বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের আগেই ভোটার তালিকার বিশেষ সার্বিক সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে ফের সরব হয়েছে কংগ্রেস। গোটা বিষয়টিকে বিহারের লক্ষ লক্ষ ভোটারকে ভোটদান থেকে বঞ্চিত করার ‘অশুভ অনুশীলন’ বলার পাশাপাশি ওই রাজ্যের নির্বাচনী ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে দেওয়ার ছক বলে শুক্রবার অভিযোগ করা হয়েছে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। গত বুধবার ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে এসআইআর নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়ে এসেছেন। বিশেষত যে সময় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন যে, এর ফলে রাজ্যের দু’কোটিরও বেশি ভোটার এবার ভোট দিতে পারবেন না হয়তো। কারণ ওই বিশেষ সার্বিক সংশোধন করতে যে সময় লাগবে তা এবারের বিধানসভা নির্বাচনের আগে শেষ করা সম্ভব হবে না বলেই তাঁরা মনে করছেন। শুধু তাই নয়, বিহারে ‘ভোটবন্দি’ মানা হবে না বলেও তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন। ভোটের অধিকার কাড়ার চেষ্টা হলে প্রতিবাদের জন বিস্ফোরণ ঘটবে বলেও সেদিন নির্বাচন কমিশনের দপ্তর থেকে বেরিয়ে হুঁশিয়ারি দেন বিরোধী দলের নেতারা। ওই দিন এসআইআর’র বিরোধিতা করে ১১ দলের নেতৃবৃন্দ মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের সঙ্গে দেখা করেন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে আলোচনার পরে বাইরে এসে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন বিরোধীরা। তাঁরা বলেন, নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক মোটেই সৌহার্দপূর্ণ হয়নি। ভোটাধিকার কাড়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে যে ধারণা করা হচ্ছিল, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনার পরে সেই আশঙ্কা আরও বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বিরোধীরা।
অবশ্য বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে যে, বিরোধীরা যে বিষয়টিকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে তা স্পষ্ট করে দিয়ে অনেকটাই প্রশমিত করতে সক্ষম হয়েছে তারা।
তবে কমিশনের বক্তব্য যে স্রেফ ফাঁকা বুলি তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল। এদিন এক্স হ্যান্ডেলে তিনি বলেছেন, ‘জনগণকে জানান্নমে পাঠাতে ওস্তাদ মোদী সরকার। এই এসআইআর’র ধাক্কায় লক্ষ লক্ষ ভোটার ভোটদান থেকে বঞ্চিত হবেন। অহেতুক তাড়াহুড়ো করা হচ্ছে বিহার নির্বাচনকে ঘিরে। একারণেই বিরোধীরা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে এসেছে কমিশনের কাছে। আসলে বিহারের গোটা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকেই এরা ধ্বংস করে দিতে চায়। তবে আমরা এত সহজে এসআইআর করতে দেবো না। অবিলম্বে ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে কমিশন। এসআইআর যাতে রূপায়ণ না হয়ে সেই লক্ষ্যে অন্য বিরোধীদের নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাবে কংগ্রেস।
আবার সিপিআই(এমএল)’র সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য পরিষ্কারই বলেছেন, ‘‘এবার বিহারের বিধানসভা ভোটে অন্যতম বিষয় হতে চলেছে এসআইআর, যাকে আমরা ভোটবন্দি বলছি।’’ তিনি জানিয়ে দেন, ‘‘যদি ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করা হয়, তাহলে রাস্তায় নেমে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে যেমন প্রধান বিষয় ছিল সংবিধান রক্ষা, তেমনই এবারে বিহারের বিধনসভা ভোটে প্রধান বিষয় হতে চলেছে এসআইআর।’’ সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘দেশের সংবিধান বিপদগ্রস্ত। এখন নির্বাচন কমিশন গোটা সংবিধানকেই বন্দি করে দিতে চাইছে।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘যখনই মানুষ এসআইআর সম্পর্কে জানতে পারছেন, তখনই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছেন। তাঁদের ধারণা হচ্ছে, তাঁর হয়তো এই এসআইআর’র চক্করে ভোটই দিতে পারবেন না। আমরা জনগণের এই আশঙ্কা, ক্ষোভকে সংগঠিত করে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’’
Comments :0