বন্যার জল নেমে যাওয়ার বেশ কিছুদিন পরেও জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ি ব্লকের কুর্শামারী এলাকায় হঠাৎ করে রাতারাতি স্কুল মাঠে তাঁবু গজিয়ে ওঠায় নতুন চাঞ্চল্য এবং তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ, কিছু পরিবার সরকারি ত্রাণ ও ক্ষতিপূরণের সুবিধা পেতে সম্পূর্ণ অক্ষত ঘরবাড়ি থাকা সত্ত্বেও এই অস্থায়ী ক্যাম্পে এসে ভিড় করেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যা পরিস্থিতির কিছুদিন পর পর্যন্ত কুর্শামারী বিদ্যালয়ের মাঠ ফাঁকা ছিল। কিন্তু যখন সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির (সার্ভে) কাজ শুরু হয়, ঠিক তখনই দশটিরও বেশি তাঁবু রাতারাতি সেখানে তৈরি হয়। অভিযোগ উঠেছে যে, পঞ্চায়েতের তরফে পলিথিন দিয়ে স্থানীয়দের স্কুল মাঠে ক্যাম্প করে থাকতে বলা হয়। এরপরই একাধিক পরিবার তাঁবু ফেলে থাকতে শুরু করে। স্থানীয়দের দাবি, এই পরিবারগুলির সদস্যরা পালা করে তাঁবুতে অবস্থান করছে, যার মূল উদ্দেশ্য হলো সরকারি ও ত্রাণ এবং পুনর্বাসনের সুবিধা আদায় করা।
অভিযোগের ভিত্তিতে সাংবাদিকরা সরেজমিনে কুর্শামারী ক্যাম্পে পৌঁছলে ভিন্ন চিত্র সামনে আসে। ক্যাম্পে বসে থাকা এক মহিলা প্রথমে দাবি করেন, বন্যায় তাঁদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সব জিনিস ভিজে গেছে। কিন্তু সাংবাদিকরা যখন তাঁর বাড়িতে যান, তখন দেখা যায় সম্পূর্ণ বিপরীত ছবি। অক্ষত ঘরবাড়ি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সাংবাদিকদের দেখে যদিও সেই মহিলার সুর পাল্টে যায়। তিনি তখন বলেন, “সবাই ক্যাম্পে আছে, তাই আমরাও আছি।” এই ঘটনা স্পষ্ট করে দেয় যে ত্রাণের লোভে মানুষ মিথ্যা আশ্রয় নিচ্ছে।
এ বিষয়ে কুর্শামারী এলাকার বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্য কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন যে, কিছু মানুষের বাড়িঘর অক্ষত থাকা সত্ত্বেও তাঁরা ত্রাণ পাওয়ার আশায় ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, “বাড়িঘর অক্ষত থাকলেও অনেকে এখানে আছেন, তাঁদের আমি জোর করে পাঠাতে পারি না।” স্থানীয় জনপ্রতিনিধির এমন মন্তব্য এই অনৈতিক কাজে প্রকারান্তরে মদত দেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে। ধূপগুড়ির বিধায়ক এই ঘটনাকে 'অমানবিক' আখ্যা দিয়েছেন। তিনি স্পষ্টতই জানান, “হোগলাপাতা, কুল্লাপাড়া, ধাপারডাঙ্গার মতো বিধ্বংসী পরিস্থিতি কুর্শামারিতে হয়নি। এই এলাকায় শুধু জল ঢুকেছিল। তবু নতুন করে ক্যাম্প বসানো হয়েছে ত্রাণের আশায় এটা অমানবিক।” বিধায়কের বক্তব্য অনুযায়ী, যেখানে প্রয়োজন নেই, সেখানে ত্রাণ-লোভীদের জন্য ক্যাম্প চালানো মানে প্রকৃত দুর্গতদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা। এলাকার সচেতন নাগরিক রামপ্রসাদ মন্ডল এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যেখানে সরকার এবং সাধারণ মানুষ মিলিতভাবে আসল দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, সেখানে মিথ্যা দাবিতে ত্রাণের সুযোগ নেওয়া কি প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি চরম অন্যায় নয়?”
স্বার্থান্বেষী মহলের এমন কার্যকলাপের ফলে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা ত্রাণ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। এই বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ এবং সঠিক তদন্তের দাবি উঠেছে।
North Bengal Floods
বিপর্যয় এলাকায় রাতারাতি তাঁবু, নতুন বিতর্ক ধূপগুড়ি ব্লকের কুর্শামারিতে

×
Comments :0