মণ্ডা মিঠাই — নতুনপাতা
শুভাংশু শুক্লা – ভারতের মহাকাশের নতুন দিগন্ত
অরিজিৎ মিত্র
যে জাতি স্বপ্ন দেখে, সে একদিন আকাশের সীমা পেরোয়। আর যে জাতি সাহস করে, সে একদিন মহাকাশের নীরবতাকেও জয় করে। ভারতের গর্ব রাকেশ শর্মার পথ ধরে আজ যে নাম আমাদের গর্বিত করে, তিনি হলেন শুভাংশু শুক্লা – ভারতের দ্বিতীয় মহাকাশচারী।
তাঁর যাত্রা কেবল এক মহাকাশ অভিযান নয়, বরং কোটি ভারতবাসীর স্বপ্ন, অধ্যবসায় ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক।
শুরুটা ছিল মাটির কাছেই
উত্তরপ্রদেশের কানপুরের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে শুভাংশুর জন্ম। তাঁর বাবা ছিলেন স্কুলশিক্ষক, মা গৃহবধূ।
ছোটবেলায় নিজের হাতে তৈরি করেছিলেন একটি টেলিস্কোপ, কাঠ আর পুরনো কাঁচ ব্যবহার করে। সেই টেলিস্কোপে তিনি প্রথম চাঁদের খোঁচাখোঁচে গর্ত দেখেছিলেন। সেই মুহূর্তে তাঁর মনে হয়েছিল—“আমি একদিন ওখানেই যাব।”
ক্লাস নাইনে পড়াকালীন একবার এক বন্ধুকে বলেছিলেন—
“আমরা শুধু ইতিহাস পড়ি কেন? কেন আমরা ইতিহাস লিখি না?”
আজ তিনি নিজেই একটি ইতিহাস।
গগনযান: ভারতের সাহসী মহাযাত্রা
ভারতের গর্ব, ISRO-এর গগনযান প্রকল্পের অধীনে শুভাংশুকে বেছে নেওয়া হয় চারজন চূড়ান্ত প্রার্থীর মধ্যে।
২০১৯ সাল থেকে তিনি পাইলট প্রশিক্ষণ ছাড়াও পেয়েছেন আন্তর্জাতিক স্তরের নভোচারী প্রশিক্ষণ – রাশিয়ার স্টার সিটি, ফ্রান্সের মন্টব্ল্যাঙ্ক বায়ো-ডোম ও ভারতীয় কৃত্রিম মহাকাশ সিমুলেটরে।
অজানা তথ্য: গগনযানে যাওয়ার সময় শুভাংশু নিজের সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন বিস্ময়কর দুটি জিনিস –
১. তাঁর প্রয়াত বাবার লেখা একটি চিঠি: “আমার ছেলে একদিন আকাশ ছুঁবে।”
২. ভারতীয় জাতীয় পতাকার ভেতরে সেলাই করা একটি ছোট্ট তুলসীপাতা – যা তিনি বিশ্বাস করতেন তাঁর "মাটি ও শিকড়ের প্রতীক"।
মহাকাশের অভিজ্ঞতা: নীরবতার বিস্ময়
যে সময় তিনি মহাকাশে ছিলেন, পৃথিবীতে তখন ছিল নীরবতা—COVID-পরবর্তী পুনর্জাগরণকাল।
অথচ তখন শুভাংশু পৃথিবীকে দেখেছিলেন “একটা নীল বিন্দু”, যাকে ঘিরে কত যুদ্ধ, কত লোভ, কত ভালোবাসা!
মহাকাশ থেকে পাঠানো তাঁর একমাত্র ব্যক্তিগত বার্তায় তিনি লেখেন—
“এই নীল গ্রহটিকে আমরা যতটা নিজের মনে করি, সে ততটাই অচেনা। আমরা এখানে অতিথি, স্বত্বাধিকারী নই।”
ফিরে এসে কী করলেন?
অভিযান শেষে তিনি আলোচনায় ছিলেন না। বিজ্ঞাপনে মুখ দেখাননি, নোবেল দাবি করেননি।
তিনি ফিরে এসেছেন শিক্ষার জগতে। আজ তিনি ভারতের প্রান্তিক অঞ্চলে “নভচেতনা” নামে একটি অলাভজনক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান চালান, যেখানে বাচ্চাদের শেখানো হয়—
“আকাশ শুধু দেখার জিনিস নয়, একদিন ছোঁয়ার জন্যও।”
এক নীরব নায়কের সত্য গাথা
শুভাংশু শুক্লা এমন একজন মানুষ, যিনি কৃতিত্বের শিখরে পৌঁছেও মাটিতে থাকেন। তিনি ভারতের গর্ব, ভবিষ্যতের আলোকবর্তিকা, আর আমাদের আত্মবিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর জীবন প্রমাণ করে—
“বড় মানুষ হতে গেলে মহাকাশে যেতে হয় না; কিন্তু মহাকাশে যেতে হলে বড় হৃদয় লাগে।”
নবম শ্রেণী, কল্যাণ নগর বিদ্যাপীঠ খড়দহ, উত্তর ২৪ পরগনা, কল্যাণ নগর, খড়দহ
Comments :0