণে গাড়ির মধ্যেই প্রসূতি তাঁর প্রথম সন্তান প্রসব করেন।’’ জঙ্গলের আড়াল আর এক ধারে কাপড় ঘিরে ওই আশা কর্মী প্রসব করান। তারপরই সাড়া না পাওয়া সদ্যজাতকে নিজের দায়িত্বে কাঁদানোর চেষ্টা করেন।
এরপর এলাকার মানুষ গাড়িটিকে ঠেলে বেহাল রাস্তা পার করিয়ে দেন। মকরামপুর হাসপাতালে প্রসূতি ও সদ্যজাতকে না নিয়ে গিয়ে ঘুরপথে বেদলদা হাসপাতালে নিয়ে আসেন ওই আশা কর্মী। বেলদা হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রসূতি ও মাকে চিকিৎসা করেন। চিকিৎসকরা বলেন দুই জনই সুস্থ আছে। আশা কর্মীকে পরিবারের লোকজন সহ হাসপাতালের চিকিৎসক নার্সরা অভিনন্দন জানান।
আশা কর্মী মানসী বলেন, আমরা কোনেও প্রশিক্ষণ পাইনি। হাসপাতালে দিদিমণিদের দেখেছি সদ্যজাতকে কাঁদাতে কি কি কসরত করেন। সেটিই মনে করে চেষ্টা চালিয়েছি।
আশা কর্মীর এমন সাহসিকতাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ASHA Worker Manashi
কাদায় আটকে গাড়ি, রাস্তাতেই প্রসব করালেন আশাকর্মী মানসী

×
Comments :0