Editorial News

মোদীর হয়ে ভোট চুরি

সম্পাদকীয় বিভাগ

গত বেশ কয়েক মাস ধরে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেস নেতারা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করে যাচ্ছেন। একটি সাংবিধানিক সংস্থার নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে এমন গুরুতর অভিযোগ মোটেই হেলায় উড়িয়ে দেবার নয়। মনে রাখতে হবে নির্বাচন কমিশন ভোট পরিচালনার জন্য একটি নিছকই মামুলি সরকারি সংস্থা নয়। সরকার তথা শাসক দলের কর্তৃত্বের বাইরে একটি সাংবিধানিক সংস্থা। নির্বাচন কমিশন সংবিধান ছাড়া আর কারও কাছে দায়বদ্ধ নয়। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই কমিশনের প্রধান কাজ সংবিধানকে সুরক্ষিত রাখা। নির্বাচন কমিশন লোকসভা, রাজ্যসভা ও বিধানসভা নির্বাচন পরিচালনা করে। এই নির্বাচনে যারা ভোট দেবেন সেই ভোটার তালিকা তৈরি করে কমিশন। দেশের নাগরিকদের যথাযথ মতদানের ভিত্তিতে এই আইনসভা গঠন না হলে কোনও অবস্থাতেই বলা যাবে না দেশে গণতন্ত্র বিরাজমান। দেশের সংবিধান যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দুনিয়ার সামনে হাজির করতে চাইছে সেটা যথাযথভাবে করতে হলে প্রত্যেক সাংসদ-বিধায়ককে জিততে হবে ১৮ বছরের ওপর দেশের নাগরিকদের প্রকৃত ভোটে। তারজন্য সবার আগে দরকার একটি নির্ভুল ও স্বচ্ছ ভোটার তালিকা। যেখানে একজনের নাম একাধিকবার থাকবে না। একজনও জাল বা ভুয়ো ভোটার থাকবে না। থাকবে না কোনও মৃত ভোটারের নাম। তেমনি এমন কোনও নাগরিক থাকবে না যিনি চাওয়া সত্ত্বেও ভোটার তালিকায় তার নাম নেই। এরপর এমনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে যাতে প্রতিটি ভোটার স্বেচ্ছায়, নির্ভয়ে-নির্বিঘ্নে চাপমুক্ত অবস্থায় নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। আবার ভোট গণনার সময়ও এমন ব্যবস্থা করতে হবে যাতে পূর্ণ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা থাকে। প্রতিটি ভোট নির্ভুলভাবে গুনতে হবে যাতে ভোটদাতাদের রায় ১০০ শতাংশ নির্ভুলভাবে প্রতিফলিত হয়।
এভাবে যদি কোনও দল বা জোট সরকার গঠন করে তবেই বলা যাবে সত্যিকারের গণতন্ত্র বিরাজ করছে বা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু জনগণের বাস্তব অভিজ্ঞতা হলো নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরি হয় না। জাল ভোটার, ভুয়ো ভোটার, মৃত ভোটারে ভরা। আবার প্রকৃত ভোটারদের নাম থাকে না। মানুষ শান্তিতে নিজের ভোট সব সময় দিতে পারেন না। শাসক দল বা প্রভাবশালী দলের দাপটে এবং কমিশনের পক্ষপাতিত্বে ভুয়ো ও জাল ভোট দেদার পড়ে। ফলে নির্বাচনের জয়-পরাজয়ের মাধ্যমে মানুষের প্রকৃত রায় প্রতিফলিত হয় না। যাদের জেতার তারা অনেকে হেরে যাচ্ছে। আবার যারা হারার কথা তারা জিতে যাচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের সক্রিয় সহায়তায় গণতন্ত্রের এই প্রহসনের অভিযোগ তুলে কমিশনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন রাহুল গান্ধী। কর্নাটকের একটি কেন্দ্রে নিবিড় অনুসন্ধান করে তথ্যপ্রমাণ সহ দেখিয়েছেন কমিশন কীভাবে কংগ্রেসকে হারিয়ে বিজেপি-কে জেতানোর ব্যবস্থা করেছে। রা‍‌হুলের অভিযোগ হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, মধ্য প্রদেশেও এভাবেই বিজেপি-কে জেতানো হয়েছে। ভোটে যদি জালিয়াতি না হতো তাহলে গত লোকসভায় বিজেপি’র আসন আরও অন্তত ৫০টি কমে যেত। অর্থাৎ মোদী প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন না। নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থাপনায় ভোট চুরি করেই মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, মানুষের রায়ে হননি।

Comments :0

Login to leave a comment